পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
[৩৮৬]
বঙ্ক্রি

লইলেন। বৃটীশগবর্মেণ্ট তাঁহার কার্য্যদক্ষতায় সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে রায় বাহাদুর ও সি, আই, ই, উপাধি প্রদান করেন। অবসরের পর তিনি অধিকাংশ সময় সাহিত্যসেবা, ধর্ম্মচর্চ্চা, ও জ্যোতিঃশাস্ত্রালোচনায় কালাতিপাত করিতেন।

 তাঁহার পুত্র হয় নাই; দুইটী মাত্র কন্যা জন্মে। অবসরগ্রহণের পর তাঁহার শরীরও অপটু হইয়া পড়ে। অবশেষে ১৩০০ সালের ২৬এ চৈত্র অপরাহ্ণ ৩টা ২৩ মিনিটের সময় বহুমূত্রজনিত জ্বর ও মূত্রনালীর বিস্ফোটক রোগে বঙ্গের সাহিত্যরথী মহামতি বঙ্কিমচন্দ্র দেহ বিসর্জ্জন করিলেন। তাঁহার মৃত্যুতে বঙ্গসাহিত্যের যে ক্ষতি হইল, তাহা আর পূরণ হইবার নহে।

 তৎকালে বাঙ্গালার অধিকাংশ সাময়িক ও সংবাদ-পত্রসম্পাদক দুঃখ প্রকাশ করিয়া লিখিয়াছিলেন যে, বঙ্কিম বাবুর মৃত্যুতে বাঙ্গালার সাহিত্যরাজ্য রাজহীন হইল। বাঙ্গালীর হৃদয়-গঠনে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভা বিশেষ কার্য্যকারী হইয়াছিল। জাতীয় জীবনের সম্যক্ পরিণতির কালে অপর সুসভ্য জাতির মধ্যেও কদাচিৎ এরূপ মহীয়সী প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। বঙ্কিম বাবু সর্ব্বতোমুখী প্রতিভার অসাধারণ দৃষ্টান্ত। ইতিহাস, গণিত, সাহিত্য সকল বিষয়েই তিনি সর্ব্ব শ্রেষ্ঠ ছিলেন, তাঁহার প্রকৃতির প্রধান লক্ষণ স্বাতন্ত্র্য, বাঙ্গালায় এরূপ জীবনের নিতান্ত অসদ্ভাব। কি স্বদেশী, কি বিদেশী সকলের কাছেই তিনি সমান স্বাধীন চিত্তের পরিচয় দিয়া গিয়াছেন। স্বাতন্ত্র্য বা জাতীয়তা না হারাইয়া বাঙ্গালী কিরূপে ইংরাজী শিক্ষার উপকারিতা লাভ করিতে পারে, বঙ্কিমচন্দ্র তাহার আদর্শ। বাঙ্গালীর নিতান্ত দুর্ভাগ্য যে তাঁহার ধর্ম্ম ও সামাজিক মত সর্ব্বাঙ্গীন পূর্ণতা লাভ করিবার পূর্ব্বেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করিলেন। তাঁহার ধর্ম্মতত্ত্ব তাঁহার ধর্ম্মজীবনের অনুক্রমণিকা মাত্র! তাঁহার ধর্ম্মমত গীতার অনুরূপ। নিষ্কাম ভক্তি বা সকল বৃত্তির অফলাকাঙ্ক্ষী ঈশ্বরমুখিতা তাঁহার প্রচারিত ধর্ম্মানুশীলনের মুখ্য সাধন। বঙ্গের ভাবী আশায় উৎফুল্ল হইয়া তিনি যে “বন্দে মাতরম্” গাইয়াছিলেন, তাঁহার তিরোভাবের দ্বাদশবর্ষ পরে আজ তাহা ভারতবাসীর জাতীয় সঙ্গীতরূপে কোটি কোটি কণ্ঠে নিনাদিত হইতেছে।

 বঙ্গমাতার যে মূর্ত্তি বঙ্কিমের মনশ্চক্ষে প্রভাসিত ছিল, তাহার আভাষ ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’ “আমার দুর্গোৎসব” প্রবন্ধে সূচিত হইয়াছে; বঙ্কিমবাবু বাঙ্গালা দেশকে দীন হীন বলিয়া জানিতেন না,—তাঁহার “বন্দে মাতরম্” গানে জাতীয় হীনতাসূচক কাতরোক্তি নাই, তাহাতে সুদূর অতীত গৌরবের স্মৃতিতে শক্তিহীন নিশ্চেষ্ট স্পর্দ্ধা নাই—তাহাতে বঙ্গমাতাকে তিনি ভগবতীর
ন্যায় মহীয়সী শক্তিশালিনী স্বরূপে কল্পনা করিয়াছেন,—এই হিসাবে “বন্দে মাতরম্” গান জাতীয় সঙ্গীতগুলির মধ্যে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাইবার যোগ্য। বাঙ্গালী জাতির অভ্যন্তরে যে মহাশক্তি লুক্কায়িত, ‘বন্দে মাতরম্’ গানে বঙ্কিমবাবুই তাহা আবিষ্কার করেন, সেই জাতীয় শক্তি এখন আমাদের চক্ষে স্ফুরমাণ হইয়া উঠিয়াছে।

 বঙ্কিমবাবু নিজে তাঁহার একখানি “আত্মচরিত” লিখিয়া গিয়াছেন, তাঁহার মৃত্যুর দ্বাদশ বৎসরের মধ্যে যেন তাঁহার জীবনী প্রকাশিত না হয়,—তাঁহার আত্মীয় স্বজন এবং বাঙ্গালীমাত্রের নিকট তিনি এই প্রার্থনা করিয়া গিয়াছিলেন, তাঁহার স্বজীবন-কাহিনী অবলম্বন করিয়া তদীয় মৃত্যুর দ্বাদশ বৎসর পরে যেন একখানি বিস্তৃত জীবনী প্রকাশিত হয়, তাঁহার সুযোগ্য দৌহিত্রগণের প্রতি এই অনুজ্ঞা আছে। এই বৎসর সেই দ্বাদশ বর্ষ পূর্ণ হইল, এই বৎসর “বন্দে মাতরম্” গান নূতনভাবে ভারতবর্ষের কোটিকণ্ঠ হইতে নববল সঞ্চয় করিয়া বঙ্কিমবাবুর জাতীয় অনুরাগকে সমুজ্জ্বল করিয়া দেখাইতেছে। এই বৎসরের পূর্ব্বে জীবনচরিত রচিত হইলে তাঁহার একটা প্রধান কীর্ত্তির কথা অকথিত থাকিত। তিনি কি দিব্য চক্ষুতে তাহা দেখিতে পাইয়া সেই দ্বাদশবর্ষের গণ্ডী প্রদান করিয়াছিলেন। যতদিন বঙ্কিম বাবুর আত্ম-জীবনী প্রকাশিত না হইবে, ততদিন সেই মহাপুরুষের প্রকৃত জীবনীর সমালোচনার সুবিধা হইবে না। বঙ্গবাসী বঙ্কিমচন্দ্রের আত্মকাহিনীসমন্বিত বিস্তৃত জীবনীর প্রতীক্ষা করিতেছেন।

বঙ্কিমদাস কবিরাজ, ‘বৈষম্যোদ্ধরণী’ নামে কিরাতার্জ্জুনীয়কাব্যের টীকারচয়িতা।

বঙ্কিল (পুং) বঙ্কতি ইতি বঙ্ক-ইলচ্। কণ্টক। (ত্রিকা°)

বঙ্কু (ত্রি) ১ বক্রগামী। ২ বক্রগমনশীল।

“ইন্দ্রো বঙ্কু বঙ্কুতরাদি তিষ্ঠতি” (ঋক্ ১ǀ৫১ǀ১১)

 উক্ত ঋক্‌সংহিতার অন্য একস্থলে সায়ণাচার্য্য বঙ্কুশব্দে ‘বনগামিন্’ অর্থ করিয়াছেন। যথা—

“যথা বণিগ্বঙ্কুরাপা পুরীষম্‌” (ঋক্ ৫ǀ৪৫ǀ৬)

বঙ্কু, প্রাচীন নদীভেদ। সম্ভবতঃ বঙ্ক্ষু নদী। (ভারত সভাপর্ব্ব)

[ বংক্ষু দেখ।]

বঙ্ক্য (ত্রি) বঞ্চ-ণ্যৎ। (বঞ্চের্গতৌ। পা ৭ǀ৩ǀ৬৩) ইতি অগত্যর্থে কুত্বম্ চ। বক্র। যথা বঙ্ক্যং কাষ্ঠম্। (মুগ্ধবোধ-ব্যাকরণ।)।

বঙ্ক্রি (পুং, ক্লী) বঙ্কতে ইতি। বকি কৌটিল্যে (বঙ্ক্র্যাদয়শ্চ। উণ্ ৪ǀ৬৬) ইতি ক্রিন্ প্রত্যয়েন নিপাত্যতে। ১ বাদ্যবিশেষ। (উণাদিকোষ) ২ গৃহদারু। ৩ পার্শ্বাস্থি। পর্শুক, পাঁজ্‌রা।