জাবুল-ফজল [Soo J বাঙ্গালার যুদ্ধ কু-দিনের কাজ। অকবর জয়ী হইলেন। জয়ী হইয়া তিনি জয়-পতাকা উড়াইতে উড়াইভে শীঘ্রই ফতেপুর সিক্রীতে ফিরিয়া আসিলেন । যে সময়ে যাহা ভাল দেখায় সময় বুঝিয় তাহার মত নজর দেওয়া চাই। আবুল-ফজল কোরাণের বিজয় পরিচ্ছেদের টীকা লিথিয় রাখিয়াছিলেন । সম্রাট বাঙ্গালা ও বিহার জয় করিয়া আসিলে তাহার কছে সেই টাকাপুস্তক উপহার দিলেম । তখন মখদুম-উল-মস্ক এবং শেখ আবদুল্লবী প্রধান সভাসদ । ইহঁারা জুই জনেই সুন্নী। তাহারা ধৰ্ম্মেয় দোহাই দিয়া শিয়া সম্প্রদায়ের উপর এবং হিন্দুদের প্রতি সৰ্ব্বদাই অত্যাচার করিতেন । সেই সকল কথা আকবরের কানে উঠিল। আবুল-ফজল দেখিলেন, রাজ্যের উন্নতি এবং সমাজ সংস্কার করিতে হইলে তাহার এই সুযোগ । ইহাতে লোকের মঙ্গল এবং র্তাহার নিজের প্রতিপত্তি। তিনি আকবরেব সঙ্গে পরামর্শ করিয়া এই প্রস্তাব করিলেন যে, সম্রাট, রাজ্যের সকল বিষরের কর্তা । যাহা কিছু নুতন আইন করিতে হয়, সে সকল সম্রাট নিজে করিবেন। প্রজার সেই নিয়মানুসারে চলিলে তাহাদের ইহ জন্মেয় সুখ এবং পরকালের সদগতি । সভায় বাদানুবাদ পড়িয়া গেল,—সকলেই বিরোধী। চারি দিক হইতে আপত্তি উঠিল। আবুল-ফজল নাস্তিক কি হিন্দু, তাহার ঠিক নাই। যে প্রস্তাব করা হইরাছে, তাহা কোরাণের বিপরীত মত । কিন্তু বাদাকুবাদ করা বিফল, সুন্নী পক্ষয়। অবশেযে নিরস্ত হইল । মুবারিক স্বহস্তে প্রতিজ্ঞ পত্রখানি লিখিয়া নাম স্বাক্ষরিত করিলেন । র্যাহার বিরোধী ছিলেন, সে সকল লোককেও স্বাক্ষর করিতে হইল। এই নূতন নিয়মের উদ্দেশু মহৎ । শেষে ইহার দ্বারা বেশ ভাল ফল হইয়। দাড়াইল । মুবারিক জানিতেন, ঈশ্বরের চক্ষে হিন্দু মুসলমান সকলেই সমান । কিন্তু কোরাণের সে মত নয় । যে কোরাণ মানে না, সে কাফের। মুবারিক, কোরাণের সকল কথা মানিতেন না, ভাই লোকে জানিত তিনি নাস্তিক । আবুল-ফজল বালককাল হইতে পিতার কাছে যে পাঠ পাইয়াছিলেন, অকবরের কানে তিনি সেই মন্ত্ৰ পড়িয়া দিলেন । ভারতবর্ষের লোক সংথ্য অনেক । তাহাদের জাতি বিভিন্ন ধৰ্ম্ম বিভিন্ন ; বিভিন্ন বিশ্বাস । সকল কাজে আবুল-ফজল কোরাণ দেখিয়া চলিতে হইলে প্রজাদের কল্যাণ নাই। fচরকাল অন্ধ বিশ্বাসে চলিলে মানুষের উন্নতি হয় না । কোরাণের যেখানে ভ্রম আছে, সে স্থল পরিত্যাগ করা আবখ্যক । যাহাতে ভ্ৰম নাই, এমন বিষয় কোরাণে না থাকিলেও গ্রহণ করা উচিত। আবুল-ফজলের চির জীবনের এই মূল মন্ত্র। এই মূল মন্ত্রে তিনি আকবরকে দীক্ষিত করিয়াছিলেন । সম্রাট নূতন নিয়ম প্রচলিত করিলে তাহার ফল এই দাড়াইল,— পূৰ্ব্বে হিন্দু ও অন্ত অন্ত সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হইতেছিল, সে সকলের নিবারণ হইয়া গেল। সকল ধৰ্ম্মের এবং সকল সম্প্রদায়ের যোগী সন্ন্যাসীরা আসিয়া সভায় অাদর পাইতে লাগিলেন । এ দিকে দুষ্ট লোকদেরও ক্ষমভা দিন দিন কমিয়। আসিল । এই সমরে আকবরের সভা ফতেপুর সিাক্রতে । ফৈজী এবং আবুল-ফজল সেই খানেই থাকিতেন। সৰ্ব্ব প্রথমে ফৈজী, কুমার মুরাদকে পড়াইবার নিমিত্ত শিক্ষক নিযুক্ত হন । দুই বৎসর পরে আগ্রা, কাল্লি এবং কালিজরের সদর হইয়াছিলেন । ১৫৮৫ সালে আবুল-ফজল এক হাজার অশ্বারোলী সৈষ্ঠের মন্সব হইলেন । পর বৎসরে তাহাকে দিল্লির দেওয়ান কয় হইল। ১৫৮৯ সালের শেষে আবুল-ফজলের মাতার মৃত্যু হয় । এই সময়ে আকবরের প্রতিষ্ঠিত নুতন ধৰ্ম্ম চলিত হইয়া আসিয়াছে । সম্রাটকে কেহ কিছু বলিতে সাহস করিতেন না, কিন্তু সভাসদদের মধ্যে আবুল-ফজলের সকলেই শক্র । নিজে সলিম ও সুযোগ পাইলে শক্রতা করিতে ছাড়িতেন না । এক দিন সলিম হঠাৎ আবুলফজলের বাটতে গিয়া উপস্থিত হনু । আবুল-ফজল কোরাণের যে টীকা করিয়াছিলেন, চল্লিশজন লেখক বসিয়া তাহার নকল করিতেছেন। সলিম সমস্ত কাগজ পত্র সমেত সেই লেখকদিগকে সম্রাটের কাছে ডাকিয়৷ আনিলেন । তাহার পর কাগজ পত্র গুলি সন্মুখে ধরিয়৷ দিয়া বলিলেন,—“আবুল ফজলের শঠতা দেখুন ; তিনি আমাকে পড়াইবার সময়ে কোরাণ এক রূপ বুঝাইরা দেন, আবার বাটতে বসির। যে টকা লিখিতেছেন তাহা ঠিক বিপরীত । এই কথার আবুল-ফজলের সঙ্গে সম্রাটের দিন কতক একটু মনের অস্বরস ছিল। আকবর, আবুল-ফজল প্রভৃতি তখনকার প্রসিদ্ধ প্রসিদ্ধ লোকদিগকে ভাল ভাল সংস্কৃত এবং হিন্দী পুস্তক গুলি পারস্ত ভাষায় অমুবাদ কয়িতে নিযুক্ত
পাতা:বিশ্বকোষ দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।