পাতা:বিশ্বকোষ দশম খণ্ড.djvu/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নেপাল [ ७७8 1 নেপাল করিলেও উহার মনের আশা ফুপ্ত হয় না। বই বিবাহের শ্ৰোত নেপালে যেরূপ প্রবল, তেমনই বিধবা-বিবাহ একবারে | নিষিদ্ধ। পূৰ্ব্বে এখানে অসংখ্য অসংখ্য সতীদাহ হইত। স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর এই অপূৰ্ব্ব স্বর্থ-ত্যাগ, নেপালীর কঠোর হৃদয়ে অসামান্ত ধৰ্ম্ম-জ্যোতিঃ ঢালিয়া দিয়াছিল। এই সকল রমণীগণও যে ধৰ্ম্ম-জগতে “সতী” নাম ক্রয় করিয়া এবং ভারতের বক্ষে ধৰ্ম্মস্তম্ভ স্থাপনপূর্বক সমগ্র জগতে আপনাদের সেই চিরস্মরণীয় কীৰ্ত্তি ঘোষণা করিয়া সকলের পূজ্য হইয়াছেন, তাহাতে বিন্দুমাত্র সংশয় নাই। পূৰ্ব্বতন রাজপুরুষদিগের নিয়মাবলী যথেচ্ছাচারিতাদোষেফুষ্ট থাকায় এবং রাজ রাজ্যশাসনে শিথিলপ্রস্বত্ব হওয়ায়, রাজ্যে বিষম বিশৃঙ্খলতা উপস্থিত হয়। রাজপুরুষগণের আত্মবিচ্ছেদে রাষ্ট্র-বিপ্লব ঘটে। এই সময়েই জঙ্গ বাহাদুর রাজাকে সিংহাসনচুতি করিয়া স্বয়ং রাজ্যভার গ্রহণ করেন। রাণী জঙ্গবাহাদুর নেপালের রাজ্যভার নিজ হন্তে লইয়াও যখন দেখিলেন যে, এখনও তিনি শত্রুপক্ষীয়ের কুদৃষ্টি হইতে নিস্কৃতি লাভ করেন নাই ; তখন তিনি নেপালের সন্ত্রাস্ত-বংশীয় অনেকের কস্তার পাণিগ্রহণ করিয়া, অনেককে চরিতার্থ করিলেন। এই বিবাহের মুখ্য উদ্বেগু এই যে, শত্রুদল আর কোন মতে তাহার বিপক্ষতাচরণ করিবে না। এই উদ্দেগু সাধনের জন্ত তিনি সেই সময়ে দেশের গণ্যমান্ত ও ক্ষমতাপন্ন সকল ঘরেই আপনার পুত্র, কষ্ঠা ও ভ্রাতাদির বিবাহ দিয়া সম্বন্ধসূত্রে আবদ্ধ হইলেন । এইরূপে আপনাকে বিপক্ষদল হইতে নিরাপদ বিবেচনা করিয়া, তিনি ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে ইংলণ্ডযাত্রা করেন এবং তথায় এক বৎসর কাল অতিবাহিত করিয়া পরবর্তী বৎসরে ৯ই ফেব্রুয়ারী নেপালরাজ্যে প্রত্যাবৃত্ত হন। স্বদেশে আসিয়াই তিনি ইংরাজের অনুকরণে সামরিক সুশৃঙ্খলা এবং ফৌজদারী আইনাদির পরিবর্তন করিয়া দেশে সুব্যবস্থা স্থাপন করিলেন। এই সময়ে তিনি সতীদাহ-নিবারণ সম্বন্ধে কএকটা নুতন ব্যবস্থ স্থাপন করেন। সতীদাহ সম্বন্ধে তাহার সংশোধিত নিয়মাবলী এইরূপ—( ১ ) পুত্রবতী স্ত্রীলোকগণ ইচ্ছাসত্ত্বেও সহমরণে যাইতে পারিবে না । ( ২ ) সতী সুনামাকাঙ্কিণী কোন রমণী যদি সহমরণে যাইয়া, স্বামীর জলস্ত-চিত। দর্শনে তীত এবং সাক্ষাৎ শমনপি অগ্নিতে জীবন-বিসর্জন করিতে কাতর হয় ; তাহা হইলে কথঙ্গই সে রমণী অগ্নি-প্রবেশ করিতে পারিবে না। পুৰ্ব্বকার নিয়ম ছিল যে, যদি কোন রমণী একবার সহমরণে যাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিত, শ্মশানের এরূপ বীভৎস-দৃপ্ত দেখিয় তাহার অন্তরাত্মা চমকিত হইলেও, তাহার আত্মীয়গণ বলপূর্বক তাহাকে শমন ভবনে পাঠাইতে কৃতসঙ্কল্প হইত। ঐ রমণী পলাইতে চেষ্টা করিলে, লগুড়াঘাতে তাহার মাথায় খুলি ভাঙ্গিয় দিত এবং সেই সঙ্গে সঙ্গেই রমণী পঞ্চস্তু প্রাপ্ত হইত। জঙ্গবাছাছুরের কৃপায় অসহায় রমণীগণ এইরূপ নৃশংস অত্যাচারের হস্ত হইতে রক্ষী পাইয়াছে। ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতগণ তাহার এই নবায়ুমোদিত মত ‘অসঙ্গত ও অযৌক্তিক এবং ধৰ্ম্মের ব্যাঘাতজনক” এরূপ বিরুদ্ধ বাক্য বলিলেও, তিনি তাহাদের মতামত উপেক্ষা করিয়া, নিজমত স্থাপনের জন্য দৃঢ়সংকল্প হইলেন। - - গোর্থীজাতির দাম্পতা-প্রণয়ে একবার অবিশ্বাস জন্মিলে, অথবা পত্নী ব্যভিচারিণী বলিয়া সন্দেহ হইলে, তাহারা স্ত্রীলোকদিগকে অতিশয় পীড়ন করে । কোন রমণী যদি ভ্রম ক্রমে বিপথগামিণী হয়, তাছা হইলে প্রথমে তাহাকে গৃহ মধ্যে স্বনিয়মে রাখিয়। তাছার চরিত্র-সংশোধনের চেষ্টা করে অথবা তাহার পুর্ণ আচরিত পাপকর্মের প্রায়শ্চিন্তস্বরূপ উত্তমমধ্যম বেত্ৰাঘাত দ্বার, তাছাকে পুনরায় সুপথে জানিতে চেষ্টা পায় ; কিন্তু যদি দেখে যে, ইহাতেও তাঁহাকে শোধরান গেল ন, তাহ হইলে তাহাকে যাবজ্জীবন বন্দী করিয়া রাখে। যে ব্যক্তি উপপতি হইয়া অপরের পত্নীতে আসক্ত হয় এবং তাঁহাকে স্বধৰ্ম্ম হইতে ভ্ৰষ্ট করিতে চেষ্টা করে এবং ঐ স্ত্রীর স্বামী যদি জানিতে পারে, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তাহার পত্নীর ধৰ্ম্মহন্ত৷ উপপতি, তাহার প্রণয়িনীর স্বামীর কুকৃড়ীর আঘাতে, প্রথমদর্শনেই ভূতলশায়ী হইয়া থাকে। সর জঙ্গবাহাদুর দেখিলেন যে, এরূপ অবৈধ-প্রণয়ে কেবলমাত্র জাতীয়তার অবনতি এবং এইরূপ সতীত্ব-স্থরণে স্বদেশের গ্লানি ও আত্মশ্লাঘার সন্তাবন ; তজ্জন্ত তিনি বিহিত বিবেচনা করিয়া, তাহ নিবারণে যত্নবান হইলেন। তিনি আইন প্রচার করিলেন যে, যদি কোন ব্যক্তি অবৈধরুপে উপপত্নী-প্রেমে আসক্ত হয়, তাহা হইলে তাহাকে রাজদ্বারে দণ্ডনীয় হইতে হইবে। দোষী ব্যক্তিকে বন্দী করিয়া তাহার বিচার আরম্ভ হয় । বিচারে দোষী সাব্যস্ত হইলে, রাজাঞ্জানুসারে ঐ রমণীর স্বামী মাসিয়া সৰ্ব্বজন সমক্ষে তাছার পত্নীর সতীত্বাপহারী উপপতিকে দ্বিখণ্ড করিয়া ফেলে ; কিন্তু তাছার মৃত্যুর ঠিক পূৰ্ব্ব-সময়ে প্রাণরক্ষার জন্ত তাহাকে একটা মাত্র অদৃষ্ট-পরীক্ষা করিতে দেওয়া হয়। এই কারণে ঐ দোষী ব্যক্তিকে তাহার জীবন-সংহুর্ত হইতে কএক হস্ত বাবধানে দাড় করাইয়া, ঐ ব্যক্তিকে পলাইতে আদেশ দেওয়া হয় । যদি ঐ দোষী ব্যক্তি কোন উপায়ে আপনার জীবন রক্ষা করিতে পারে, তাছা হইলে তাহার পুনৰ্জ্জীবন লাভ হইয়া থাকে। তাছার জার বিচার হইবে না। এতদ্ভিন্ন ঐ উপপতির প্রাণরক্ষার আরও ছুইটী উপায় জাছে,