পাথরী পাথর ( দেশজ ) রোগভেদ, মূত্রকছু, রোগবিশেষ। এই রোগের সংস্কৃত নাম অশ্মরী । সুশ্রীতে এই রোগের বিষয় এইরূপ লিখিত আছে— অশ্মরী চরিপ্রকার। শ্লেষ্মাই তাহাদিগের আধার। শ্লেষ্মা, বায়ু, পিত্ত ও শুক্র কর্তৃক এই রোগ জন্মে। অপথ্যকারী ব্যক্তির শ্লেষ্মা কুপিত হইয়া বস্তিদেশ আশ্রয় করিয়া এই রোগ হয়। ইহার পূর্ণলক্ষণ বস্তিদেশে পীড়া, অরুচি, মুত্ৰকৃচ্ছ, বস্তি, শিরঃমুষ্ক ও উপস্থে বেদন, জর, দেহের অবসন্নতা ও মৃত্রে ছাগলের ছায় বোটুকা গন্ধ হইয়া থাকে। এই সকল পূৰ্ব্বলক্ষণ হইলে কারণভেদে বেদন, মূত্রের বর্ণদোষ এবং গাঢ়তা ও অবিলত হইয় থাকে ও তাহ কষ্টে নিঃসরণ হয় । রোগ উপস্থিত হইলে প্রস্রাব নিঃসরণকালে নাভি, বস্তি, সেবনী ও উপস্থ ষ্টহীদের মধ্যে কোন না কোন স্থানে বেদন উপস্থিত হয়, ধাবন, লম্ফন, সন্তরণ, অশ্বাদির পৃষ্ঠে গমন বা পথশ্রম দ্বারা ও বেদন হয় । অতি সেবনে শ্লেষ্ম বৰ্দ্ধিত হইয়া অধোভাগে বস্তিমুখে অবস্থান করিয়া স্রোতোমার্গ রোধ করে, এই জন্য মূত্র প্রতিহত হইয়া ভেদকরণ বা স্বচি-বিদ্ধকরণের • তীয় পীড়া জন্মে এবং বস্তিদেশ গুরু ও শীতল হইয়া থাকে। শ্লষ্ম-জষ্ঠ অশ্বরী শ্বেত, স্নিগ্ধ, বৃহৎ কুকুটtণ্ড বা মধুকপুষ্পের দ্যায় বর্ণবিশিষ্ট । শ্লেয়া পিস্তযুক্ত হইলে সংহত ও পূৰ্ব্বোক্তরূপে বুদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়া বস্তিমুখে অধিষ্ঠানপূৰ্ব্বক স্রোতমার্গ রোধ করে । তাহতে মুত্র প্রশি হত হইয়া উষ্ণতা, দtহ ও পাক হইবার ন্যায় যন্ত্রণ এবং বস্তিদেশ উষ্ণু বায়ুযুক্ত হয় । পিত্তাশ্মরী রক্তযুক্ত এবং পীতাভ, ভয়াতকের অস্থিসদৃশ কৃষ্ণ বা মধুর ন্যায় বর্ণবিশিষ্ট হইয়! থাকে । শ্লেষ্মা বায়ুযুক্ত হইয়া সংহত ও পুৰ্ব্বোক্তরূপে বৰ্ধিত হয়। এই বায়ুযুক্ত শ্লেষ্মা বস্তিমুখে অধিষ্ঠান করিয়া নাড়ীপগ রোধ করে, ইহাতে তীব্র বেদন হয় । রোগী বেদনায় নিতান্ত কাতর হইলে দস্তপোণ, নাভি ও মেট্ৰদেশ মৰ্দ্দন এবং মলদ্বার স্পর্শ করিতে থাকে রোগ ইহাতে অতি শীর্ণ হইয়া যায় । বায়ুজ-অশ্বরী—স্যামবর্ণ, পরুষ, খরম্পর্শ, বিষম ও কদম্বপুষ্পের ন্যায় কণ্টকমুক্ত। দিবাস্বপ্ন, অসম বা অতিরিক্ত অtহার এবং শীতল, স্নিগ্ধ ও মধুর পাক দ্রব্য আহারে প্রিয় বলিয়। পূৰ্ব্বোস্ত তিন প্রকার অশ্মরী বিশেষতঃ বালকেরই সুন্মিয় থাকে, তথাদিগের শরীর ও বস্তিদেশের পরিমাণ অল্প ও শরীরে মাংসকৃদ্ধি না হওয়া প্রযুক্ত পাথরট বস্তিদেশ হইতে অনায়াসে বাহির করা যায় । বয়ঃস্থ লোকের শুক্রজন্য শুক্রাশ্মরী জন্মিয় থাকে। [ ২০৬ ] পাথরী -T- - - মৈথুনের অভিঘাতে বা অতিরিক্ত মৈথুন দ্বারা চলিত শুক্র নিঃস্থত না হইয়া অন্য পথে গমন করে, পরে বায়ু কর্তৃক সেই শুক্র সেই সকল স্থান হইতে সংগৃহীত হইয়া মেঢ় ও মুদ্ধের দ্বার মধ্যে সঞ্চিত হয় এবং পরে শুষ্ক হয় । এইহাতে মূত্রমার্গ আবুত হইয়৷ মূত্ৰকৃচ্ছ, বস্তিবেদন ও যুদ্ধৰ্বয়ের শ্বয়থু হয়। সেই স্থান টিপিলে পাথর মিলিয়া যায় । শর্করা, সিকতা ও ভস্মনামক মেহও পাথরীর বিকৃতিমাত্র। মুত্রাধার ও মলাশয় প্রাণের আশ্রয়স্থান । নদী যেরূপে সাগরাভিমুখে জল বহন করে, পকাশয়গত মুত্রবহ নাড়ী সকলও সেইরূপ বস্তি মধ্যে মুত্র বহন করে। যে সকল নাড়ী আমাশয়ের মধ্য হইতে মুত্র বহন করে, অতিশয় স্বগ্নতাপ্রযুক্ত তাহাদিগের মুখ উপলব্ধি হয় না । জাগ্রৎ বা স্বপ্ন!বস্থায় মূত্র ক্ষরিত হইয়া মূত্রাশয় পরিপূর্ণ করে । কোন একট নুতন ঘটের মুখ পৰ্যন্ত জলের মধ্যে ডুবাইয়া ধরিলে চারিদিকের জল আসিয়া যেমন ঐ ঘটট পুরণ করে, সেইরূপ বস্তিদেশও মুত্রদ্বারা পূর্ণ হইতে থাকে। এই প্রকার বাতপিত্ত্ব বা কফ মূত্রের সহিত মিলিত হইয়া বস্তিমধ্যে প্রবেশপুৰ্ব্বক পাথর জন্মায় । যেরূপ নুতন কলসীতে নিৰ্ম্মল জল রাখিলেও কালে তাহার তলে পঙ্ক সঞ্চিত হয়, সেইরূপ বস্তিমধ্যে পাথরী জন্মে ; যেমন আকাশীয় বায়ু অগ্নি ও বৈদ্যুতী শক্তির দ্বারা জল সংহত হইয়া হিমানীরূপে ( বরফাকারে ) পরিণত হয়, সেইরূপ বস্তির মধ্যস্থিত শ্লেষ্মা বায়ুও উষ্ণতা দ্বারা সংহত হইয়া পাথর উৎপন্ন করে। বায়ু সরল থাকিলে বস্তিদেশে মূত্রসঞ্চারিত হয়, ইহার বিপরীত হইলে নানাপ্রকার বিকার উপস্থিত হয়। মূত্ৰাঘাত প্রভৃতি সকলই বস্তিদেশে জন্মে ৷ (সুশ্রুত নিদানস্থা” ৪ অ” ) ভাবপ্রকাশে লিখিত আছে—পাথরীরোগ চারি প্রকার বাতজ, পিত্তজ, কফজ ও শুক্রজ। এই চারি প্রকার পাথরীর মধ্যে বাতজাদি ত্ৰিবিধ শ্লেষ্মাশ্রিত । শুক্রজ পাথরী কেবল শুক্র জন্ত হইয়া থাকে। চিকিৎসার অভাবে এই রোগ কৃতাস্তের স্থায় প্রাণহীরক হইয়া থাকে। কাহারও কাহীর মতে শুক্রাশ্মরী ও শ্লেষ্মাশ্রিত হইয়া থাকে। পাথরীর নিদান—যখন বায়ু বস্তিস্থিত শুক্রের সহিত যুত্রকে এবং পিত্তের সহিত কফকে শুষ্ক করে, তখন গে-পিত্তে যেরূপ গোরোচনা উৎপন্ন হয়, তদ্রুপ পাথরীরোগ হইয়! থাকে। সকল প্রকার পাথরই ত্রৈদোধিক, তন্মধ্যে দোযের প্রাধান্ত অমুসারে বাতজাদি ভেদে নামকরণ হইয়া থাকে । পাথরীর পুৰ্ব্বলক্ষণ-পাথরী হইবার পূৰ্ব্বে বস্তিদেশে আধুনি, বস্তির নিকটস্থ চতুঃপার্থে অত্যন্ত বেদন, ছাগমূত্রের স্থায় মূত্রে গন্ধ, মূত্ৰকৃচ্ছ, জর এবং অরুচি হয়।
পাতা:বিশ্বকোষ একাদশ খণ্ড.djvu/২০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।