পাতঞ্জলদর্শন এমন এক অসাধারণ শক্তি জন্মে যে, তিনি যtহাকে যে উপদেশ দিবেন, তাহার তাই সফল হইবে । যোগীর যখন অপরিগ্রহ বৃত্তি স্থির বা দৃঢ় হইবে, তখন তাহার অতীত, অনাগত ও বর্তমান জন্মবৃত্তাস্ত স্মরণ হইবে। তখন তাহার নিকট কিছুই অজ্ঞেয় থাকিবে না । শৌচসিদ্ধি দ্বারা আপন শরীরের প্রতি তুচ্ছঞ্জান জন্মে এবং পরসঙ্গেচ্ছাও নিবৃত্তি হয়। শৌচ দুই প্রকার বাহ শৌচ ও আভ্যন্তর শৌচ, ইহার মধ্যে বাহ্য শৌচ অভ্যাস করিতে করিতে ক্রমে আত্মশরীরের প্রতি একপ্রকার ঘৃণা জন্মে। তখন আর জলবুদবুদ তুল্য মরণধৰ্ম্মী ও মলমূত্রাদিময় অন্নবিকার শরীরের প্রতি কোন প্রকার আস্থা বা অাদর থাকে না এবং পরশরীরসংসর্গের ইচ্ছা ও নিবৃত্তি হয়। আভ্যস্তর শোচ আরম্ভ করিলে প্রথমে সত্বশুদ্ধি, তৎপরে সোঁমনস্ত, একাগ্রতা, ইঞ্জিয়জয় ও আত্মদর্শন ক্ষমতা জন্মে। ভাবশুদ্ধিরূপ আভ্যন্তর শৌচ যখন চরম সীমাপ্রাপ্ত হয়, অন্তঃকরণ তখন এরূপ অভূতপূৰ্ব্ব সুখময় ও প্রকাশময় হয় যে, সে তখন কিছুতেই খেদামুভব করে না। সৰ্ব্বদা পূর্ণ ও পরিতৃপ্ত থাকে। এই পুর্ণ পরিতৃপ্তির নাম সোঁমনস্ত। সোঁমনস্ত জন্মিলে একাগ্রশক্তি প্রাদুর্ভূত হয়, অথবা একাগ্র হওয়া তখন সহজ छ्हेग्न আইসে। একাগ্ৰ-শক্তি জন্মিলে ইঞ্জিয়-জয় হয়। এই ইঞ্জিয়জয় হইতেই চিত্ত তখন আত্মদর্শনে সমর্থ হয়। সন্তোষ সিদ্ধ হইলে যোগী এক প্রকার:অনুপম মুখ প্রাপ্ত হইয় থাকেন। সে সুখ বিষয়নিরপেক্ষ । তপস্ত দৃঢ় হইলে শরীরের ও মনের শক্তিপ্রতিবন্ধক বা জ্ঞানের আবরণ নষ্ট হইয়া যায় । সুতরাং তপঃসিদ্ধযোগী শরীর ও ইন্দ্রিয়ের উপর যথেচ্ছরাপে ক্ষমতা পরিচালন করিতে পারেন। তখন তাহার ইচ্ছামুসারে শরীর অণু বা বৃহৎ হইতে পারে। যোগীর স্বাধ্যায় দ্বারা ইষ্টদেবতাদর্শনে ক্ষমতা জন্মে। ঈশ্বরপ্রণিধানে যখন চিত্তনিবেশ পরিপক্কতা প্রাপ্ত হয়, তখন অস্ত কোন সাধন না করিলেও উৎকৃষ্ট সমাধি লাভ হয়। যে যোগী ঈশ্বর প্রণিধান করিয়াছেন, তাহাদের আর কোন যোগাঙ্গামুষ্ঠান করিতে হয় না, এক ঈশ্বরপ্রণিধানেই সকল যোগসাধন হইয়া থাকে। যাহাতে শরীরের কোনরূপ উদ্বেগ উপস্থিত না হয়, এইরূপ ভাবে উপবেশন করার নাম আসন । যোগের উপকারক আসন সকল শিক্ষণ করা বিশেষ কষ্টজনক বটে ; কিন্তু ইহ অভ্যস্ত হইলে স্থির ও সুখজনক হয় । যোগtঙ্গ আসন সকল উত্তমরূপে আয়ত্ব না হইলে বিঘ্নকারী হয়, এই জষ্ঠ প্রথমে দৃঢ়তর যত্নসহকারে যাহাতে শীঘ্ৰ আসন জয় হয়, তাছা করা যোগীর সর্বতোভাবে বিধেয়। আসন জয় হইলে শীতগ্রীষ্মাদি ΧΙ [ సిరి ) 8సి পাতঞ্জলদর্শন দ্বারা অভিহত হইতে হয় না । আসন জয় হইলে প্রাণায়ামেরও বিশেষ সাহায্য হয় । শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতিভঙ্গ করিয়া দিয়া তাহাকে শাস্ত্রোক্ত নিয়মের অধীন কল্প বা স্থান বিশেষে বিধৃত করার নাম প্রাণায়াম । অঙ্গসনসিদ্ধ হইলেই এই দুঃসাধ্য কাৰ্য্য সহজে সম্পন্ন হয়, নচেৎ বড়ই ছুষ্কর। প্রাণায়াম তিন প্রকার—বাহবৃত্তি, আভ্যস্তরবৃত্তি এবং স্তম্ভবৃত্তি । এই ত্রিবিধ প্রাণায়াম দেশ, কাল ও সংখ্যা দ্বারা দীর্ঘ ও সুস্বরূপে সিদ্ধ হইতে দেখা যায়। প্রাণtয়াম সিদ্ধ হইলেই চিত্তকে যথেচ্ছ রূপে নিয়োগ করা যায় । এইরূপে যম, নিয়ম, আসন ও প্রাণায়াম দ্বারা প্রত্যাহার নামৰ যোগাঙ্গট অতি সহজ হইয়া আসে। চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয় যে রূপাদির প্রতি ধাবিত হয়, তাহাদের সেই গতিকে সেই দিক্ হইতে ফিরাইয় আনার নাম প্রত্যাহার। এই প্রত্যাহার দ্বারা ইন্দ্রিয়গণ বশীভূত হয়, তখন সমাধি করতলস্থ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। প্রকৃতি বশীভূত হইবার প্রধান উপায় যোগ। যোগ একটী বৃক্ষস্বরূপ, যম নিয়মাদি অনুষ্ঠান তাহার উৎপাদক বীজ। অসিন ও প্রাণায়ামাদি দ্বারা অঙ্কুরিত, প্রত্যাহারাদি দ্বারা তাহ পুম্পিত, পরে ধারণা, ধ্যান ও সমাধিস্থার ফলশান হইয়া থাকে। চিত্তকে দেশ বিশেষে বন্ধন করিয়া রাখার নাম ধারণা। রাগদ্বেষাদি শূন্ত হইয়া পুৰ্ব্বোক্ত প্রকারের মৈত্র্যাদি ভাবনাদ্বারা নিৰ্ম্মল চিত্ত হইয়া যম নিয়মাদিতে সিদ্ধ কোন এক যোগাসনে আসীন হইয়া প্রাণায়tযাদি অনুষ্ঠান দ্বারা ইন্সিয়দিগের স্ব স্ব বৃত্তি প্রত্যাহার করিয়া চিত্তের নিকট সমর্পণ করিতে হইবে । তাদৃশ চিত্ত কোন এক বস্তুতে দৃঢ়রপে ধারণ করিতে হইবে, চিত্ত্বকে এইরূপে ধারণ করার নাম ধারণা, এই ধারণা স্থায়ী হইলে ক্রমে তাহাই ধ্যান পদবাচ্য হয় । অর্থাৎ সেই ধারণীয় পদার্থে যদি প্রত্যয়ের ( চিত্তবৃত্তির ) একতানত জন্মে, তাহ হইলে তাহ ধান অtথা। প্রাপ্ত হয় । ক্রমে সেই ধ্যান যখন কেবলমাত্র ধোয় বস্তুতেই উদ্ভাসিত বা প্রকাশিত করিবে, আপনার স্বরূপ আমি ধ্যান করিতেছি ইত্যাদি প্রকার ভেদজ্ঞান লুপ্ত করিয়া দিবেক, তখন তাহাকে সমাধি বলা যাইবে । ধ্যান গাঢ় হইলেই তাহার পরিপাক দশায়, অন্ত জ্ঞান থাক। দূরে থাকুক, ধ্যানজ্ঞানও থাকে না, তাহার কারণ এই যে, চিত্ত তখন সম্পূর্ণরূপে ধোয় বস্থতে লীন হয়, ধোয় স্বরূপ বা ধ্যেয়াকার প্রাপ্ত হয়। সুতরাং চিত্ত তথম স্বরূপ শুষ্ঠের ভায়না থাকার স্থায় হইয়া যায় । অতএব তৎকালে অঙ্গ কোন জ্ঞান থাকে না । এইরূপ চিত্ত্বাবস্থ। উপস্থিত হইলেই সমাধি হইল, ইহা স্থির করিতে হইবে ।
পাতা:বিশ্বকোষ একাদশ খণ্ড.djvu/১৯৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।