পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবকৃষ্ণ . এক আদালত ছিল। সেখানে বোর্ডের একজন সদস্ত বিচারক থাকিতেন । এই আদালত হইতে ফৌজদারী নালিশের তদারক হইত। গোকুল সোণার অগত্য এই আদালতে নালিশ করিল। যে জষ্টি অফ দি পিসের নিকট গোকুল মালিশ করে, সেই ব্যক্তিই তখন জমীদারী আদালতের বিচারক ছিলেন। ২০শে তারিখে জষ্টিস্ ফ্লয়ারের নিকট | * দরখাস্ত দাখিল হয়। উহার অর্থ এইরূপ,—১লা ফাল্গুন নবকৃষ্ণের এক হরকর, রাম সোণার ও রাম বেণিয়ার সঙ্গে | গোকুল সোণারের বাড়া গিয়া ডাকে এবং বলপূর্বক তাহার অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া বলে যে তাহারা তাহার ভগ্নীকে | নবকৃষ্ণ মুন্সীর ভোগের জন্য লইয়া যাইতে র্তাহার নিকট হইতে | আদেশ পাইয়া আসিয়াছে। গোকুল সোণার তাহাদিগকে সাধ্যমত বাধা দেয় এবং কোম্পানীর দোহাই দিতে থাকে। নবকৃষ্ণের লোকেরা তাহ শুনিয়া তাহাকে ও তাহার । মাতাকে অতি কুৎসিত গালি দিতে দিতে তাহার মাতাকে ধরিয়া লইয়া নবকৃষ্ণের নিকট চলিয়া যায়। পরদিন রাম সোণার ও রামবেণে অার একজন হরকরা আসিয়া গোকুল সোণার ও তাহার ছোট ভাই কৃষ্ণসোণারকে ধরিয়া লইয়া নবকৃষ্ণের সম্মুখে উপস্থিত করে। নবকৃষ্ণ উভয়কে কালেক্টরের কাছারীতে বন্দী করিয়া রাখিতে আদেশ দেন। গোকুল সোণার ও কৃষ্ণসোণার জামীন দিতে চাহে, নবকৃষ্ণ তাহা গ্রাহ করিলেন না। নিজের বরকন্দাজ সঙ্গে দিয়া কাছারীতে পাঠাইয়া দিলেন । সেখানে ইহাদিগকে দুইদিন তিন রাত্রি তুড় মে বন্ধ হইয়া বন্দী থাকিতে হয়। নবকৃষ্ণ উহাদিগকে আহার দিতে বা স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে দিতে নিষেধ করিয়া দিয়াছিলেন । এই দুই দিনের মধ্যে রামসোণার লোক লইয়া গিয়া উহাদের ভগ্নীকে ধরিয়া আনিয়া দিল । নবকৃষ্ণ তাহাকে একদিন আটক রাখিয় তাহার সতীত্ব নষ্ট করেন। তাহার পর নবকৃষ্ণ বন্দীদ্বয়কে আনাইয়া গবর্ণরের বাড়ীর সম্মুখে কোম্পানীর হরকরার আড্ডায় পাঠাইয়া দেন ; ১৭ই মার্চ তারিখে ( ১১৬৪ বৈশাখ মাসে ) রাত্রি ১০টার সময় নবকৃষ্ণের ৫ জন পাইক ও একজন বরকন্দাজ আসিয়া গোকুলের কনিষ্ঠকে আবার ধরিয়া লইয়া যায়। মিঃ বোলটুস বলেন, “এই নালিশ হইল, কিন্তু ইংরাজের তখনকার আইন অনুসারে কোন বিচারই হইল না, নবকৃষ্ণের নামে ওয়ারেন্ট হওয়া বা তাহার জামীন লওয়া অথবা পরবর্তী সেশনে এ বিষয়ের কোন উচ্চ বাচ্য না হওয়ায় গোকুল সোণার জষ্টিস্ ফ্লয়ারের সহিত দেখা করিল, কিন্তু ফ্লয়ার তাহাকে সেশন কোর্টের নাম করিতে শুনিয়াই চাবুক মারিবার ভয় দেখান । • [ ৬২৩ } - - - _ নবকৃষ্ণ গোকুল তাহার পর জমীদারী আদালতে পুনঃ পুনঃ দরখাস্ত করিয়াও আর এ বিষয়ের কোনই প্রতিকার করাইতে পারে নাই ।” মিঃ বোলটুস আরও একটা গুরুতর অভিযোগের কথা তাহার পুস্তকে উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, এস্থলে তাহারও একটু উল্লেখ করা আবশ্যক । রামনাথ দাস নামে তৎকালে কলিকাতায় একজন বণিক ছিলেন, এ ব্যক্তি কিছুদিন পূৰ্ব্বে কাউন্সিলের সদস্ত মিঃ জর্জ গ্রের বেণিয়ানও ছিলেন। মিঃ বোলটুস বলেন, এই গ্রে সাহেব মালদহের কুঠির অধ্যক্ষ ছিলেন, কিন্তু ইহার সহিত গবর্ণর ভেরেলেষ্টের বিবাদ হয়। ১৭৬৫ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে এই রামনাথ দাসকে সিলেক্ট কমিটী হঠাৎ কারাবদ্ধ করেন। কমিটী বলেন, মালদহে ইনি যথেষ্ট অত্যাচার করিয়াছিলেন, কিন্তু কেহ কেহ বলেন যে, গ্রে সাহেবের বিপক্ষে সাক্ষাগ্রহণ করাই ইহার উদ্দেশু। যাহা হউক, কিছুদিন বন্দিত্বের পর রামনাথ মুক্তি পান । এই রামনাথ গবর্ণর ও কাউন্সিলের নিকট ১৭৬৭ খৃষ্টাব্দের ১০ই এপ্রেল তারিখে এক দরখাস্ত করেন । রামনাথ দরখাস্তে বলেন, যে যখন তিনি বন্দী ছিলেন, তখন নবকৃষ্ণ মুন্সী অন্যায়পুৰ্ব্বক তাহার নিকটে ৩৬ হাজার টাকা আদায় করিয়াছেন। নবকৃষ্ণ বন্দী দশীয় রামনাথকে দেখিতে যাইতেন এবং সময় সময় নানা প্রতারণা করিয়া প্রলোভন দেখাইয়া অগ্রহায়ণ মাসে ২৪২০০ টাকা দামের একটা আঙ্গুটী, পৌষ মাসে ৫০ থান মোহর, চৈত্র মাসে ৪০০ থান মোহর ও ভাদ্রমাসে ৫০০ থান মোহর নিজে গ্রহণ করেন, এবং ২ হাজার টাকা দামের এক জোড়া বুটদার শাল আপনার লোককে পুরস্কার দেওয়ান। নবকৃষ্ণ বলেন, তিনি রামনাথকে শীঘ্র মুক্তি দেওয়াইবেন এবং আবার মালদহের দেওয়ানী দিয়া পাঠাইবেন । বোলট্স্ বলেন, এই দরখাস্ত পাইয়া ভেরেলেষ্ট ১৫ই এপ্রেল তারিখে রামনাথকে ডাকাইয়া নানাবিধ প্রশ্ন করিয়া তাহাকে সুবিচারের আশ্বাস দিয়া বিদায় দেন, কিন্তু রামনাথ গবর্ণরের গৃহ হইতে দালানে পড়িবামাত্র সন্তোষ ও দীনমহম্মদ একদল বলুকধারী সিপাহী লইয়া তাহাকে বিরিয়া ফেলে ও পার্থীতে উঠিতে নিষেধ করে। অবশেষে তাহাকে বন্দী করিয়া মুরশিদাবাদে পাঠান হয়। এখান হইতে রামনাথ দাস বোলটুসকে ১৭ মাস বন্দিত্বের পর একপত্র লেখেন, তাহাতে তিনি বলেন যে, মহম্মদ রেজার্থ তাহার নিকট ভেরেলেষ্টের লবণের মূল্য, নৌকা ও কুলি খরচ ইত্যাদি হিসাবে ৬০ হাক্কার টাক দাবী করিয়াছেন এবং দিতে না পারায় চাবুক মারিতে বলেন। তালুর পর তিনি ইংরাজ কমিটির অনুরোধে মালদহের