মুসলমান হাঙ্গামা করিয়াছিল। অবশেষে ইংরাজশাসনে ইহার দণ্ড হয়। ১৮৬০ খৃষ্ঠাঝে দাছুমাঞার মৃত্যু ঘটে। হিন্দু-দেশাচারসমূহের পালন, হিন্দু উৎসবে যোগদান, ছলেন ও হাসেনের উদ্দেশে তাজিয়া-নিৰ্ম্মাণ, পীর ও প্যাগম্বরদিগের উদ্দেশে ভজন এবং শুক্রবারে উপাসন। প্রভৃতি নিষেধ করিয়া হাজি সরিয়াৎ স্বীয় মত প্রবন্ধন করেন । হিন্দুধন্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই এই মুসলমানসম্প্রদায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য। পাটনার ওহাবা-মতের অনুসরণ করিয়া জোনপুররাসী মৌলানা করামত আলী পুৰ্ব্ববর্তী প্রচারকদিগের মতবিস্তারে যত্নশীল হন। পরে তিনি হাদী-মত উপেক্ষ করিয়া হানিফি-সম্প্রদায়ের প্রতিপোষক হইয়াছিলেন । তিনি দাদুমঞার অদৃষ্ট লক্ষ্য করিয়া ইংরাজাধীন ভারতকে আর “দারুলহার্ব” বলিয়। ঘোষণা করিলেন না । তিনি হিন্দুদিগের কুসংস্কারসমুহ পালন করিতে এবং শবিবরাৎ দিমে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে “শিরনি” দান ও তাঞ্জিয়া-নিৰ্ম্মাণ নিষেধ করিয়া যান। শুক্রবারে উপাসনা এবং পীরগণের সমাধিস্থানে উপহারদান প্রভৃতি কএকটী পুৰ্ব্বতন ব্যবস্থা পুনরায় র্তাহার দ্বার। ওহাবী-সমাজে প্রচলিত হয় । ১৮৭৪ খৃষ্টাব্দে করামৎ আলীর মৃত্যুর পর, তৎপুত্ৰ হাফিজ আহ্মদ বিশেষ দক্ষতার সহিত পুৰ্ব্ব ও উত্তরবঙ্গে ওছাধী মত প্রচার করেন। এই সম্প্রদায়ের অন্তান্ত প্রচারকের মধ্যে হুগলী জেলার ফুরফুর গ্রামবাস্ট্র শাহ আবুবকর এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় বনে ধিয়া গ্রামের হজরতের নাম উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত দুইটী অভিনব ধৰ্ম্মসম্প্রদায় ফরাঙ্গী, নমাজহাফিজ, হিদায়তা, সারা প্রভূতি নামে নিম্নশ্রেণীর মুসলমানসমাজে পরিচিত। ইহাস। পুৰ্ব্বমতামুব কী মুসলমানসম্প্রদায়কে সাবিকি, বেরাবি, বেদৈয়তা বা বেসার বলিয়া থাকে । দাদুমাঞার সম্প্রদায়ই প্রকৃত ফরাজী বলিয়া উক্ত । ইহাদের মধ্যে মহম্মদী, তাহল-ই হার্দী বা রফিয়ার্দীন ও লা-মজ হাবী প্রভৃতি বিভাগ আছে। পক্ষাস্তরে করামত আলীর শিষ্য ও উত্তরাধিকারিগণ তায়ৈয়ুন্নী নামে খ্যাত। দাদুমৗঞার মৃত্যুর পর, করামত আলী-প্রবৰ্ত্তিত ধৰ্ম্মমত পূৰ্ব্বৰঙ্গের নিম্নশ্রেণী কৃষিজীবী জনসাধারণের মধ্যে গৃহীত হয় । দাদুমীএার পুত্র সেজউদ্দীন খ' বাহাদুর ফরিদপুরৰাগী কৃষক ও জোলাহাদিগের উপর আধিপত্য বিস্তার করিলেও করামত আলীর শিষ্যসম্প্রদায়ে, পুৰ্ব্ব ও দক্ষিণবঙ্গ পরিপূর্ণ হইয়াছে। উক্ত সম্প্রদায়দ্বয়ের মতানৈক্যহেতু সময় সময় মহরম পৰ্ব্ব উপলক্ষে উভয়পক্ষে ঘোরতর দাঙ্গাহাঙ্গামা উপস্থিত হইল্প থাকে । XV [ ২৬১ ] t{ు মুসলমান এই ওহাবী-সম্প্রদায়ের অভু্যখানে পুকো, পূৰ্ব্ব ও উত্তরবঙ্গবাসী নিম্নশ্রেণীর মুসলমানগণ সম্পূর্ণরূপে হিন্দুভাবাপন্ন ছিল । তাহারা দুর্গাপূজা ও বিভিন্ন হিন্দু-উৎসবে যোগদান করিত। কলের বসন্ত প্রভৃতি পীড়ার প্রকোপসময়ে শীতল ও রক্ষাকালীর পূজা এবং সমম্বাস্তরে ধৰ্ম্মরাজ, মনসা ও বিষহরির পুজা তাহারা অবিচলিতচিত্তে সম্পন্ন কল্পিত । অন্যাপ্ত সামাজিক ব্যবহারেও মুসলনানদিগের মধ্যে হিন্দু-দেশাচার প্রচলিত ছিল । বিবাছাদি শুভকৰ্ম্মে লগ্ননির্ণয়, বিবাহকালে সীমস্তে সিলুরদান, বৈদ্যনাথ তীর্থে গঙ্গোদকপ্রদান, গ্রাম্যদেবতার পুঞ্জ। এবং জন্মকালে যষ্ঠপুঞ্জ। প্রভৃতি দেশাচারও তাহাদের মধ্যে অমুষ্ঠিত হইতে দেখা যায়। হিন্দুর দ্যায় কুসংস্কারাবদ্ধ হইলেও বঙ্গীয় মুসলমান-সম্প্রদায় মোল্লা অথবা পরদিগের কথিত ধৰ্ম্মতত্ত্বকথা প্রতিপালন করিতে ভুলে না। আবদুলকাদের জিলানী, আবু ইসহাক শামী (চিস্তিবাসী ), মহিউদ্দীন নক্স বন্দ ও আবদুল কাদের সোহারবর্দি নামক পীরচতুষ্টর মুসলমানমাজেরই পুজাই । ওহাবী-সম্প্রদtয় ব্যতীত সকলশ্রেণীর মুসলমানই পীরগণের সম্মান করিয়া থাকে। মুসলমান সাধারণের বিশ্বাস, পবিত্র পীরগণ দেহান্তরিত হইলেও, তাহীদের প্রেতীয় মক বা মদিনায় থাকিয়া প্রাত্যহিক ভজনা সমাপন করেন । তাহার সুশ্নশরীরে জগতে থাকিয়াই জীবগণের মঙ্গলকামনা করিয়া থাকেন। এই হেতু তাছাদের সমাধিক্ষেত্র তীর্থস্বরূপ, বিবেচিত হইয় থাকে । সাধারণ লোককে পীরের নিকট পুঞ্জসন্তানাদি কামনা করিয়া পুজাও দিতে দেখা যায়। শিক্ষিত মুসলমানসমাজে এই বিশ্বাস অনেকাংশে হ্রাস হইয়া পড়িয়াছে। ভারতীয় পার বা মুসলমান মহাপুরুষগণের মধ্যে হজরত মুছন উদ্ধান্ চিন্তি সৰ্ব্বপ্রধান । ১১৪- খৃষ্টাব্দে পারস্তরাজ্যে ইহার জন্ম হয়। ভারতে আসিয়া ১২৩৪ খৃষ্টাব্দে আজমীর নগরে অবস্থানকালে ইনি পরলোকগমন করেন। ভারতের স্বদুর প্রান্তৰাসী হিন্দু ও মুসলমান-সাধারণ এই মুসলমানতৗথ সন্দর্শনে আগমন করিয়া থাকেন। স্বয়ং টিকারীরাজ রণবাহাদুর সিংহ প্রতিবৎসর এখানে আসিয়া উপহারাদ প্রদান করিয়া গিয়াছেন । এতদ্ভিল্ল বাঙ্গালার নানাস্থানে আরও অনেকানেক পীরের আস্তান বা দরগা আছে । তন্মধ্যে কএকটর মাত্র নাম উল্লেখ করা গেল ; এই সকল পীরগণের সম্বন্ধে নান৷ অমামুষিক গল্প রচিত হইয়াছে । ১ মাচণ্ডালি সাইফ-২৪ পরগণার গঙ্গালাগর-সঙ্গম তীর্থের নিকট ।
পাতা:বিশ্বকোষ পঞ্চদশ খণ্ড.djvu/২৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।