অঙ্গামী অক্ষণী সপনামে প্রসিদ্ধ হইল কেন, এ কথার অর্থ আমাদের বুদ্ধিতে আসে না। অঙ্গামীনাগার বলে, পৃথিবী আগে বড় মুখের স্থান ছিল। তখন এত লোক ছিল না, পরস্পর এত বিবাদ বিষম্বাদ ঘটিত না। একটী দেবতা, এক জন মানুষ, তাহার পত্নী, আর একটা বাঘ, এই চারিজন একত্র বাস করিত। কালক্রমে সেই দম্পতীর দুইটা সস্তান জন্মে। তাহারাও ভাই ভাইয়ে বেশ মেহমমতা করিত। মানুষ চিরকাল বাচেন ; দিন ফুরাইল স্ত্রীলোকটী মরিয়া গেল। মৃত দেহ দেখিয়া বাঘের আল্লাদ আর ধরে না, সে হৃদয়ের উপর গিয়া শোণিত খাইতে বসিল। জগতে হিংসা ছিল না, আজি হইতে হিংসা আসিল আজি হইতে মুখের সংসার ভাঙ্গিয়া গেল। পরে তুই ভাইয়েও বিবাদ করিয়া এক জন চক্ষুবনের দিকে চলিয়া গেলেন, আর এক জন চেমু জঙ্গলের দিকে আসিয়া আশ্রয় লইলেন। সেই জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সন্তানেরা এখনও গৌরবর্ণ আছে, কিন্তু কনিষ্ঠের পুত্রেরা কৃষ্ণবর্ণ হইয়া গিয়াছে। আর একটা গল্প। গল্প একটু অদ্ভুত কথা দিয়া সাজানো না থাকিলে ভাল লাগে না। তাই, সে গল্পটাও চিত্র করা। নাগরা বলে, একবার একটা ভেলা জল দিয়া ভাসিতে তালিতে পৰ্ব্বতের নিয়ে নদীতটে আসিয়া লাগিল। ভেলায় কেবল একটা শাদা কুকুর আর এক জন রূপবর্তী বালিকা,--অন্ত আরোহী কেহ ছিল না । এখনকার গৌরবর্ণ নাগার তাহাদেরই সন্তানসন্ততি। স্থল কথা, নাগাদের পূর্ব ইতিহাস কিছুই নাই, তাই এত গল্পের ঘটা । [ নাগা দেখ ] । অধিক দিনের কথা নয়, প্রায় তিন শত বৎসর হইল, জৈন্তপুরেয় মহারাজের সহোদর তাহার ভাইকীকে লইয়া দিমাপুরে পলাইয়া যায়। তখন দিমাপুর কাচারের রাজ ধানী। রাজা সেই দুষ্টকে আশ্রয় দিয়া রাখিলেন । দুই দিন যায় , পাচ দিন যায়, এইরূপে কষ্টের এক এক দিন এক এক বৎসর হইয়া আসিতেছে আর যাইতেছে। পাপের মনে সুখ নাই; তখনি ভয়, তখনি ভরসা; তথনি আবার সহস্ৰ বিছার জালায় পুড়িতেছে। দুষ্ট, মনে যে শঙ্কণ করিয়াছিল শেষে তাহাই ঘটিল । জৈন্তরাজের সেনাগণ তাহাকে ধরিতে আসিল। তজ্জন্ত সে পুনৰ্ব্বার ভাইরীকে লইয়া নিকটবর্তি পৰ্ব্বতের উপর গিয়া লুকাইল। কাচারের লোকের বলে, অঙ্গামী নাগার। তাছাkएब्रहे गडाननद्धछि -- er অধিক গ্রীষ্ম নাই, অধিক শীতও নাই। তজ্জন্তু সেখানকার বড় সুখের জল বায়ু । পীড়ার গল্প এপ্রদেশ হইতে গিয়৷ থাকিবে, কিন্তু সেখানে পীড়া নাই—লোকে স্বাস্থ্যের চিরস্বচ্ছন্দত ভোগ করে। ভূমি শস্তে ভরা ; লক্ষ্মীদেবী যেন বার মাস এক ঠাই বসিয়া হাসিতেছেন । নানা জাতীয় ধান, মটর, ভুট্টা, গম, কুনী, লঙ্কা, আলু, রসুন, পিয়াজ, আদা, লাউ, কুমুড়া প্রভৃতি দ্রব্য গুলি সেখানকার প্রধান ফসল । - নাগারা পৰ্ব্বতের উচ্চ প্রদেশে ঘর বাধিয়া বাস করে। এক স্থানের লোকে অন্ত স্থানের লোকের সঙ্গে সহসা মিশিতে চায় না, তাই ইহাদের মধ্যে সম্প্রদায় অনেক। তন্মধ্যে বলে, বুদ্ধিতে এবং সভ্যতায় অঙ্গামীরাই শ্রেষ্ঠ। ইহাদের মধ্যেও আবার দুইট শ্রেণী আছে, পশ্চিম অঙ্গামী ও পূৰ্ব্ব অঙ্গামী। পাহাড়ী লোক প্রায় খৰ্ব্ব হয়, কিন্তু অঙ্গামীদের শরীরের গঠন বেশ পরিমিত । গায়ের রঙ ঠিক দুধে আলতার মত না হউক, কিন্তু কুৎসিত নয়। মাটো মাটো পরিষ্কার বর্ণে শ্ৰী আছে। স্ত্রীলোকের রূপবর্তী। মুখে সৰ্ব্বদাই একটু হাসি লাগিয়া আছে। তবে বনের মহিলাই ত,—তেমন বসন ভূষণ নাই,দেহের তত পারিপাট্যও নাই; সুত্র আর কত হইবে? যা হউক, তবু তাহারা যত্নে মুন্দরী নয়। বিশেষতঃ স্ত্রী-অঙ্গের যাহা প্রধান সৌন্দর্য্য— পতিপরায়ণতা— অঙ্গামী-রমণীকুলে তাহার গৰ্ব্ব সকল জাতির চেয়ে বেশী । নাগাজাতি বিলক্ষণ সাহসী, রণনিপুণ, সচ্চরিত্র এবং সত্যবাদী। দোষের মধ্যে, তাহারা পরস্পর সর্বদাই বিবাদ করে। বিবাদের সময় কাহারও অব্যাহতি লাই। শত্রুরা বালক, বৃদ্ধ ও স্ত্রীলোকদিগকেও নষ্ট করিয়া থাকে । কোন ব্যক্তির সঙ্গে অস্বরস ঘটিলে চিরকাল তাহ মনে করিয়া রাখে । সুবিধা পাইলে তৎক্ষণাৎ তাহার উচিত শাস্তি দেয়। নাগাদের ধারণা যে, শত্র মারিতে পারিলে ইহকালে পৌরুষ ও পরকালে সদগতি হয়। তাই কথায় কথায় তাহার অন্ত চুকাইয়া বসে সমস্ত নাগাজাতির লোক সংখ্যা ৩০০,০০০ তিনলক্ষেরও অধিক হইবে। তন্মধ্যে অঙ্গামীদের সংখ্যা প্রায় ৩০,০? • ত্ৰিশ হাজার। ইছাদের ৪৬ খানি গ্রাম আছে । অঙ্গামীদের এক একটী গৃহস্থের বাড়ী এক একটা কেরার মত। পৰ্ব্বত্তের গারে, যেখানে পথ অপ্রশস্ত, দুই ধারে পাহাড়, কেবল এক জন লোক কোন রকমে কষ্টে স্বাক্ট যাইতে পায়ে, ইহাদের ঘর সেই কুৰ্গম গিরিসঙ্কটে।
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/১০২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।