পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নরক তুমি চিরকাল বঁচিতে ইচ্ছাকর তাহ হইলে তুমি ব্রাহ্মণ, মুনি ও দেবতাগণের সহিত কদাচ বিরুদ্ধাচরণ করিও না। এই নিয়মের অন্যথাচরণ* করিলে তোমার প্রাণনাশ হইবে।” নরককে এইরূপে উপদেশ দিয়া বিষ্ণু অন্তৰ্হিত হইলেন। নরক বিষ্ণু হইতে অভূতপূৰ্ব্ব ও শক্রগণের দুর্ভেদ্য এক রথ প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন। এই সময় রাজর্ষি জনক এই স্থানে আসিয়াছিলেন এবং ইহার যত্বে নিতান্ত প্রীত হইয়া কিছুদিন এইস্থানে অবস্থান করেন। নরক মনুষ্য-প্রথানুসারে অনেক দিন রাজত্ব করেন। পরে ত্রেতাযুগাবসানে বাণরাজার সহিত ইহার বিশেষ বন্ধুত্ব জন্মে। বাণ অসুর-ভাবে বিচরণ করিত, নরকও ইহার সংসর্গে ক্রমে অতি দুৰ্দ্দাস্ত হইয়া উঠিলেন ও দেবত ব্ৰাহ্মণদিগের প্রতি অত্যাচার করিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে একদা বশিষ্ঠদেব কামাখ্যাদেবীকে দর্শন করিতে আসেন, কিন্তু নরক তাহাকে পুরে প্রবেশ করিতে দেন নাই। তাহাতে বশিষ্ঠদেব কুপিত হইয় নরককে শাপ দেন, “তুমি অত্যন্ত গৰ্ব্বিত হইয়া এইরূপে ব্রাহ্মণের প্রতি অত্যাচার করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছ, এইজন্ত তুমি যাহার ঔরসে জন্মগ্রহণ করিয়াছ, তাহারই হস্তে অচিরাৎ তোমার মৃত্যু হইবে। তোমার মৃত্যুর পর কামাখ্য' দেবীকে পূজা করিব এবং যতদিন তুমি জীবিত থাকিবে, ততদিন কামাখ্যাদেবী পরিজনের সহিত এইস্থান হইতে প্রস্থান করিবেন। তখন নরক প্রাণসম বন্ধু বাণের শরণাপন্ন হইলেন, এবং বাণের উপদেশানুসারে ব্ৰহ্মার তপশ্চরণে প্রবৃত্ত হইলেন। ব্ৰহ্মা নরকের তপষ্ঠায় প্রীত হইয় তাহাকে বর লইবার জন্ত কছিলেন। নরক এই বর প্রার্থনা করিলেন, “আমি দেব, অঙ্কুর, রাক্ষস এবং সকল দেবযোনির যেন অবধ্য হই। জগতে যতদিন চন্দ্রস্বর্য থাকিবে, ততদিন আমার সন্তান সস্তুতি অবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করুক। তিলোত্তমার স্যায় রূপগুণসম্পন্ন। ১৬ হাজার স্ত্রী ও রাজ্যলক্ষ্মী যেন স্থির হইয়া থাকে। ব্ৰহ্মা এই সকল বরই প্রদান করিলেন। নরক এই রূপে বর প্রাপ্ত হইয়া হৃষ্টচিত্তে স্বস্থানে আগমন করিলেন। কালক্রমে নরকের ভগদত্ত, মহাশীর্ষ, মদবান ও সুমালী নামে চারিট পুত্র হইল। এই পুত্র সকলই প্রবল পরাক্রমশালী ও বীরগণের অজেয় হইয়া উঠিল। তখন নরক হয়গ্রীব, মুক্ত, স্থল, উপস্থদ প্রভৃতি প্রবল বলবিক্রমশালী অম্বর সকলকে দ্বাররক্ষা ও সেনাপতি প্রভৃতির কার্য্যে নিয়োজিত করিলেন। ক্রমে তিনি হয়গ্ৰীব প্রভৃত্তির সাহায্যে দেবরাজ ইন্দ্রকে পরাজয় করিলেন এবং নানারূপে পৃথিবীর পীড়া উৎপাদন করিতে লাগিলেন। ভগবান বিষ্ণু ক্ষিতির তারাবতরণের জন্ত কৃষ্ণরূপে জন্মগ্রহণ করিলেন। দেৰগণ রম্ভ ও তিলোত্তমার স্থায় রূপগুণ [ ৫৬৯ ] নরক সম্পন্না ১৬ হাজার স্ত্রী উৎপাদন করিলেন, তৎপরে সেই স্ত্রীগণ হিমালয়ে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতেছিল, নরক তাহাদিগকে হরণ করিয়া স্বপুরে আনয়ন করিলেন। নানাপ্রকারে নরক সকলকেই উৎপীড়ন করিতে লাগিলেন। তখন দেবগণের আদেশে শ্ৰীকৃষ্ণ প্রাগজ্যোতিষপুরে আগমন করেন এবং নরকের সহিত প্রবল যুদ্ধ করেন, পরে ভগবান বিষ্ণু স্বদর্শন চক্রদ্বারা নরকের মস্তক দ্বিখও করিয়া ফেলিলেন। তখন পৃথিবী ভার রহিত হইয়া সুস্থ হইলেন। পৃথিবী পুত্রের মৃত্যু জন্ত কিছুমাত্র শোকাতুর হইলেন না । ( কালিকাপু ৩৬৪০ অ” ) ( নরকাসুরের বৃত্তাস্ত হরিবংশে ১২•, ১২১, ১২২ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে । ) নরকের মৃত্যুর পর শ্ৰীকৃষ্ণ ইহার ধনাগারে যে ধনরত্নাদি দেখিয়াছিলেন, তাহা কুবেরের ধনাগারেও ছিলনা। কৃষ্ণ এই সমস্তই দ্বারকায় লইয়া গিয়াছিলেন। ২ পাপভোগস্থান, মৃত্যুর পর যে স্থানে যাইয়া পাপভোগ করিতে হয়, তাহাকে নরক কহে । নরকের ভয়ে অনেকে ছুষ্কৰ্ম্ম হইতে প্রতিনিবৃত্ত হয়। কি পুরাণ বা মম্বাদি সংহিতা সকল শাস্ত্রেই অল্প বিস্তর নরকের প্রসঙ্গ দেখিতে পাওয়া যায়। নরক বিষয়ে অনেক মতভেদ দৃষ্ট হয়। দর্শনশাস্ত্রবিদ পণ্ডিতগণ বলিয়া থাকেন, যেরূপ শুভাশুভ কাৰ্য্য করা যাইবে, ভবিষ্যতে তাহারই ফলভোগ করিতে হইবে, অর্থাৎ শুভকার্য্যেয় অনুষ্ঠান করিলে স্বর্গ এবং পাপ-ফলে নরক হইয়া থাকে। যখন আমাদের এই ঘাটুকোষিক দেহ ভক্ষ্মীভূত হইয়া যায়, তখন আমাদের স্বত্মশরীর আকাশস্থ ও বায়ুভূত হইয়া অবস্থান করে, এই সুক্ষ্মশরীরেই স্বর্গ বা নরক ভোগ হইয়া থাকে। এই সুগ্মশরীর এইরূপ উপাদানে গঠিত হয় যে, হয় ত জলন্ত অগ্নিতে দগ্ধ হইলেও যন্ত্রণ ভিন্ন আর কিছুই অনুভব হইবে না, এই জন্য এই অবস্থায় যন্ত্রণাময় শরীর কহে। এই সুক্ষ্মশরীরে স্বৰ্গ বা নরক ভোগ হইয়া থাকে। অধৰ্ম্মই একমাত্র নরকের হেতু বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। “অধৰ্ম্মে নরকাদীনাং হেতুর্নিনিীতকৰ্ম্মজঃ । প্রায়শ্চিত্তাদিনাহোছসে জীববৃত্তী ত্নিমে। গুণে ॥” ( ভাষাপরি ১৬১ ) চাৰ্ব্বাক প্রভৃতি নাস্তিকগণ স্বৰ্গনরকাদির অস্তিত্ব স্বীকার করেন না । “ন স্বর্গে নাপবর্গে বা নৈবাত্মা পারলৌকিকঃ " (চাৰ্ব্বাক ) র্তাহারা বলেন, এই দেহ ভস্ম হইলে তাহার পর স্বর্গ নরকদির ভোগ অসম্ভব। কারণ মৃত্যুর পর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এই সকল বিচার অনাবগুক, এইজন্য কেবল ΙΧ $89