মহারাষ্ট্র মহারাষ্ট্ৰীয়েরা কখনও টঙ্কশাল স্থাপনপূর্বক স্বতন্ত্রভাবে মুদ্র। প্রচলিত করিয়াছিলেন, এরূপ প্রমাণ পাওয়া যায় ‘ না । শিবাজীর পিত। রাজা শাহজার সময়ে মহারাষ্ট্রদেশের সর্বত্র “আদিলশাহী মুদ্রারই প্রচলন ছিল । ১৬৬৩ খৃষ্টাব্দে তাহার পরলোকগ্রাপ্তি ঘটিলে শিবাজী পৈতৃক রাজা উপাধি গ্রহণপুৰ্ব্বক স্বনামাঙ্কিত মুদ্রার প্রবর্তন করেন। সেই নূতন মুদ্র শিবরাঈ ছোন’ (শিবরায়ের হোন ) নামে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। এই হোন শব্দ কর্ণাটক ‘হোয়, শব্দের অপভ্রংশ। ছো, অর্থে মুবর্ণ। এই শব্দ পারস্তভাষায় ‘হোন'-রূপে উচ্চারিত হয় এবং সেই নামেই সৰ্ব্বত্র পরিচিত হইয়াছে। কর্ণাটকের প্রাচীন হিন্দুরাজ্যসমূহে পুৰ্ব্বে কেবল সুবর্ণমুদ্রারই প্রচলন ছিল। দেশীয় রাজাদিগের নামানুসারে যে সকল সুবর্ণমুদ্র প্রচলিত হইয়াছিল, অস্থাপি দুই এক স্থলে তাহার নিদর্শন পাওয়া যায় । সেই সকল মুদ্র। “অশ্বপত্তি হোন,’ ‘গঞ্জ পতি হোন” প্রভৃতি নামে খ্যাত। বিজয়নগর-রাজ্যে হোনের প্রচার সব্বাপেক্ষ অধিক ছিল । তথায় বিদ্যারণ্য স্বামীর তপঃপ্রভাবে একদা হোনের বৃষ্টি হইয়াছিল বলিয়। যে প্রবাদ অাছে, তাহা ও উক্ত মুদ্রার বিপুলতা-সূচক বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে। সেকালে দক্ষিণাপথের সর্বত্র হোনের দ্যায় মোহরের ও প্রচার ছিল । [ 8&७ ] মুসলমানদিগের আমলেই ঐ অঞ্চলে রৌপ্যমুদ্রার প্রথম প্রবর্তন হয়, অনেকে এইরূপ অনুমান করেন । এই অমুমান যদি সত্য হয় তবে বলিতে হইবে যে, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাট দেশের অধিকাংশ সুবর্ণ লুষ্ঠিত হইয়া দিল্লীতে নীত । হওয়ায় স্থানীয় শাসনকৰ্ত্তারা দেশমধ্যে রৌপ্যমুদ্রার প্রচার । করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । যাহা হউক, শিবাণীর সময়ে মহারাষ্ট্রদেশে অনেক প্রকারের হোন প্রচলিত ছিল । শিবাজীর অন্যতম কৰ্ম্ম- \ চারা ঐযুক্ত কৃষ্ণাৰ্জী অনন্ত সভাসদ মহোদয় স্বপ্রণীত | ‘শিবছত্রপতির চরিত্র’ নামক গ্রন্থে যে ষড়বিংশ প্রকার হোনের উল্লেখ করিয়াছেন, তন্মধ্যে কয়েকটা এই,— ১ পাতশাহী ; ২ শিবরাঈ ; ৩ কাবেরা পাকা ; ৪ ত্রিশূলা ; ৫ অচ্যুতরাষ্ট্র ; ও দেবরাঙ্গ ; ৭ রামচন্দ্র রাঈ ; ৮ ওভা ; ৯ ধারবাড়ী, ১• তড়িপঞ্জl; ১১ পাকনাইকী; ১২ তাদ্বোরা; ১৩ জুডুমাল ; ১৪ বেলুরী ; ১৫ মহম্মদ শাহী ; ১৬ রমানাথপুরা। এই সকল হোম বহুদিন পয্যন্ত মহারাষ্ট্রে প্রচলিত ছিল। পরবর্তিকালে হায়দর ও টিপু ‘বাহাদুরী’ ও ‘মুলজtল। হোন’ নামক দ্বিবিৰ স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করিয়াছিলেন । भशहीछे এতদ্ভিন্ন দিল্লীর বাদশাহদিগের 'আলমগির নামক হোনের আদান প্রদান সৰ্ব্বত্র অক্ষুণ্ণ ছিল । সেকালের এক হোন বৰ্ত্তমান কালের প্রায় ৩॥০ টাকার সমান । শিবাজী স্বর্ণমুদ্রার স্তায় রৌপ্য ও তাম্রমুদ্রারও প্রবর্তন করিয়াছিলেন। সেগুলি শিবরাঈ রূপেয়া’ ও ‘শিবরাঈ পয়সা নামে প্রসিদ্ধ ছিল । শিবরাঈ পয়সা এখনও মহা রাষ্ট্রের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ; কিন্তু শিবাজীর প্রবর্তিত সুবর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা অধুনা নিতান্ত দুল্লভ হইয়। উঠিয়াছে। অন্য যে সকল প্রাচীন হোন বহুপরিমাণে নান৷ স্থানে পাওয়া যায়, তাছার অধিকাংশের উপর অস্পষ্ট পায়স্তঅক্ষর উৎকীর্ণ রহিয়াছে, পরিদৃষ্ট হয়। কোনও কোনও হোনের উপর শ্ৰীকৃষ্ণ ও বরাহ অবতারের চিত্রও দেখিতে পাওয়া যায়। প্রবাদ, শিবাজীর সময়ে সজ্জনগড় নামক দুর্গে অসংখ্য হোন ছিল । অদ্যাপি ঐ অঞ্চলে ক্ষেত্র · কর্ষণকালে কেহ কেহ কদাচিৎ দুই একটা হোন লাভ করিয় থাকে। এই হোনের আকার ছোলা র দ। উলের yার স্থানীয় লোকেও সেই জন্ত উহাকে সাধারণতঃ "সোনার দাউল' নামেন্স অভিহিত করিয়া থাকে । রায়গড় সেকালে মহারাষ্ট্রদেশের রাজধান ছিল বলিয়। শিবাজী তথায় টঙ্কশাল প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। পরবপ্তিকালের রাজধানী সাতারা সে সময়ে একটী ক্ষুদ্র পল্লী ছিল । শিবাজীর মৃত্যুর - সাম্ভাজী ও রাজারামের রাজ্যকাল মোগলদিগের স* অনবরত যুদ্ধবিগ্রহহেতু ঘোর বিপ্লবে পুর্ণ হয়ে উঠিম্নাছিল। সেই অশাস্তির সময়ে নূতন মুদ্রাপ্রচারের কিরূপ ব্যবস্থা হইয়াছিল, টাকশালের কার্য্য অব্যাহত ছিল কি না, তাহার কোনও বিবরণ পাওয়া যায় না । বোধ হয়, সে সময়ে নুতন টাকা প্রস্তুত হয় নাই । রাজারাম মোগলাদগের দেীরাত্ম্যে স্বদেশ পরিত্যাগ করিয়া কণাটের অস্তগত জিঞ্জ ছুগে আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হহুয়াছিলেন । মহারাষ্ট্র-রাজসংহাসনও বহুদিন পর্য্যস্ত তথায় প্রতিষ্ঠিত ছিল । কিন্তু সেখানে কখনও টাকশাল স্থাপিত হইয়াছিল, এরূপ কোন ও প্রমাণ নাই ৷ পক্ষাস্তরে, মহারাজ রাজারাম জঞ্জা হহতে মহারাষ্ট্র-দেশের বহুসংখ্যক দেবস্থানের ও ব্রাহ্মণদিগের উদ্দেশে যে সকল দানপত্র লিখিয়া দিয়াছিলেন, তন্মধ্যে ভূসম্পত্তি ভিন্ন নগদ টাক। কড়ির উল্লেখ কুত্ৰাপি পাওয়া যায় না। কিন্তু শিবাজী সময়ে যে সকল দানপত্র রচিত হইয়াছিল, তাহাতে সুবর্ণমুদ্রাদির ভুরিভুরি উল্লেখ দৃষ্ট হয়ে থাকে। মোগলশ ওকে বহুলপরিমাণে পরাভূত করিয়া রাজারাম সাতারামু মহারাষ্ট্ররাজ্যের নূতন রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করেন ।
পাতা:বিশ্বকোষ চতুর্দশ খণ্ড.djvu/৪৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।