লিচছবিরাজবংশ “তেনান্ত তাদৃশং রাজন্ লিঙ্গিনে দেহসম্ভবম্। শ্রদ্ধৎস্বানমূভূতোহাৰ্থ ন মনম্প্রঃ, মিচ্ছতি ॥” (ভাগ” ৪।২৯৬৫) ৪ সন্ন্যাসাদি চিহ্নধারী। লিঙ্গিনী (স্ত্রী) লিঙ্গ ইনি, উপ, লতাবিশেষ, হিন্দী পঞ্চগুরিয়া, পৰ্যায়-বছপী, ঈশ্বরী, শিববল্লিক, স্বয়ম্ভু, লিঙ্গসস্থত, লেঙ্গ, চিত্রফলা, চণ্ডালী, লিঙ্গজ, দেবী, চণ্ড, আপস্তম্ভিনী, শিবজা, শিববী। ইহার গুণ-কটু, উষ্ণ, দুর্গন্ধ, রসায়ন, সৰ্ব্বসিদ্ধিকর, ও রসনিয়ামক । ( রাজনি” ) ২ সন্ন্যাসাদি চিহ্নধারিণী। ধৰ্ম্মধবজী স্ত্রী। “লিঙ্গিনীং গুরুপত্নীঞ্চ সগোত্রামথ পৰ্ব্বসু । বৃদ্ধাশ্চ সন্ধায়োশ্চাপি গচ্ছতো জীবিতক্ষয়: ॥” (সুশ্রুত ৪৷২৪) লিঙ্গিবেশ (পুং) অজিন, দণ্ড ও পানপত্র প্রভৃতি সন্ন্যাসাশ্রম চারীর চিহ্ন । লিচ্ছবিরাজবংশ, ভারতের একটা প্রাচীন রাজবংশ। নেপাল হইতে আবিষ্কৃত লিচ্ছবিরাজ জয়দেবের শিলালিপিতে বর্ণিত আছে— “শ্ৰীমন্তুঙ্গরথস্ততে দশরথঃ পুত্ৰৈশ পেয়ৈ সমং রাজ্ঞোহষ্টবিপরান বিহায় পরতঃ শ্ৰীমানভূগ্লিচ্ছবি: " উদ্ধৃত প্রমাণ হইতে জানা যায় যে, স্বপ্রসিদ্ধ স্বৰ্য্যবংশীয় দশরথের অধস্তন অষ্টম পুরুষে লিচ্ছবি জন্ম গ্রহণ করেন, তাহা হইতেই লিচ্ছবিবংশ সমুদ্ভুত । এই লিচ্ছবি শব্দ প্রাচীন সংস্কৃতে নিচ্ছবি, নিচ্ছিবি এবং পালিভাষায় {{চ্ছবি নামে ব্যবহৃত। মনুসংহিতার মতে “ঝল্লো মল্লশ্চ রাজস্থাৎ ব্রাত্যান্নিচ্ছিবিরে চ। মটশ্চ করণশ্চৈব খশো দ্রবিড় এব চ।" ( ১০২২) অর্থাৎ ব্রাত্য ক্ষত্রিয় হইতে সবর্ণ ভাৰ্য্যায় ( দেশভেদে বিভিন্ন নামে ) ঝল্ল, মল্ল, নিচ্ছিবি, নট, করণ ও দ্রবিড় জাতির উদ্ভব । কিন্তু পালিগ্রন্থে উৎপত্তি অন্য প্রকার। পালিগ্রন্থ মতে কাণীরাজের পূজাবলী নামে এক মহিষী ছিলেন,তিনি একটা মাংস পিও প্রসব করেন। সেই মাংসপিণ্ড লইয়া কোন প্রয়োজন নাই ভাবিয়া ধাত্রী আসিয়া গঙ্গার জলে ফেলিয়া গেল। গঙ্গার প্রবল স্রোতে ভাসিতে ভাসিতে সেই মাংসপিণ্ড দ্বিধা বিভক্ত হইল এবং তাহাতে একটী বালক ও একটী বালিকা দেখা দিল । জনৈক ঋষি তাহাদিগকে জল হইতে তুলিয়া আনিয়া লালনপালন করিতে লাগিলেন। উভয় শিশু ছবি বা মূৰ্ত্তিতে কোন রকম ভেদ ছিল না, একারণ তাহারা নিচ্ছবি নাম পাইল । এদেশে সাধারণে ন স্থানে ল উচ্চারণ করে, যেমন ‘নবীন স্থানে ‘লবীন নৌকা স্থানে ‘লৌকা । ঐৰূপ নিচ্ছবি স্থানে পালি লিচ্ছবি হইয়াছে। [ २१७ ] লিচ্ছবিরাজবংশ অতি পূৰ্ব্বকালে কোশল ও মিথিলায় লিচ্ছবি ক্ষত্রিয়গণ অতিশয় প্রবল হইয়া উঠিয়াছিলেন । এই বংশেই জৈনদিগের শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর ও বুদ্ধ শাক্যসিংহ আবির্ভূত হন। মিখিলা অঞ্চলে লিচ্ছবিগণ এক সময় এতই প্রবল হইয়াছিল যে, মিথিলারাজ্যও একসময়ে লিচ্ছবি নামে পরিচিত হইয়াছিল। লিচ্ছবি ংশ বৈদিককৰ্ম্মদ্বেষী । জ্ঞানবীর তীর্থঙ্কর ও বুদ্ধদেবের আবির্ভাব হওয়ায় এবং তাঙ্গাদের সাম্যবাদে জন সাধারণে ব্রহ্মণ্যধর্মের প্রতি আস্থাশূন্ত হইয়া পড়ায়, বৈদিক ও স্মাৰ্ত্ত ব্রাহ্মণগণ প্রায় সকলেই লিচ্ছবি জাতির উপর বিদ্বেষভাব প্রকাশ করিতেন, সেই কারণেই তাহারা পরবর্তীকালে লিচ্ছবিশাসিত মিথিলার অংশ বিজ্জিতরাজ্য' বলিয়া আখ্যাত করিয়াছিলেন । লিচ্ছবিভক্ত পালিগ্রন্থকারগণ যেন তাহার উত্তরে বর্জিতরাজ্যের ভিন্নরূপ নামোৎপত্তি স্বীকার করিয়া গিয়াছেন। পালিগ্রন্থের মতে, যে ঋষি পূজাবলীর পুত্রকন্যাকে আনিয়া লিচ্ছবি নাম দেন, কিছু দিন পরে তিনি প্রতিপালন করা কষ্টজনক মনে করিয়া শিশুদ্ধয়কে একজন গৃহস্থকে অর্পণ করেন। গৃহস্থ তাহদিগকে অতিযত্নে পালন করিতে লাগিল। তাহারা বড় হইয়া অপরাপর বালক বালিকার সহিত খেলা করিত। লিচ্ছবি পিতৃমাতৃহীন বলিয়া, তাহদের সঙ্গিগণ র্তাহদিগকে বজ্জিতব্ব’ অর্থাৎ ফেলানে বলিয়া ডাকিত। উত্তরকালে সেই বিজ্জিতব্বে'র বংশধরগণ ৩০০ যোজন বিস্তৃত একট পরাক্রমশালী রাজ্য স্থাপন করিল। সেই রাজ্যই ‘বজ্জি' (অর্থাৎ বর্জিত ) আখ্যা পাইয়াছিল। তাহাই মিথিলারাজ্যের অধিকাংশ। লিচ্ছবিদিগের এক শাখা বৈশালীতে, এক শাখা নেপালপ্রান্তে মিথিলায় এবং এক শাখা পুষ্পপুর বা পাটলিপুত্র অঞ্চলে বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছিল। বৈশালী শাখায় মহাবীর স্বামী, ও নেপালপ্রান্তে শাক্যশাখায় বুদ্ধদেব আবিভূত হইয়াছিলেন। মনুসংহিতায় এই জাতি ব্রাত্য অর্থাৎ সংস্কারহীন ক্ষত্রিয় বলিয়া চিহ্নিত হইলেও সকল প্রাচীন জৈন ও বৌদ্ধগ্রন্থ হইতে র্তাহাদের • উপনয়ন সংস্কারের পরিচয় পাওয়া যায়। আজও শত শত প্রাচীন বুদ্ধমূৰ্ত্তি যজ্ঞোপবীত চিহ্নিত রহিয়াছে। পরবৰ্ত্তিকালেও নেপালের প্রবল পরাক্রাস্তু লিচ্ছবি রাজগণও সকলে বিশুদ্ধ ক্ষত্রিয় বলিয়াই পরিচিত হইয়াছেন । এতদ্বারা মনে হয় যে, মমুসংহিতারচনাকালে লিচ্ছবিগণ ব্রাত্য ক্ষত্রিয় বলিয়া নির্দিষ্ট হইলেও তৎপরবত্তিকালে সংস্কারাদি দ্বারা তাহারা বিশুদ্ধ ক্ষত্রিয় হইয়াছিলেন। নচেৎ অশ্বমেধযজ্ঞকারী পরম ব্রাহ্মণভক্ত গুপ্তসম্রাটু সমুদ্রগুপ্ত আপনাকে লিচ্ছবিরাজকন্যার গর্ভজাত বলিয়া গৌরবান্বিত বোধ করিবেন কেন ? লিচ্ছবিগণ সাধারণতন্ত্র প্রিয় ছিলেন। কোন কোন বৌদ্ধ
পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২৭৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।