মাইকেল মধুসূদন দত্ত পারিতেন । উক্ত ছয়ট যুরোপীয় ভাষা ভিন্ন সংস্কৃত, পারসিক, হিব্রু, তেলগু, তামিল ও হিন্দুস্তানী ভাষায় তাহার অল্পাধিক অভিজ্ঞতা ছিল, সুতরাং মাতৃভাষা বাঙ্গালা ছাড়া বারটা বিভিন্ন ভাষায় তাহার অধিকার হইয়াছিল। ভাষা-শিক্ষা ও কবিতানুশীলন সম্বন্ধে এই কয় বৎসর মধ্যে তিনি যেরূপ উন্নতি করিয়াছিলেন, দুঃখের বিষয়, সেই বিদ্যোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খলতা ও তাহাকে সেই পরিমাণে আশ্রয় করিয়াছিল। অসংযতচিত্ত ও অপরিণামদর্শী মধুসূদনের হৃদয়ের শাস্তি দিন দিন অস্তৰ্হিত হইতে লাগিল ৷ জননীর অনুরোধে তিমি কথন কখন পিতৃগৃহে আগমন করিতেন, কিন্তু ধৰ্ম্ম ও সামাজিক আচার ব্যবহারসম্বন্ধীয় বৃথা বাদামুবাদে পিতার সহিত র্তাহার কলহ উপস্থিত হইত। তাহার পিতা অবশেষে বিরক্ত হইয়। মাসিক সাহায্য বন্ধ করিয়াছিলেন। যদি মধুস্থদম এই সময়ে পিতার পরামর্শ গ্রহণ কল্পিতেন, তাহা হইলে তাহাকে তবিষ্যৎ জীবনে ক্লেশ পাইতে হইত না । মধুসূদনের অশান্তি দিন দিন বাড়িতে লাগিল। অর্থভাবে তাহার কষ্ট দ্বিগুণতর হইল। খৃষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াও তাহার মনোমত পত্নীলাভ ও ইংলওগমন অদৃষ্টে ঘটিল না। খৃষ্টধৰ্ম্ম-প্রচারকগণ ও রেভারেও কৃষ্ণমোহন প্রভৃতি যাহারা তাহাকে দীক্ষার সময় আশ্বাস দিয়াছিলেন, তাহার এবং তাহার বাল্যসুহ্যদুগণ তাহার ধৰ্ম্মান্তরগ্রহণের জন্ত ক্রমশঃই দূরবর্তী হইয় পড়িয়াছিলেন। স্বদেশ তাহার নিকট প্রবাস এবং পিতৃগৃহ অরণ্যসম বোধ হইল। সহানুভূতি লাভ ঘুরাকাজ। বুঝিয়া তিনি কলিকাতা ছাড়িয়া অন্যত্র শান্তিলাভের চেষ্টায় অগ্রসর হইলেন । বিশপস-কলেজে অনেকগুলি মান্দ্রাজপ্রেসিডেন্সীর ছাত্র অধ্যয়ন করিত। তাহদের মুখে তথাকার সাবশেষ জ্ঞাত হইয়া তিনি মাম্রাঞ্জে যাওয়াই স্থির করিলেন । অবশেষে তিনি একদিন গোপনে অকস্মাৎ অন্তহিত হইয়৷ পড়িলেন ( ১৮৪৭-৪৮ খৃ: ) । যখন তিনি স্বদেশ পরিত্যাগ করেন, তখন তাহার নিকট এক কপদকও ছিল না । পাঠ্য পুস্তকাদি বিক্রয় করিয়া সামান্ত যাহ। কিছু সঙ্গে লইয়াছিলেন, পাথেয় প্রভৃতিতে তাহ অল্পদিন মধ্যেই নিঃশেষিত হইয়া গেল । এই নিঃসম্বল অবস্থায় আবার কঠিন বসন্তরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাহার জীবন যাপন যে কিরূপ দুৰ্ব্বহ হইয়াছিল, তাহ সহজেই অমুমেয় । ঘত দিম তিনি কলিকাতায় ছিলেন, ততদিন তাহার স্নেহময়ী মাতা তাহাকে গোপনে অর্থ সাহায্য করিতেন, সুতরাং হৃদয়ুবিদারক দরিদ্র্যকষ্ট তাহাকে একদিনের জন্যও অম্ল [ : ૦૪ના ] মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্তব করিতে হয় নাই। এই সময় হইতে প্রকৃত প্রস্তাবে তাহাকে দরিদ্রতা পুর্ণমাত্রায় উপভোগ করিতে হয়। নিরুপায় হইয়া তিনি মান্দ্রাজের দেশীয় খৃষ্টান-সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রার্থ হইলেন। তাহারা মধুসূদনের দুঃখে কাতর হইয়। তাহাকে অনাথ ফিরিঙ্গী-বালকদিগের জন্ত প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা-কাৰ্য্যে নিযুক্ত করিলেন । উপায়াস্তরের অভাবে তিনি অর্থাগমের জন্ত সাহিত্যের উপর নির্ভর করিতে বাধ্য হন। এত দিন তিনি অমুশীলন ও বিনোদনের জন্য সাহিত্য সেবা করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাহাকে প্রাণধারণার্থ সাহিত্যের পূজা করিতে হইল। তিনি মান্দ্রাজের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রসমুহে প্রবন্ধ লিখিতে আরম্ভ করিলেন। স্বল্পকাল মধ্যেই তাহার সুখ্যাক্তি মান্দ্রাজের কৃতবিদ্য সমাজে পরিব্যাপ্ত হইল। এখানেও তিনি একজন সুলেখক ও সুপণ্ডিত বলিয়া প্রতিপত্তি লাভ করিলেন । Madras Circular & General Chronicle, Madras Spectator & Athaeneum at To rifoto orot; Captive Lady S Visions of the Past of Rofo প্রকাশিত হয় । উক্ত ক্যাপটিভ, লেডার উপক্রমণিকায় তিনি আপনার কষ্টকর ভারবহু জীবনের পরিচয় নিম্নলিখিত ছত্রে জ্ঞাপন *foll footton, “Want and Poverty with the ‘battalions’ of “Sorrows’ which they bring, leave but little inspiration for their victim.” ক্যাপটিভলেডী প্রকাশের পূৰ্ব্বে তিনি মাস্রাজের এডভোকেট জেনারল জর্জ নর্টনের অমুমতিক্রমে ও মধ্যবত্তিতায় তথাকার এক নীলকর শ্বেতাঙ্গের কন্যার পাণি-গ্রহণ করেন। ক্যাপটভ, লেডীর প্রারম্ভে তিনি এই নব পরিণীত। বধুকে উল্লেখ করিয়া অনুরাগ ভরে যে প্রতি সম্বোধন করিাছিলেন, ভাবী জীবনে সে প্রেম-ভাব আর স্থান পায় মাহ । বিবাহের কত্রক বৎসর পরে, তাহার সে সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল। তদনন্তর মাঙ্গাজ-প্রেসিডেন্সী কলেজের অধ্যক্ষের দুহিতার প্রতি তাহার অনুরাগ সঞ্চার হয়। এই কন্যাকে পত্নীভাবে গ্রহণ করিয়া তিনি অবশিষ্ট জীবন যাপন করিয়াছিলেন। তাহার প্রথমাপত্নী ও তদগর্ভজাত পুত্রকন্যাগণের সহিত র্তাহার সম্বন্ধ বিলুপ্ত হইয়াছিল । সুতরাং তাছাদের উল্লেখ নিম্প্রয়োজন । শেষোক্ত মহিলার গর্ভজাত পুত্র কন্যাকে জামরা মধুসূদনের প্রকৃত সন্তান বলিয়া গ্রহণ করিব । 蠍 ষে প্রেমময়ী পীর সংসর্গ তিনি ঐতিপূর্ণ উন্মাদ-কবিতায়
পাতা:বিশ্বকোষ চতুর্দশ খণ্ড.djvu/৫০৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।