অতিসার [ ১৫৩ ] অতিসার চারিধার রক্তবর্ণ। কোন কোন স্থলে রোগীর কম্প কিম্ব। জরবোধ হয় না। তাহার পর উদরের ভিতর কামড়াইতে থাকে এবং মধ্যে মধ্যে সমস্ত পেট মোচড়াইয়া উঠে। মলদ্বারে অল্প জালা ও বেগ বোধ হয় । রোগী মলত্যাগ করিতে যায়, অধিক মল নির্গত হয় না । পেটেই বেদন ও বেগ ভাবিয়া দেখিলে বোধ হয় যেন গন্ধমাদন বাহির হইবে । কিন্তু বস্তুকর্তৃক অনেকস্থলে কিছুই মলনিঃসরণ হয় না । অনেক ক্ষণ বেগের পর কিঞ্চিৎ আম ও রক্ত নির্গত হইয়া আসে। রোগী তখন আপনাকে কিছু সুস্থ বোধ করে । কিন্তু ক্ষণকালের মধ্যেই আবার বেগ বৃদ্ধি হয় ও পেট বেদনা করিতে থাকে। কোথাও বিরেচনের সঙ্গে প্রথম প্রথম মল মিশ্রিত থাকে । তাহার পর কথন অল্প মল থাকে, কথন মলের সম্পর্কমাত্রও থাকে না, কেবল শ্লেষ্মা ও রক্ত নির্গত হয় । কোথাও কাটা পাঠার মত কেবল টাটুকী রক্ত বাহির হইয়া আসে। প্রবল পীড়ায়, সৰ্ব্বাঙ্গ উষ্ণ, নাড়ী বেগবতী ; মুখমণ্ডল মলিন ও অত্যন্ত গ্লানিযুক্ত। সরলান্ত্রে অত্যন্ত প্রদাহ হইলে রোগী প্রস্রাব করিতে পারে না, অনেক কষ্টে কেবল দুই এক বিন্দু মূত্র নির্গত হয়। এই অবস্থায় রোগের শাস্তি না হইলে ক্রমে দিবা রাত্রির মধ্যে ৫০ । ৬০ বার মল নির্গত হইতে থাকে। রোগী একবার মলত্যাগ করিতে বসিলে সেখান হইতে উঠিতে চায় না। উদরের বেদন এবং অতিশয় বেগের জন্ত সৰ্ব্বদাই ব্যাকুল হইয়া থাকে। পরে উদর অল্প বা অধিক স্ফীত হয়, সরলান্ত্রে ক্ষত জন্মে ; সে কারণ উদর হইতে গলিত পদার্থও বাহির হইয় আসে। ক্রমে নাড়ী ক্ষীণ, মুথে ক্ষত, হস্তপদাদি শীতল, সৰ্ব্বাঙ্গে পচা দুর্গন্ধ, প্রলাপ প্রভৃতি উপসর্গের পর রোগীর মৃত্যু হয়। কোন কোন স্থলে অন্তঃকাল পৰ্য্যন্ত জ্ঞানের কিছুই বৈলক্ষণ্য হয় না। এমন দেখা গিয়াছে, সমস্ত ইন্দ্রিয় অবশ হইয়াছে, প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়। আসিয়াছে, কেবল জীবাত্মা বাহির হইলেই হয়, তখনও রোগী সজ্ঞানে কথা কহিতে থাকে, বাক্যের কিছুমাত্র জড়ত হয় না । তাই প্রবাদ আছে যে, ইষ্টদেবতার নাম করিতে করিতে সজ্ঞানে মৃত্যু হইবে বলিয়া পুৰ্ব্বকালের ঋষিরা অতিসার রোগ কামনা করিয়া লইয়াছিলেন। এখন একটী বিশেষ সতর্কতা আবশ্যক। রক্তামাশয়কে সামান্য ব্যাধি বলিয়া আমাদের দেশের অনেকেই প্রথমে নিশ্চিন্তু থাকেন। পীড়া উৎকট হইয়া না দাড়াইলে
- F
টােটুকা ঔষধই প্রায় অনেকের ভরসা । বাঙ্গালায় অনেক প্রকার অবধৌত মতের ঔষধ এবং টোটক৷ ঔষধ সেবন করিলে নানা প্রকার কঠিন রোগ নিবারণ হয়, তাহা অনেকেই জানেন । কিন্তু তথাপি অজ্ঞলোকের হাতে প্রাণ সমৰ্পণ করা কর্তব্য নয়। বিশেষতঃ, রক্তামাশয় উপস্থিত হইলে যকৃতের কোন না কোন একটা পীড়া ঘটিবার সম্ভাবনা । তজ্জন্ত প্রথম হইতেই সুচিকিৎসকের হস্তে চিকিৎসার ভার অর্পণ করিবে । চিকিৎসা—অবধৌত ও টোটকা মতের—সামান্ত প্রকার রক্তাতিসার অনেক সহজ উপায়ে নিবারণ হয় । বুড়ীগোপানের পাতা খুখুর সঙ্গে দুই হাতের তলে অনেক ক্ষণ মর্দন করিলে তিন ঘণ্টার ভিতরে সামান্ত রক্তামাশয়ের বেগ ও রক্ত বন্ধ হইয়া যায়। আয়াপানের পাতার রস সেবন করিলে সহজ রক্তামাশয় নিবারণ হয়। কলিকাতার দক্ষিণে বোড়ালের রক্তামাশয়ের ঔষধ অনেকেই জ্ঞাত আছেন । শুঠ, জোয়ান, জীরে, জায়ফল, কাচড়াঘাসের মূল এবং কুড়চিছালের কাথই রক্তাতিসারের প্রধান ঔষধ। অন্য মসলাগুলি কোনই কাজের নহে। তবে, কুড়চির ছাল কষায় ও কটু । কোন আগ্নেয় মসলার সঙ্গে সেবন না করিলে পেট কষিয়া ধরিতে পারে, তাই শুঠ প্রভৃতি মসলা গুলি উহার সঙ্গে মিশ্রিত করা আবখ্যক । জোয়ান ১৩৷৷ রতি, জীরা ৬ রতি, শুঠ ৩। রতি, জায়ফল ১।৩। রতি, কাচড়া ঘাসের মূল ১। রতি। ইহাতে একটা পুরিয়া করিবে। পরে দেড় সের কুড়চির ছাল এক সের জলে সিদ্ধ করিয়া অৰ্দ্ধ সের থাকিতে নামাইবে । প্রত্যহ প্রাতে অৰ্দ্ধ পোয়া কাথে একটা পূরিয়া বাটিয়া ঈষৎ উষ্ণ করিয়া সেবন করিবে । এই রূপে চারি দিনে চারিট পুরিয়া সেবন করিতে হয়। এই ঔষধ সেবনের পর যে রূপ পথ্যাদির নিয়ম আছে, তাহা বিবেচনা সঙ্গত নহে । হোমিওপ্যার্থী—প্রথমাবস্থায় জর থাকিলে একো নাইট্র ১২ ডাইলিউশান একবিন্দু মাত্রায় অৰ্দ্ধছটাক জলের সঙ্গে ১ ঘণ্টা অনন্তর সেবন করাইবে। অনেকস্থলে এই ঔষধেই পীড়া এককালে নিবারণ হইতে পারে। রক্তমিশ্রিত অাম কিম্বা কেবল রক্ত নির্গত হইলে এবং অত্যন্ত বেগ ও মূত্রঙ্কচ্ছ প্রভৃতি উপদ্ৰৰ বিদ্যমান থাকিলে করোসিভ পারদ ৩ ডাইলিউশন ১ বিন্দু মাত্রায় ২। ৩ ঘণ্টা অনন্তর সেবন করাইবে । ইহাতে শীঘ্রই