পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৬৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাগপূজা . দেখিলে তাহার অন্ত দিক্ দিয়া চলিয়া যায়। আধুনিক ইংরাজী ভাষাজ্ঞ হিন্দু যুবকগণ প্রাচীন প্রণালী অতিক্রম করিয়া অনেকে সপের প্রাণ নিধন করিতেছেন, সত্য বটে ; কিন্তু পুরাকালে হিন্দুরা কখন সপের প্রাণসংহার করিতেন না। একদা এক গৃহস্থের বাটতে ছুইজন অতিথি উপস্থিত হইয়াছিলেন। গৃহস্বামী শ্রাবকবেণিয়া বাজারে বহির্গত হইলে, তাহার পত্নী জল আনিবার জন্ত জলাশয়ে গমন করে । যখন অতিথিস্বয় গৃহস্বামীর অপেক্ষায় বসিয়া আছেন, তখন এক বৃহদাকার ভীষণদর্শন সৰ্প তাহাদের সম্মুখে উপস্থিত হইল। ইহা দেখিয়াই তাহাদের মধ্যে একজন যষ্টিদ্বারা সৰ্পের মধ্যদেশ মাটির উপর চাপিয়া ধরিল ; দ্বিতীয় ব্যক্তি নিকটস্থ আর একখানি লাঠি লইয়া তাহার প্রাণসংহারে উদ্যত হইলে, শ্রাবকবেণিয়ার স্ত্রী পশ্চাৎ হইতে শশব্যস্তে বলিলেন, “মহাশয় । ক্ষান্ত হউন, ক্ষাস্ত হউন, উহার প্রাণবধ করিবেন না । ইনি আমাদিগের পূৰ্ব্বজ-দেব। ইনি আমার শ্বশ্র ঠাকুরাণীর মস্তকোপরি যাইয়া তাহার সর্বশরীর কম্পমান করেন এবং তদনন্তর আমার শ্বশুর মহাশরের নাম করিয়া বলেন যে, তিনিই দেহ ত্যাগ করিয়া সপদেহ অবলম্বন করিয়াছেন। একদিন ইনি আমাদিগের এক প্রতিবেশীকে দংশন করেন। পরে যখন তাহার চিকিৎসার জন্ত যতি আসিল, পূৰ্ব্বজ-দেব প্রতিবেশীর শরীর কঁপাইয়া বলিল, “আমার পুত্রের সহিত বিবাদ করিয়াছে বলিয়। আমি উহাকে দংশন করিয়াছি । আর কখনও তাহার সহিত কলহ করিবেন, স্বীকার করিলে আমি উহাকে পরিত্যাগ করিব।” এই অবধি উক্ত অজগর কাহারও ঘরে প্রবেশ করিলে, কেহ উহার প্রতি নিষ্ট র ব্যবহার করেন না। কয়েকদিন হইল আমরা উহাকে প্রায় ১০ ক্রোশ দূরে ছাড়িয়া দিয়া আসিয়াছিলাম। কিন্তু কি চমৎকার, সেই ১০ ক্রোশ হইতে অনায়াসে আবার ফিরিয়া আসিয়াছে। অনেকবার আমি ঘটনাক্রমে উহার অঙ্গে পা দিয়াছি, কিন্তু কোনদিন আমাকে কিছু বলে নাই এবং শিশুসন্তানকে রাখিয়া জল আনিতে গেলে, তাহার সহিত খেলা করিয়া তাহার কান্না থামায়।’ এই কথা শুনিয়া অতিথিদ্বয় সর্পকে ছাড়িয়া দিলেন এবং বিনীতভাবে তাছার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। কিছুদিন পরে একটা বিড়াল ঐ সৰ্পের জীবন নষ্ট করে । গৃহস্বামী ইহার মৃতদেহ অগ্নিতে দগ্ধ করে এবং চিতানল মধ্যে চমানকাষ্ঠ, নারিকেল ও ঘৃত নিক্ষেপ করে। এরূপ প্রথা অস্থাপি অনেকস্থলে প্রচলিত অাছে। t ses i

  • Balfour's Cyclopædia of India, Wol. III. (Serpentworship) oftos t

নাগপূজা প্রচলিত ছিল না, সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে এরূপ স্থান অতি অল্প। লমস্ত এলিয়ার মধ্যে কেবলমাত্র চীনে কোন কোন স্থানে এই পূজা ছিল মা। এতদ্ব্যতীত আফ্রিকা, কালদীয়, পালেস্তিনবাবিলন,পারস্ত, কাশ্মীর,কাৰোজ,তিতে,ভারতবর্ষ, লঙ্কাদ্বীপ প্রভৃতি সৰ্ব্বস্বলে এবং য়ুরোপের অন্তঃপাতী অনেক জায়গায়, এমন কি আমেরিকার মধ্যেও কোন কোন স্থানে নাগপূজার রীতি ছিল এরূপ স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। রাজপুতের সর্পদেবতার প্রতিমূৰ্ত্তি অৰ্দ্ধেক মনুষধকারে নিৰ্ম্মাণ করে। দিওদোরস স্কিীয় ( শক) জাতির সপজননীর আকৃতিও এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। হিন্দুদিগের মতে, মনসাদেৰী নাগমাতা। তাহার ভ্রাতা অনন্তনাগ সপদিগের রাজা । ‘অনন্ত’ অর্থাৎ সীমারহিত । সর্পের গোলাকার অবস্থায় অবস্থিতি হইতেই উক্ত নামের উৎপত্তি। যদিও এরূপ উল্লেখ আছে যে, ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণুকে অনন্ত নাগ অতলস্পর্শ সাগর মাঝে আশ্রয় দিয়াছিলেন, তথাপি পুরাণে ইহাও উক্ত আছে যে, অনন্তনাগই স্বয়ং বিষ্ণু অর্থাৎ সেই অনাদি মহাপুরুষ বিষ্ণুর অন্ত নাম ‘অনন্ত । যেরূপ হিন্দুদিগের মধ্যে স্বর্যের পুত্র অশ্বিনীকুমারদ্বয় দেববৈদ্য বলিয়া প্রসিদ্ধ, তদ্রুপ গ্রীক ও রোমকদিগের মধ্যে এসকুলাপিয়াস (Esculapius) দেববৈদ্য নামে খ্যাত। ইহার হস্তের দণ্ড দুইটী সপদ্বারা বেষ্টিত। ফিনিকীয়দিগের নাগদেবতার নাম এসমন্‌, মিশরবাসীদের হার্মিস (Hermes), কালদীয়দিগের ওব, বাবিলনে বেল, ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে নাগদেব বিভিন্ন নামে অভিহিত । লঙ্কাদ্বীপ ও গুজরাতবাসিগণ অৰ্চনা করিবার মানসে এবং ইঙ্কুর বিনাশের উদ্দেঙ্গে বাড়ীতে সৰ্প ধরিয়া রাখে । গুজরাতবাসীর কেহই সাপ মারেন, কিন্তু সময় সময় সর্প ধরিয়া নগরের বহির্ভাগে ছাড়িয়া দিয়া আইসে। সিংহলে পোকা মারিবার জন্যও সর্প রাখা হয়। অতি প্রাচীনকাল হইতে আলেকসান্দরের সময় পৰ্য্যন্ত টায়রে সপের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শিত হইয়াছে। যদিও বর্তমান সময়ে তথায় নাগপূজা রহিত হইয়াছে, তথাপি ওফাইটু (Ophites), নিকোলেটান (Nicoletans) এবং মষ্টিক (Gnostics) নামে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নাগপূজা প্রচলিত। ওফাইটগণ সর্পকে নীগুখুষ্ট অপেক্ষ অধিক ভক্তি করিত। তাহার বাক্সের মধ্যে একটী । সজীব সর্প ধরিয়া রাথিত এবং তাহাকেই ঈশ্বর বলিয়া মানিত। পোলগুদেশে উনবিংশতি শতাব্দীর শেষ পর্যন্তও নাগপূজা হইত। সমস্ত জাতিই যে, সপের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভক্তি কল্পিত, তাছা নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি হইতে