পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশ্বকোষ।


অ স্বরবর্ণের আদ্যক্ষর। পাঠশালার বালকেরা চলিতবাঙ্গালায় স্বরবর্ণকে ‘সিদ্ধি' বলে। তাহার কারণ এই, প্রাচীন বৈয়াকরণেরা বর্ণমালার প্রথমেই সমস্ত স্বরবর্ণগুলিকে লিখিয়াছেন এবং এদেশের প্রথানুসারে তাঁহারা গ্রন্থারম্ভে 'সিদ্ধিরস্তু’ (সিদ্ধি হউক) এই বলিয়া মঙ্গলাচরণ করিয়াছেন। প্রথমে মঙ্গলাচরণ তাহার পর স্বরবর্ণ; তজ্জন্য মঙ্গলাচরণের আদিশব্দ ‘সিদ্ধি’ হইতে স্বরবর্ণের নাম ‘সিদ্ধি’ হইয়াছে।

সংস্কৃত ব্যাকরণমতে উচ্চারণভেদে অকার অষ্টাদশ প্রকার। প্রথম—হ্রস্ব, দীর্ঘ ও প্লুত। তাহার পর, উদাত্ত অনুদাত্ত ও স্বরিত। পুনশ্চ, হ্রস্ব উদাত্ত, হ্রস অনুদাত্ত ও হ্রস্ব স্বরিত। প্লুত উদাত্ত, প্লুত অনুদাত্ত ও প্লুত স্বরিত। পুনর্ব্বার এই নয় প্রকার উচ্চারণের অনুনাসিক ও অননুনাসিক ভেদ আছে। সুতরাং অকারের উচ্চারণ সর্ব্বসমেত আঠার প্রকার হইতেছে। গুরুর মুখে না শুনিলে সমস্ত উচ্চারণ ঠিক হৃদয়ঙ্গম হইতে পারে না।

বাঙ্গালাভাষায় কেবল হ্রস্ব ও দীর্ঘস্বর গৃহীত হইয়াছে। অকারের দীর্ঘ আকার। কোন বর্ণে আকার যুক্ত হইলে তাহার রূপ এই প্রকার হয় (া)। অ, আ, এই দুটী কণ্ঠাবর্ণ। সংস্কৃতভাষায় এবং সংস্কৃত হইতে বাঙ্গালা প্রভৃতি যে সকল ভাষা উৎপন্ন হইয়াছে, তৎসমুদায়েয় হল্‌বর্ণ অকারের আশ্রয়ে উচ্চারিত হয়। যথা,—ক, খ, ইত্যাদি উচ্চারণ করিলে ক্‌+অ, খ্‌+অ, এইরূপ অন্তে অকার আসিতেছে। তাই। *। অকঃ সবর্ণে দীর্ঘঃ। পা ৬।১। ১০১। সমান স্বর মিলিত হইলে দীর্ঘ হয়, সন্ধির এই সূত্রানুসারে নব+অঙ্কুর এই দুইশব্দ মিলিত হইয়া ‘নবাঙ্কুর’ হয়। কারণ বকারের শেষে অকার এবং অঙ্কু-

রের আদিতে অকার রহিয়াছে। পঞ্জাবের উত্তরে টাকরী নামক প্রদেশে টাকরীভাষা প্রচলিত আছে। তাহা সংস্কৃতের অপভ্রংশ। কিন্তু সে ভাষায় স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণে মিলিত করা হয় না। ‘কা’ লিখিতে হইলে ‘কআ’ এইরূপ লিখিত হয়। কি—কই। ইত্যাদি।

হ এইরূপ মাত্রাহীন হকারের মত যে বর্ণ তাহাকে লুপ্ত অকার কহে। নবঃ+অঙ্কুরঃ নবোহঙ্কুরঃ এইরূপ স্থলে বকারের পর বিসর্গ ওকার হইল এবং অঙ্কুরের অকার লুপ্ত হইয়া গেল। *। অতো রোরপ্লুতাদপ্নুতে। পা ৬।১।১১৩। অপ্লুত অকার (হ্রস্ব দীর্ঘ) পরে থাকিলে, অপ্লুত অকারের পরস্থিত রু স্থানে উকার হয়।

বর্ণোদ্ধার তন্ত্রে অকারের রূপ এই প্রকার বর্ণিত হইয়াছে—দক্ষিণ দিক্‌ হইতে কুণ্ডলী হইয়া কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হইবে; তৎপরে বামভাগ হইতে একটী রেখা আসিয়া দক্ষিণ দিক্‌ হইতে উপরে মাত্রার সঙ্গে মিশিয়া যাইবে।

এতদ্দ্বারা বাঙ্গালা অকারের আকৃতি কথিত হইল। সুতরাং স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে, দেবনাগর হইতে বাঙ্গালা অক্ষরের রূপ উৎপন্ন হইলে বর্ণোদ্ধার তন্ত্র রচিত হইয়াছে। যাঁহারা বিবেচনা করেন, প্রাচীনকাল হইতে স্বতন্ত্র বাঙ্গালা অক্ষর বিদ্যমান রহিয়াছে, সে সকল লোকের অনুমান প্রামাণিক নহে।

হিন্দুরা ভক্তিমান্, জগৎময় ঈশ্বরের বিভূতি দেখিতে পান। তন্ত্রে অকারেও ঈশ্বরত্ব প্রতিপালিত হইয়াছে। ইহাতে ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব ও শক্তি বিরাজ করিতেছেন। ইহার পঞ্চকোণ নির্গুণ ও ত্রিগুণাত্মক, সাক্ষাৎ কৈবল্যময়; তথায় পঞ্চদেবতা ও শক্তিত্রয় অধিষ্ঠিত আছেন।

অ (অব্য) অভাব, নিষেধ, অল্প। নঞ্‌ তৎপুরুষ সমাসে নকারের লোপ হইলে অকার থাকে। *। নলোপো নঞঃ। পা ৬। ৩। ৭৩। নঞ্‌ তৎপুরুষ সমাসে শব্দ-