লিচছবিরাজবংশ যে, ভগবান যখন আমাদের অধিকার মধ্যে দেহ বিসর্জন করিয়াছেন, তখন আমরাই দেহাবশেষ পাইবার একমাত্র অধিকারী । এদিকে বৈশালীর লিছবিরাজগণ, মগধপতি অজাতশত্ৰ, অলকাপুরের বালেয় ক্ষত্ৰিয়গণ এবং উদ্বুদ্বীপের ব্রাহ্মণগণ দেহাবশেষ পাইবার জন্য মল্লরাজদিগের বিরুদ্ধে উপস্থিত। অবশেষে দ্রোণ নামক এক বৌদ্ধ ব্রাহ্মণের পরামশে ভগবানের দেহাবশেষ ৮ ভাগে বিভক্ত হইল । লিচ্ছবিগণ তাহার এক ভাগ পাইলেন । তাহারা সেই অপার্থিব পদার্থ মহাসমারোহে বৈশালীতে আনিয় তাহার উপর এত বৃহৎ স্ত,প নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিলেন । • অথকথা নামক পালি বৌদ্ধগ্রন্থে লিখিত আছে, যতদিন ভগবান ধরাধামে ছিলেন, ততদিন অজাতশত্র লিচ্ছবিগণের কিছুই করিতে পারেন নাই । মগধরাজমন্ত্রী বিশ্বাকর বুদ্ধের নিকট লিচ্ছবিদিগের সাধারণতন্ত্র অবগত হইয়া তাহাদিগের মধ্যে ভেদ ঘটাইবার সুযোগ খুজিতেছিলেন। পরিনিৰ্ব্বাণের ৩ বর্ষ পরে বহুকাল চেষ্টার পর তিনি কৃতকার্য্য হইলেন। তাহার কূটনীতিগুণে লিচ্ছবিদিগের মধ্যে আত্মকলহ উপস্থিত হইলে অজাতশত্র লিচ্ছবিরাজ্যে গিয়া বৈশালীনগর ধ্বংস করিলেন এবং তিন শত লিচ্ছবিকে সপরিবারে বন্দী করিয়া রাজগৃহে ফিরিলেন । অজাতশত্রর নির্যাতনে লিচ্ছবিরাজগণ জন্মভূমি পরিত্যাগ করিয়া কেহ নেপালে, কেহ তিব্বতে, কেহ বা লাদকে আশ্রয় লইলেন। পরে সেই সেই স্থানে এক একটা লিচ্ছবিরাজবংশের প্রতিষ্ঠ হইল । বৌদ্ধগ্রন্থের মতে মগধপতি নাগাশোকের ঔরসে লিচ্ছবিকণ্ঠার গর্ভে সুমুনাগ ( পুরাণোক্ত শিশুনাগ ) রাজার জন্ম । তিনি মাতামহকুলের কিছু পক্ষপাতী ছিলেন। তাহারই যন্ত্রে বিখ্যাত বৈশালী নগরী পুনৰ্নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। তৎপুত্ৰ কালাশোকের সময়েই বৈশালী নগরে দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসমিতি আয়ত হয় । যাহা হউক, মগধসমাদৃগণেব প্ৰতাপে আর লিচ্ছবিরাজগণ একতাসুত্রে সম্মিলিত হইতে পারলেন না। তন্মধ্যে য়িনি একটু প্রধান হইয়া উঠিতেন, মগধপতি তাহার সহিত বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হইয়া তাহকে আপনার করিয়া লইতেন ;-বলিতে কি এই রাজনীতি মগধপতিগণ পুরুষপরম্পরায় রক্ষা করিয়া আসিয়াছেন । বরাবর মগধরাজ্যের সহিত সম্বন্ধ স্থত্রে লিচ্ছবিরাজগণ পাটলিপুত্রের সভায় বিশেষ সন্মানিত ছিলেন;–এই কারণেই বোধ হয় পাটলিপুত্রে অধিষ্ঠিত গুপ্তসম্রাট্র সমুদ্রগুপ্ত লিচ্ছবিরাজকন্যার গর্ভে জন্ম বলিয় আপনাকে গৌরবান্বিত মনে করিয়াই নিজ মুদ্রায় “লিচ্ছবয়ঃ” ইত্যাদি স্মৃতি রাখিয়া গিয়াছেন। [ २१ध्र' ] লিচছবিরাজবংশ নেপালে লিচ্ছবি-রাজবংশ । পুৰ্ব্বে বলিয়াছি, মগধপতি অজাতশত্রুর নির্য্যাতনে লিচ্ছবিগণ নেপালেও পলাইয়া গিয়াছিলেন। নেপালে গিয়াও তাছার আধিপত্য বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই স্থান হইতে লিচ্ছবিরাজগণের বহুতর শিলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ পশুপতিনাথের মন্দিরের দ্বারদেশে উৎকীর্ণ ২য় জয়দেব বা পরচক্রকামের শিলালিপি হইতে জানা যায় যে, সুপ্রসিদ্ধ রঘুবংশে এখানকার লিচ্ছবিরাজগণের জন্ম । লিচ্ছবির বংশে সুপুষ্প নামে এক রাজা পুষ্পপুরে ( পরে পাটলিপুত্র ) থাকিতেন, তিনিই নেপালে আগমন করেন । মহাপরিনিৰ্ব্বাণস্থত্রেও লিখিত আছে, ভগবান বুদ্ধদেব যখন পাটলিপুত্রের নিকট দিয়া যান, তৎকালে মগধরাজমন্ত্রী বিশ্বকের লিচ্ছবিদিগকে উৎপীড়ন করিবার জন্য এখানে দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করাইতেছিলেন । এই দুর্গ নিৰ্ম্মাণের পর যে লিচ্ছবিপতি সুপুষ্প বিতাড়িত হইয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই । উক্ত জয়দেবের শিলালিপিতে লিখিত আছে যে, সুপুষ্পের পর ২৩জন রাজা ক্রমান্বয়ে রাজত্ব করিয়া গেলে তৎপরে সুপ্রসিদ্ধ জয়দেব নামে এক নৃপতি আবিভূতি হইলেন। ইনিই নেপালের লিচ্ছবি ইতিহাসে প্রথম জয়দেব নামে খ্যাত । জয়দেবের পর একাদশ জন নৃপতি রাজসিংহাসন অলস্কৃত করেন, তৎপরে বৃঘনামে এক পরাক্রান্ত নৃপতি অভিষিক্ত হইয়াছিলেন । তিনি বৌদ্ধধৰ্ম্মামুরাগী ছিলেন । তাহার বংশধর মানদেবের শিলালিপিতে তিনি অদ্বিতীয় বীর ও সত্যপ্রতিজ্ঞ বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়াছেন। তৎপুত্র শঙ্করদেব সংগ্রামে অজেয়, অতি তেজস্ব, অনুগতপ্রিয় ও সিংহসম বীর্যবান ছিলেন। তৎপুত্র রাজা ধৰ্ম্মদেব পরম ধাৰ্ম্মিক, অতি নম্রপ্রকৃতি ও পূৰ্ব্বপুরুষাচরিত ধম্মানুরাগী ছিলেন। ধৰ্ম্মদেবের ঔরসে মহিষী রাজ্যবতীর গর্ভে নিষ্কলঙ্ক শারদীয় শশাঙ্কসদৃশ সুন্দর রাজা মানদেব জন্ম গ্রহণ করেন। নেপালুর চলুনারায়ণের মন্দিরদ্ধারে এই মানদেবের ৩৮৬ সংবতে উৎকীর্ণ একখানি শিলালিপি আছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্লিট সাহেব এই অঙ্ক গুপ্তসংবংজ্ঞাপক বলিয়া স্থির করিয়াছেন । কিন্তু মানদেবের লেখমালা আলোচনা করিলে উহা কোন মতেই এত আধুনিক বলিয়া মনে করিতে পারি না। তিনি আপন গ্রন্থে সমুদ্রগুপ্ত প্রভৃতি প্রথম গুপ্তসম্রাট্রদিগের যে সকল শিলালিপি খৃষ্টীয় ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীর লিপি বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন,-সেই সকল আদিগুপ্তলিপির বর্ণবিদ্যাসের সহিত উক্ত মানদেবের
- Fleet's Corpus Inscriptionum Indicarum, Vol.p. 18%