বর্ণলিপি মধ্যে ১৯৫৮•ট ঋক্ এবং প্রায় ১৫৩৮২৬টা শব্দ পাওয়া যায়। যখন লিপি অজ্ঞাত ছিল, তখন এতগুলি ঋক্ বিশুদ্ধ ও সংপূর্ণ ছন্দোবন্ধে কিরূপে রচিত ও এত দীর্ঘকাল রক্ষিত হইল ? তাহ কেবল স্থতি স্বারা মুখে মুখে চলিয়া আসিয়াছে। মোক্ষমূলর বলেন, একথা শুনিতে বিস্ময়জনক বটে, কিন্তু বিস্ময়ের কোন কারণ নাই। ভারতীয় ছাত্রগণের কিরূপ অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও পাঠ্যাবস্থায় কিরূপ শিক্ষাপদ্ধতি ছিল, তাহা আলোচনা করিলে আর সন্দেহ থাকিবে না। তিনি নিজ উক্তির সমর্থনের জন্ত খৃষ্টীয় ৭ম শতাদের শেষে লিখিত চীন-পরিব্রাজক ইৎসিং বর্ণিত শিশুশিক্ষার পদ্ধতি উদ্ধৃত করিয়াছেন। ইংসিং ভারতীয় বালকদিগের এইরূপ শিক্ষার পরিচয় দিয়াছেন—"প্রথমে শিশু ৪৯টা অক্ষর শিখে, তৎপরে ৬ষ্ঠ বর্ষে ছয়মাসের মধ্যে ১ • • • • যুক্তাক্ষর বা আর্কফলা অভ্যাস করে। ইহাতে তাহাদের দ্বাত্রিংশং অক্ষরাত্মক ( বা অনুষ্টপ ছন্দের ) ৩• • শ্লোক অভ্যাস করা হয়। পরে আট বৎসরে তাহারা পাণিনিব্যাকরণ শিক্ষা করে ; ইহাতে ১ • • • সুর আছে, শিখিতে ৮ মাস সময় লাগে । তৎপরে ধাতুপাঠ ও ৩ট খিল শিখিতে আরম্ভ করে। দশ বর্ষ বয়স হইতে আরম্ভ করিয়া ত্রয়োদশ বর্ষ মধ্যে খিল পাঠ শেষ হয়। পঞ্চদশ বর্ষ বয়ঃক্রমকালে পাণিনির স্বত্রভাষ্য শিখিতে আরম্ভ কৰে, e বর্ষ মধ্যে পাঠ সমাধা হয়। সুত্রভাষা পাঠকালে একদও আলস্ত করিলে চলিবে না । দিবারাত্র মুখস্থ করিতে হইবে। [ to 8 J এই স্বত্রভাষা সম্পূর্ণ আয়ত্ত কবিতে না পারিলে অপর শাস্ত্রে . সম্যক্ অধিকার জন্মে না।’ এই প্রকার শিক্ষারীতির উল্লেখ করিয়া ইংসিং লিথিয়াছেন যে, "ঐক্কপ ব্যক্তি একবার মাত্র পাঠ । করিয়া দুইখানি বৃহৎ গ্রন্থ কণ্ঠস্থ করিতে পারে। তৎপরে তিনি । স্বাক্ষণদিগকে লক্ষ্য কবিয়া লিথিয়াছেন, তাহারা তাহদের চারি | বেদকে অতিশয় ভক্তিশ্রদ্ধা করেন, ঐ চারি বেদে প্রায় লক্ষ শ্লোক আছে। বেদচতুষ্টয় কাগজে লিখিত হয় না, মুখে মুখেই চলিয়া | আসিতেছে। প্রত্যেক বংশেই এমন কতকগুলি ব্রাহ্মণ আছেন । যে, সেই লক্ষ বেদমন্ত্র আবৃত্তি করিতে পারেন । আমি স্বচক্ষে এরূপ লোক দেখিয়াছি। ইংসিংএর বিবরণী প্রমাণ স্বরূপ উদ্ধৃত করিয়া অধ্যাপক মোক্ষমূলর বলিতে চান যে, সেই প্রাচীন বৈদিকযুগে শিক্ষারীতি অতি স্বপ্রণালীবদ্ধ থাকিলেও তৎকালে পুস্তক, গ্রন্থ, চৰ্ম্ম, পত্র, কলম, লিপি বা মসির কোন প্রকার উল্লেখ পাওয়া যায় না। ভারতবাসী এই সকলের নাম পৰ্য্যন্ত অবগত ছিলেন না । তাহাদের বিশাল সাহিত্য ছিল বটে, সে সমুদায়ই অতিয়া সহকারে মুখে মুখে রক্ষিত হইয়া আসিতেছে।
- Max Müller, Indie, what can it teach us, p. 207-216.
ৰণলিপি তবে কোন সময়ে ভারতে বর্ণলিপির উৎপত্তি হইল ? ইহার উত্তরে মোক্ষমূলর বলেন যে, এ পর্য্যন্ত ভারতে যত লিপি আৰিষ্কৃত হইয়াছে, তন্মধ্যে অশোকলিপি সৰ্ব্বপ্রাচীন। দুই প্রকার অশোকলিপি পাওয়া গিয়াছে-এক প্রকার লিপি দক্ষিণ হইতে বামদিকে লিখিত, এই লিপি স্পষ্টতঃ অরমীয় (Aramæan ) T| সেমিটিক্ বর্ণলিপি হইতে উৎপন্ন। অপর প্রকার লিপি বামদিক্ হইতে দক্ষিণদিকে লেখা। এই লিপি ভারতীয় ভাষার প্রয়োজন অনুসারে যথানিয়মে সেমিটিক্ বর্ণলিপি হইতেই পরিপুষ্ট হইয়াছে। ভারতীয় নানা প্রাদেশিক লিপির এবং বৌদ্ধাচাৰ্য্যগণের হস্তে ভারতের বাহিরে বহু দূরদেশে যে সকল লিপি ছড়াইয়া পড়িয়াছে, সে সমুদায়ের মূলই উক্ত দ্বিতীয় প্রকার বর্ণলিপি। তবে এটাও অসম্ভব নহে যে, অতি প্রাচীন কালে সেমিটক লিপি হইতে সাক্ষাৎ ভাবে তামিল বর্ণলিপি গৃহীত হইয়াছিল। এইরূপে অধ্যাপক মোক্ষমূলর যে যুক্তি দ্বারা ও অক্ষর- বিষ্ঠাস দেখিয়া ভারতীয় বর্ণলিপিকে বিদেশীয় লিপিজাত বলিতে চান, তাহ নূতন কথা নহে। তাহার বহু পূৰ্ব্বে ১৮০৬ খৃষ্টাব্দে সন্ত্র উইলিয়ম্ জোন্স ভারতীয় লিপির সেমিটিক উদ্ভবের আভাস দিয়া যান। তৎপরে কপ, লেপসিয়াস, বেবের, বেন্ধী, হুইটুনি, পট, বেস্টারগার্ড, নর্স, লেনরমণ্ট প্রভৃতি পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণও অশোকলিপির আকারের উপর নির্ভর করিয়া ভারতীয় লিপির সেমিটক-মূলতা ঘোষণা করিয়াছেন । ইহাদের মধ্যে অধ্যাপক বেবের সাহেবের বিশেষ মত এই যে, পুরাতন ফিনিক বর্ণলিপি হইতে এবং ডিকের মতে প্রাচীন দক্ষিণ সেমিটিক দিয়া অভ্যাসীরীয় ষ্টীললিপি হইতে বাহির হইয়াছে। টেলর প্রভৃতি কোন কোন পাশ্চাত্য পণ্ডিতের মতে ভারতীয় লিপি দক্ষিণ আরবের কোন প্রকার সেবীয় (Sabian) লিপি হইতে উদ্ভূত, কিন্তু এ পর্য্যন্ত তাদৃশ প্রাচীন কোন সেবীয় লিপি আবিষ্কৃত না হওয়ায় অবশেষে তিনি এরূপও প্রকাশ করিয়াছেন যে, ভারতীয় লিপির আদি নিদর্শন হয় ত ওমান, হাড়াম, অরম, নেবা অথবা অন্ত কোন অজ্ঞাত রাজ্য হইতে আবিষ্কৃত হইতে পারে। এদিকে অধ্যাপক ডেসন, টমাস, কানিংহাম্ প্রভৃতি পুরাতত্ত্ববিদগণের মতে ভারত স্বীয় বর্ণমালার জন্ত কোন দেশের নিকট ঋণী নহেন। জেসন স্পষ্টাক্ষরে লিখিয়াছেন,-ভারতবাসী আপনারাই যে অক্ষরের উদ্ভাবন করিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ করিবার কোন কারণ নাই। ভাষাতত্ত্বের কুঞ্জাতিসূক্ষ্মবিষয়ে হিন্দুগণ সভ্যজগতে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন, তাহারা t Max Müller's India, what can it teach us, p. 206,