------- حجم مم লেপছা পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি যে, অবিবাহিত কস্তাগণ পিতার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার দ্বারা প্রতিপালিত হইয়া থাকে। ঐ কন্যাদিগের বিবাহ না হওয়া পৰ্য্যস্ত, ভ্রাতৃবর্গ অথবা বিবাহিত কস্তারা পিতৃসম্পত্তির উত্তরাধিকার পাইবে না । পুত্রাদি না থাকিলে বিবাহিত কন্যাই পিতৃসম্পত্তির অধিকারিণী হইবে, কিন্তু ঐ সম্পক্টিলাভের পর পিত্রালয়ে বাস করাই ইহাদের জাতীয় বিধি। সাধারণতঃ এই নিয়মে উত্তরাধিকারিত্ব নির্দিষ্ট হইলেও, অনেক সময়ে পঞ্চায়তের অভিপ্রায়ানুসারে কার্য্য পরিচালিত হইয়া থাকে। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ লেপছাই বৌদ্ধধৰ্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে, তথাপি ইহাদের মধ্যে সামানী পখাচারের তাভাব নাই। ইহারা পৰ্ব্বতাংশ বিশেষ ও তথাকার স্রোতস্বিনীদিগকে রোগাদি অমঙ্গলের উৎপাদক জানিয়া পূজা করে। তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা পৰ্ব্বতকে ঝড়, তুষার, বৃষ্টি ও বরফ পাতের একমাত্র অধিষ্ঠাত্রী দেবতা এবং শাক্য বুদ্ধের শিক্ষাগুরু বলিয়া ও উপাসনা করিয়া থাকে। ঐ পৰ্ব্বতগাত্রস্থ তুষাররাশি সুৰ্য্যোগুপে বিগলিত হইয়া সময় সময় ইহাদের বাসভূমি ও শস্তক্ষেত্রাদি পপিপ্লাবিত করে। এতদ্ভিন্ন এসেগেঙপু, পালদেন, হোমো, লাপেন রিন পোছে, গেঙপু-মালেঙ এগগৃপু ও বসুঙ্গম প্রভৃতির উপাসনকালে ইহারা মাংস, মহুয়ামদ, ফল, তধুল, পুষ্প ও ধূপধুন। প্রভৃতি গন্ধদ্রব্য দিয়া পূজা করিয়া থাকে। ইহবা চিরেঞ্জী বা লছেন-ওঁম-ছুপ-ছিমুকে মহাদেব বলিয়া স্বীকার করে । তাহার পত্নীর নাম উমাদেবী। অধিক সম্ভব সিকিমে বৌদ্ধধৰ্ম্মবিস্তারের পূৰ্ব্বে ইহার এই শঙ্করমূৰ্ত্তি ও উমাদেবীর উপাসনা করিত । [ লামা দেখ। ] বৌদ্ধধৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় ক্রিয়াকলাপে তিববতীয় লামাগণই ইহাদের যাজকতা করে। ইহাদের মধ্যে কেহই লামাধৰ্ম্ম গ্রহণ করে নাই। অনেকে ভৌতিক বিদ্যা অভ্যাস করিয়া “বিজুয়া” ( ওঝা ) হইয়াছে। ভূতপ্রেতাদি অপদেবতাগণের প্রকোপ উপশমনার্থ ইহার নানা ভৌতিক ক্রিয়া কলাপের অবতারণা করিয়া থাকে। ইহার প্রধানতঃ শবদেহ পূৰ্ব্বমুখী রাখিয়া কবর মধ্যে গোর দেয়। সমাহিত করিবার পূৰ্ব্বে তিন দিন ঐ মৃতদেহ গৃহে বসাইয়া রাখে এবং তাহার সম্মুণে নিয়ম মত ভোজ্যাদি স্থাপন করে। গৰ্ত্তমধ্যে মৃতদেহ স্থাপনের পূৰ্ব্বে উহার চতুর্দিক পাথর দিয়া ঘেরা হয়, পরে তন্মধ্যে শবরক্ষা করিয়া চাপ দেওয়া হইয়া থাকে এবং তাহার উপর একটা গোলাকার পাথরের স্তম্ভ স্থাপন করিয়া তদুপরি নিশান দেওয়া হয়। রোঙ্গ-লেপছাগণ মৃত্যুর একমাস পরে ওঝা ডাকাইয়া প্রেতের [ ৩০২ ] লেপছা শাস্তি ও মঙ্গলকামনায় একদিন শ্রাদ্ধ করে। ঐ সময়ে একটা বন্ত গোরু বা ছাগ মারা হয় এবং সকলে মউয়া পান করিয়া নেশায় বিভোর হইয়া থাকে। ইহারা ঐরূপে বাৎসরিক শ্ৰাদ্ধও সম্পন্ন করে। নবশস্ত ছেদনের সময় প্রত্যেক গৃহকর্তাই পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশে নুতন তণ্ডুল, মউয়া ও নানা প্রকার খাদ্যদ্রব্য সজ্জিত করিয়া উৎসর্গ করিয়া থাকে। উচ্চশ্রেণীর খাম্বা লেপছাগণের মধ্যে শবদেহ দাহ করিবার প্রথা আছে। দেহ ভক্ষ্মীভূত হইবার পর, শবের দগ্ধ অস্থি সকল চূৰ্ণ করিয়া নিকটবৰ্ত্তা কোন নদী বা জোয়ারের জলে ভাসাইয়া দেওয়া হয়। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে অবস্থা বিশেষে শ্রাদ্ধ প্রক্রিয়ারও তারতম্য আছে । ব্রহ্মচারিণী রমণীদিগের শ্রাদ্ধ প্রথাও স্বতন্ত্র । সিকিম রাজ্যের ব্রহ্মচারিণী এক রমণীর শ্রাদ্ধে যেরূপ প্রক্রিয়া অবলম্বিত হইয়াছিল, তাহা নিম্নে বিবৃত হইল ;– শ্ৰাদ্ধকালে মৃতার একটা প্রতিকৃতি নিৰ্ম্মাণ করিয়া তাহার সম্মুখে একখানি মেজের উপর নানা খাদ্য সামগ্ৰী, অপর এক থানিতে তাহার ব্যবহার্য্য দ্রব্যাদি এবং তৃতীয় টেবিলে ১০৮ট পিত্তলের প্রদীপ সারি দিয়া সাজাইয়া রাখা হইয়াছিল। উষ্ণীযধাবী ও বক্তাম্বরপরিহিত অনেক গুলি লামা ঐ সময়ে ক একদিন ধৰ্ম্মমন্দিরে সমস্বরে স্তোত্রাদি পাঠ করিয়াছিলেন । তাঁর পর পেমি ওঙ্গছি সত্তঘারামে আনিয়া ঐ প্রতিকৃতিকে বেদীতে বসান হয় এবং তিন দিন প্রেতের মঙ্গল কামনায় উপরোক্তরূপ স্তোত্রাদি পাঠ হইয়া থাকে। শেষ দিনে মৃতার আত্মীয় ও বন্ধ বান্ধবগণ বস্ত্র, অর্থ ও খাদ্যাদি উপহার যাহা পাঠাইল, তাহ ঐ প্রতিকৃতির সম্মুখে সাজাইয়া দেওয়া হয়। ঐ সময়ে মঠের প্রধান লানা সেই মূৰ্ত্তির সম্মুখের আসনে উপবেশন করিয়া তদুদেশে প্রদত্ত দ্রব্যাদি ও দাতার নাম জ্ঞাপন করিয়া থাকে। সন্ধ্যার সময় ব্রহ্মচারিণীর সমক্ষে চা ও মউয়া পানপত্রিপূর্ণ করিয়া দেয় এবং লামার আসিয়া ঐ সময়েই মূৰ্ত্তির সমক্ষে চা ও মউয়া পান করে। তার পর সেই মৃত ব্যক্তির বা রমণীর পবিচিত, ও আত্মীয়ের সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া প্রেতাত্মার উদ্দেশুে সেই মূৰ্ত্তিকে সাষ্টাঙ্গে প্ৰণিপাত করিয়া থাকে এবং তাহার বস্ত্রাঞ্চল চুম্বন করিয়া তাহাকে চিরদিনের মত বিদায় দিয়া আইসে। ঐ সময়ে সমবেত লামাগণ প্রেতাত্মার বিদায়কামনায় সৰ্ব্বোচ্চস্বরে স্তুতি পাঠ করিতে আরম্ভ করে এবং প্রধান লামা স্বীয় আসন হইতে গাত্ৰোখান করিয়া একটা মেজের নিকট আসিয়া কএকটা গুপ্ত প্রক্রিয় সাধন করেন । রাত্রি ৯টা বাজিলে স্তুতিপাঠ সমাপ্ত হয়। তখন প্রধান লামা আপনার আসন সমক্ষে দণ্ডায়মান হইয়া একটা সুদীর্ঘ বক্তৃতা করিয়া থাকেন। তাহার
পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৩০২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।