ভারতবর্ষ। [ ৩৭৮ ] ভারতবর্ষ। সিন্ধু রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। তিনি উদ্ধত ও উন্মুক্তকৃপাণ আরবসৈন্তের সন্মুখীন হইতে সমর্থ না হইয়া স্বরাজ্য মুসলমানের হস্তে সমর্পণ করেন। যুদ্ধ-সময়ে আলোর ও ব্রাহ্মণাবাদ নামক নগরদ্বয় নষ্ট হইয়া যায়। কাসিম ও তদ্বংশীয় মুসলমানগণ বহুদিন এখানে আধিপত্য-বিস্তার করিতে পারেন নাই। সে বীর-জরিয়গণ উপৰ্য্যুপরি কএকটা যুদ্ধে মুসলমান দিগকে বিপৰ্য্যস্ত করিয়া তাহাদিগকে সিন্ধুরাজ্য হইতে বিতাড়িত করেন । , -o এই সময় হইতে ভারতে ক্ষরিয়-প্রাধান্ত সমুপস্থিত হয়। মুসলমান কর্তৃক পরাজয়ের পর হঠতে সকল ক্ষত্রিয় সস্তানই আত্মরক্ষায় তৎপর হইয়াছিলেন । রাজা হর্ষবৰ্দ্ধনের রাজত্বের পর, আর কোন হিন্দুনরপতিই ভারতে একচ্ছত্রাধিপত্য-স্থাপন করিতে পারেন নাই। বঙ্গ, মগধ, কনোজ, কালঞ্জর, মালব, রংপুর, গুজরাত, সিন্ধু, পঞ্জাব, দিল্লী, আজমীর ও সমগ্র দাক্ষিণাত্য প্রদেশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নরপতিবর্গের দ্বারা শাসিত হইয়াছিল। ইতিহাস-প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রকুট, চালুক্য, পরমার, চৌহান প্রভূতি ক্ষত্রিয়রাজবংশ স্বতন্ত্ররূপে স্বীয় স্বীয় স্বাধীনতা- ; তাহাদিগের মধ্যে ঈর্ষানল ৷ কেতন উদুীন করিয়াছিলেন । প্রজ্জ্বলিত থাকায় পরস্পরে বাহ্যতঃ পরস্পরের সহিত সত্ত্বাবস্থাপনে পরায়ুথ ছিলেন না, কিন্তু অস্তরে সকলেই পল্লখ্রকাতর ও ঈর্ষাপরবশ ছিলেন। ভারতের এইরূপ আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলতা উপলব্ধি করিয়া ৯৭৭ খৃষ্টাব্দে গজনীর সিংহাসনাধিরোহণের পর হইতে সবক্তগিন ক্রমশই ভারত-সীমাস্তে পদার্পণ করিতে চেষ্টা পাইতে ছিলেন। ভাৰী বিপদের আশঙ্কা দেখিয়া লাহোরাধিপতি জয়পাল তৰিক্ৰদ্ধে যুদ্ধায়োজন করেন। ঐ সময়ে দিল্লী, আজমীর, কালফ্লর ও কনৌজ প্রভৃতির রাজন্তবর্গ তাহার সহায়তা করিয়াছিলেন ; কিন্তু কুর্ভাগ্যবশতঃ ইহার। জয়ী হইতে পারেন নাই। সবক্সগিন পেশাবর প্রদেশ স্বীয় রাজ্যভুক্ত করিয়া লন। তংপুত্র মাঙ্গ, ১•১ হইতে ১-২৬খৃঃ অঃ পর্যান্ত ১৭বার ভারত আক্রমণ করেন । উপহার করতলগত হইল। তিনি ভারতে রাজ্যাকাঙ্ক্ষা রাখেন নাই। কেবল অর্থলুণ্ঠন দ্বারাই পরিপুষ্ট হইতে প্রয়াসী ছইয়াছিলেন। সুতরাং তিনি আদে ভারতে মুসলমান-রাজ্য স্থাপন করিতে পারেন নাই। ১৯৩৯ খৃঃ অঃ মাহ্মদের মৃত্যুর পর লাহোর ও নাগরকোট প্রভৃতি স্থানে হিন্দুগণ স্বাধীনতাধ্বজ উড়াইতে প্ৰৱাসী হইয়াছিলেন । লাহোর নগর কিছু দিনের জগু মান্ধ দ-রাজবংশধর বৈয়ামের শাসনাধীন ছিল, তাহার ফলে পশ্চিমে পঞ্জাব, দক্ষিণে | গুজরাত, পূৰ্ব্বে কানোঙ্গ, উত্তরে কাশ্মীর পর্য্যস্ত ভূভাগ ! আফগানস্থানে ঘোর ও গজনী বংশের পরস্পর বিরোধে গজনীরাজবংশ উৎসাদিত হয় এবং ঘোররাজবংশ ক্রমশঃ কাবুলরাজ্যে প্রতিপত্তি-বিস্তার করিতে থাকে। ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যস্ত গজনী বংশ লাহোর-রাজধানীতে শাসনকার্য্য পরিচালনা করিয়াছিলেন। ঘোররাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ ১১৭৬ খৃষ্টান্সে উক্ত নগর অধিকার করেন। ১১৮৬ খৃষ্টাব্দে তিনি খুশ্রু মালিককে পরাজিত ও বন্দী করিয়া লাহোর অধিকারপুৰ্ব্বক সমগ্র পঞ্জাব প্রদেশে প্রভুত্ব বিস্তার করিয়াছিলেন। যে সময়ে আফগানস্থানে গজনী ও ঘোর সর্দারগণের পরস্পর বিরোধ চলিতেছিল, ঠিক ঐ সময়ে ভারতসাম্রাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যখণ্ডে বিভক্ত হইয়া পরস্পরের প্রতিযোগিতা করিতেছিল। দিল্লী ও আজমীরের অধীশ্বর চৌহান-কুলোম্ভব পৃথ্বীরাজ এবং কান্তকুঙ্গাধিপতি রাঠোরবংশীয় জয়চন্দ্র পরম্পরে উত্তরাধিকার লইয়া বিরোধ উপস্থিত করেন । ঘোরিরাজধানী লাহোরের নিকটস্থ রাজস্যগণকে পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধাচারা দেখিয়া, স্বযোগমত ১১৯১ খৃষ্টাব্দে মহম্মদ দিল্লী আক্রমণে অগ্রসর হইলেন। তিরোরার-যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোরিরাজ পরাজিত হইয়া পলায়ন করেন, কিন্তু ১১৯৩ খৃষ্টাব্দের থানেশ্বর-রণক্ষেত্রে পৃথ্বীরাজ ধৃত ও নিহত হন। তাহার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের হিন্দুশাসন বিলুপ্ত হইল। চন্দ্রবংশীয় পাণ্ডবগণের বলবীৰ্য্যলব্ধ ইন্দ্রপ্রস্থ রাজধানী এতদিনের পর মুসলমান-রাজবংশের করায়ত্ত হইল । দিল্লী নগরে রাজপাট স্থাপন করিয়া মহম্মদ ঘোরী পর বৎসর (১১৯৪ খৃঃ অঃ) কনোজ ও বারাণসী আক্রমণ করেন। এতোবার যুদ্ধে জয়চন্দ্র পরাজিত ও নিহত হইলে, তদ্রাজ্য মুসলমানরাজের শাসনভুক্ত হয় । বারাণসী ও কনোজবিজয়ান্তে জয়লব্ধ ধন রত্ন লইয়া মহম্মদ গজনী-অভিমুখে প্রস্থান করেন। যাত্রাকালে তিনি স্বীয় বিশ্বস্ত সেনাপতি কুতবউদ্দীনকে রাজ্য-শাসনাৰ্থ প্রতিনিধি নিযুক্ত করিয়া যান। কুতৰ দিল্লী রাজধানী হইতে শাসন-সম্পৰ্কীয় স্বব্যবস্থা করিয়া ১১৯e খইন্ধে গোয়ালিয়র জয় করেন। তাহার খ্যাতনামা সেনাপতি মহম্মদই-বখতিয়ার ১১৯৯ খৃষ্টাব্দে বঙ্গরাজধানী নবদ্বীপ আক্রমণপুৰ্ব্বক বঙ্গদেশ অধিকার করেন। অশীতিপর বৃদ্ধ রাজা লক্ষ্মণসেন প্রাসাদ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক বিক্রমপুরাভিমুখে পলায়ন করেন । সবক্তগীনের অধিকার কালে (৯৭৭ ৭: ) পেশাবর প্রদেশ আফগানরাজ্যের সীমাভুক্ত হইয়াছিল। মামুদ ঐ সীমা পঞ্জাবের পশ্চিমাংশ পৰ্য্যস্ত বিস্তার করিয়া বান। তৎপরে
পাতা:বিশ্বকোষ ত্রয়োদশ খণ্ড.djvu/৩৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।