পাতা:বিশ্বকোষ একবিংশ খণ্ড.djvu/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

 সাবিত্রীব্রত

সাবিত্রী ব্রত। এই মন্ত্রদ্বারাই পূজা করিতে হয়। যিনি এইরূপে সাবিত্রীর ব্রত করেন, তার সকল অভিলাষ সিদ্ধি হয়। এই ব্রত সর্ববাতিষ্ট ফলপ্রদ। রাজা অস্বপতি নিঃসন্তান ছিলেন। মালতী তাহার ধর্মপত্নী । বন্ধা ছিলেন বলিয়া বশিষ্ট দেবের উপদেশে এই সাবিত্রী ব্ৰতাচরণ করেন। এই ব্রতের ফলে তিনি সাক্ষাৎ সাবিত্রীতুল্যা কন্যা  লাভ করেন এবং এই কন্যা প্রভাবে তাঁহার শতপুত্র হয়। [ সাবিত্রী দেখো] 

(দেবীভাগবত ৯।২৬–৩২ আ') দেবীভাগবতে নবমস্কন্ধে ২৬ অধ্যায় হইতে সাবিত্রী উপাখ্যান হইতে বিস্তৃত বিবরণ আছে।

সাবিত্রীব্রতের পদ্ধত্তি এইরূপ লিখিত আছে যে, জ্যৈষ্ঠমাসের কৃষ্ণাচুর্তুর্দশী তিথিতে রাত্রীকালে এই ব্রত করিতে হইবে । ব্রতকারিনী স্ত্রী ব্রতের পুর্বদিন যথাবিধানে সংযম করিয়া থাকিবেন । ব্রতদিনে সমস্তদিন উপবাস বিধেয় । যে ব্রাহ্মণ এই ব্রত করাইবেন, তিনিও সমস্ত দিন উপবাসী থাকিবেন । প্রদোষকালে সায়ংসন্ধ্যাদির অনুষ্টান করিয়া এই পূজার সংকল্প করিতে হইবে । প্রথমে যথাবিধানে স্বস্তিবাচন ও সূর্য্য: সোম ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করিয়া, কোশায় তিল, তুলসী, হরীতকী, দূৰ্ব্বা, পুষ্প ও ত্ৰিপত্র ধরিয়া সঙ্কল্প করিবেন। যথা—

"নমঃ বিষ্ণুর্ন মোহত জ্যৈষ্ঠমাসি কৃষ্ণে পক্ষে চতুর্দখাস্তিথাবারভ্য অমুকগোত্রা শ্ৰী অমুকী দেবী বা দাসী জীবচ্ছরীরাবিচ্ছেদেন সৰ্ব্বাপচ্ছান্তিপূর্বকজন্মজন্মাবৈধবাবিপুলধনধান্তপুত্রপৌত্রসম্পত্তি-ভকৃীর্ঘায়ুঃখগুরকুলগত রোগ-পিতৃকুলগতসম্পত্তরে সৰ্ব্বমুখভোগপ্রাপ্তিকাম চতুর্দশবর্ষপৰ্যন্তং প্রতিবর্ষীয় সাবিত্রীচতুর্দস্তাং গণপত্যাদি বেবত ষষ্ঠ যমভট্টারক -বটপাপপূঞ্জপুৰ্ব্বকসাধিীলতাবৎপুজ ব্লাহ্মণভোজনডল্লকপ্ৰদানসধবাতোজনপতিপূজনত্ৰতকথাশ্রবণপুৰ্ব্বকলাবিত্রীব্রতমহং করিশ্মে।"

এইরূপে সঙ্কল্প করিয়া ব্ৰাহ্মণ বেদানুসারে সঙ্কল্পস্থৰ পাঠ করিবেন। স্ত্রী ও শূদ্ৰাদির পূজায় অধিকার নাই, এইজন‍্য ব্ৰতকারিণী স্ত্রী পূজার জন‍্য‍ ব্ৰাহ্মণকে বরণ করবেন। ব্রাহ্মণকে নুতন বস্ত্র, যজ্ঞোপবীত, অঙ্গরীয়ক প্রভৃতি দ্বারা অলঙ্কত করিয়া বরণ করা বিধেয় । বয়ণের ৰিধান অনুসারে বরণ করিতে হয়। ব্রাহ্মণ যথাবিধানে বৃত হইয়া পূজাদি কার্য সম্পন্ন করিবেন। শালগ্রাম শিলা বা ঘটস্থাপনের বিধানঅনুসারে ঘটস্থাপন করিয়া সামান‍্য পূজাপদ্ধতির নিয়মানুসারে সামান‍্যার্ঘ‍্য, জলগুদ্ধি, ভূতাপসারণ প্রভৃতি করিয়া তৎপরে ভূতশুদ্ধিও করিতে হইবে। তৎপরে গণেশ, শিবাদি পঞ্চদেবতা, আদিত্যাদি নবগ্ৰহ, ইঙ্গাদি দশদিক্ পাল মৎস্তাদি দশাবতারের পূজা করি। ব্রতোক্ত পূজা করিতে হয়।

প্রথমে ষষ্ঠীপূজা বিধেয়। ষষ্ঠীর ধ্যান করিয়া মানসোপচারে পূজা, অর্ঘস্থাপন ও পুনরায় ধ্যান করিয়া আহবানপূর্বক ষোড়শোপচারে পূজা করিতে হয়। পূজা শেষ হইলে উক্ত মন্ত্র দ্বারা প্রার্থনা করিতে হয়। যথা -

"জয় দেবী জগন্মাতা র্জগদানন্দকারিণি ।

প্রসিদ মম কল‍্যাণী নমোহস্তু ষষ্ঠীদেবী তে।। ত্ত্বমেব বৈষ্ণবী শক্তি ব্রক্ষ্মাণী চ ব‍্যাবস্থিতা । রুদ্রশক্তিঃ সমাখ‍্যাতা মহাষষ্টি নমোহস্তু তে।।

এইরূপে ষষ্ঠীপূজা করিয়া যমের পূজা করিবে। ধ‍্যান যথা -

"বৈবস্বতাং মহাকায়াং দণ্ডপাশকরদ্বয়ং । পিঙ্গোদ্ধকেশং ধ্যায়েচ্চ মহিষোপরিসংস্থিতং।। "

এই ধ্যান করিয়া মানসপুজা প্রভৃতি পূজার বিধানে শক্তি অনুসারে উপচারসমূহ দ্বারা পূজা বিধেয়। এইরূপে পূজা করিয়া যমের নিকট প্রার্থনা করিতে হয়। প্রার্থনীমন্ত্ৰ—

“ওঁ যমোহসি ত্বং মহাকায় সৰ্ব্বভূতাপহারক। ত্বং প্রসাদাজ্জগন্নাথ দীর্ঘায়ুরম্ভ মে পতিঃ ॥ সূর্যপূত্র মহাভাগ সৰ্ব্বপ্ৰাণেশ্বর প্রভো । স্প্ন্ ত্বৎপ্রসাদান্ মহী যাবৎ দীর্ঘায়ূরন্তু মে পতিঃ। যমায় ধৰ্ম্মরাজায় মৃত্যবে চাক্তকায় চ। বৈবস্বতায় কালায় সৰ্ব্বভূতক্ষয়ায় চ। ঔড়ু স্বরায় দধ্মায় নীলায় পরমেষ্টিনে। বৃকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তার বৈ নমঃ ॥”

এইরূপে প্রার্থন ও প্রণাম করিবে। সমর্থ হইলে চতুর্দশ যমের প্রত্যেকের পূজা করা আবশ্ব‍্য‍ক। অসমর্থ পক্ষে কেবল যমের পূজা করিলেই হইবে। যমপূজার পর তৎপত্নী উর্ণ, এবং পাশ লগুড়াদি অস্ত্রপুজা করিবে। তৎপরে দ‍্যুমৎসেন তৎপত্নী মালবীর পূজা করা আবশ‍্য‍ক। এই সকল পূজার পর সত্যবানের পূজা করিবে । ধ্যান — “সত্যবক্তাং রাজপুত্ৰং রাজলক্ষণ-সংযুক্তং । পূৰ্ণচন্দ্ৰাননং গৌরং সৰ্ব্বাতরণভূষিতং ।।"

এই ধ্যানে সত্যবানের পূজা করিয়া প্রণাম করিবে। মন্ত্ৰ- "আবয়োর্মে যথা দেব সাবিত্র‍্যা বিহিতস্তব । ভূয়াদ্ভূত্তা যথাস্মাকং তথা জন্মনি জন্মনি।।”

তৎপরে বটবৃক্ষকে সূত্র দ্বারা বেষ্টন করিয়া সাবিত্রীর পূজা করিতে হয়। ষষ্ঠী পূজাকালে বটের একটা ডাল পুতিয়া লইয়া তাহার সমীপে সূত্র দ্বার বেষ্টন করিবে। সাবিত্রির ধ‍্যান - 

“শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশং সাবিত্রীং রূচিয়াননাম্ । পদ্মাসনাং রাজপুত্ৰীং বীণাপুস্তকধারিণীম ।।"

   অতয়েব সাবিত্রীপূজা সমাপন ।।
            ।।০।।