অনেকার্য { ২৯৬ ] অনেকার্থ হয়। তদ্ভিন্ন, উপসর্গ দ্বারাও এক একটা ধাতুর অনেক প্রকার অর্থ হয় । ( উপসর্গেণ ধাত্বর্থে বলাদষ্ঠত্র নীয়তে ) । যেমন, প্র-হৃ প্রহর । আহ আহার । উপহাঁ উপহার। সং-হৃ সংহার। এই রূপ উপসর্গের জন্ত হৃ ধাতুর কত অর্থ হইল। কোন শব্দের অধিক অর্থ থাকিলে, কোথায় কোন অর্থ সঙ্গত হইবে তাহা বুঝিয়া লইবার কয়েকটা উপায় আছে। সে উপায় কয়েকটার নাম—সংযোগ, বিপ্রযোগ, সাহচৰ্য্য, বিরোধিতা, অর্থ, প্রকরণ, লিঙ্গ, অন্তশব্দের সান্নিধ্য, সামর্থ্য, ঔচিত্য, দেশ, কাল, ব্যক্তি, স্বর ইত্যাদি । ংযোগো বিপ্রযোগশ্চ সাহচর্য্যং বিরোধিতা । অর্থঃ প্রকরণং লিঙ্গং শব্দস্তান্তস্য সন্নিধি । সামর্থ্যমেীচিতী দেশ কালে ব্যক্তি স্বরাদয়ঃ। শব্দার্থন্তানবচ্ছেদে বিশেযস্কৃতিহেতবঃ । ( ভর্তৃহরি) । একটা বস্তু অন্য বস্তুর সঙ্গে সংযুক্ত হইলে তাহাকে সংযোগ কহে। যেমন,—’স চক্রে হরিঃ’। সুদর্শনচক্রযুক্ত ছরি । এখানে, সচক্র শব্দ বিশেষণ । ঐ বিশেষণ হরি শব্দের সংঙ্গে মিলিত হইয়াছে। হরি শব্দে বিষ্ণু, সিংহ প্রভৃতি অনেককে বুঝায়। কিন্তু এখানে ‘সচক্র’ এই শব্দের সঙ্গে হরি শব্দ মিলিত হইয়াছে বলিয়া অর্থের কোন গেল হইতেছে না। আমরা সহজেই জানিতে পারিতেছি যে, এ স্থলে হরি শব্দে বিষ্ণুকে বুঝাইতেছে। কারণ, বিষ্ণু ভিন্ন সিংহ প্রভৃতির চক্র নাই। আবার যদি বলা যায়,—উন্নত কেশরাগ্রে। হরিঃ । তাহ হইলে সিংহকেই বুঝিতে হইবে। কারণ, সিংহ ভিন্ন বিষ্ণুর কিম্বা সপাদির জটা নাই। স্থল কথা, কোন শব্দের অনেক অর্থ থাকিলে, তাহার বিশেযণ দেখিয়৷ কোথায় কোন অর্থ থাটিবে তাহ বুঝিতে পারা যায়। একটা বস্তুর সঙ্গে অন্ত বস্তুর সংযোগের অভাব নির্দেশ করিলে তাহাকে বিপ্রযোগ কহে । যেমন,— ‘অচক্রে হরিঃ’ । চক্ররহিত হরি। ইহার অর্থ এই,— বিষ্ণুর হাতে চক্র আছে, কিন্তু এ অবস্থায় কিম্বা এই মূৰ্ত্তিতে তাহার হাতে চক্র নাই। সিংহ প্রভৃতির হাতে চক্র থাকে না। অতএব ‘অচক্র’ এ রূপ অভাব বোধক বিশেষণ আছে বলিয়া ‘হরি’ শব্দে এখানে সিংহকে বুৰাইতে পারে না। কারণ সিংহ কোন কালে চক্রধারী মহে, কাজেই তাছাকে চক্রহীন বলা অসঙ্গত্ত হয়। * , , পরস্পন্ন সহায়তা বুঝাইগে তাহার নাম সাহচৰ্য্য। যেমন, ‘রামলক্ষণ’ । দশরথ রাজার পুত্রদের নাম রাম ও লক্ষণ, অন্যান্ত লোকেরও রাম ও লক্ষণ এই রূপ মাম আছে । কিন্তু দশরথের পুত্রেরা এক সঙ্গে থাকিতেন, এক সঙ্গে বনে বনে ফিরিয়াছেন, পরস্পর পরস্পরের সহায়তা করিতেন, ইহা চিরপ্রসিদ্ধ। তাই "রাম লক্ষণ’ বলিলে দশরথের পুত্রকেই বুঝায়। পরম্পরের শক্রভাবকে বিরোধিতা কহে । যেমন, ‘রামাঞ্জুন’। ‘রাম বলিলে দশরথের পুত্রকে কিম্ব। বলরামকে বুঝায়। পাণ্ডুর পুত্রের নাম অর্জুন। কিন্তু রামার্জন শব্দে ইহঁাদের কাহাকেও বুঝাইবে না। ইষ্ঠা দ্বারা পরশুরাম এবং কাৰ্ত্তবীৰ্য্য অর্জুনকে বুঝিতে হইবে। পরশুরামের সঙ্গে কাৰ্ত্তবীৰ্য্য অর্জুনের বিরোধ ঘটিয়াছিল, তাহ চিরপ্রসিদ্ধ। অর্থ শব্দে প্রয়োজনকে বুঝায়। প্রয়োজন দেখিয়া অনেক স্থলে শব্দের অর্থ নিশ্চিত হইয় থাকে। যেমন, স্ববাস শব্দে উত্তম বক্স এবং সুগন্ধি দ্রব্যকে বুঝায় । কেহ স্থানান্তরে যাইবেন, বস্ত্রাদি পরিতে হইবে, অতএব তিনি যদি বলেন, ‘সুবাস আনিয়া দাও । এখানে প্রয়োজন দেখিয়া স্ববাস শব্দে উত্তম বস্ত্রকে বুঝিতে হইবে। আবার কেহ পুজা করিতে বসিয়া যদি বলেন, সুবাস আনিয়া দাও। তাহা হইলে সুগন্ধাদি বুঝিতে ङ्हेर । প্রস্তাবকে প্রকরণ কহে প্রস্তাবের ভাব বুঝিয়। শব্দের কোন অর্থ সঙ্গত হইবে, তাহ বুঝিতে পার। যায় । যেমন, “সৰ্ব্বং জানাতি দেব:" | রজার কাছে বিচার হইতেছে, এমন সময়ে বাদী কিম্বা প্রতিবাদীর মধ্যে কেহ বলিল,-"দেব সকলি জানেন’ । এখানে প্রস্তাবের ভাব দেখিয়া দেব শব্দে রাজাকে বুঝাইতেছে, কোন দেবতাকে বুঝাইতেছে না। লিঙ্গ শব্দে চিহ্ন বা লক্ষণকে বুঝায়। কুপিতে। মকরধ্বজঃ’ । মকরধ্বজ কুপিত হইয়াছেন। সচেতন পদার্থই কুপিত হইতে পারে। অতএব কোপের লক্ষ৭ দেখিয়া মকরধ্বজ শব্দে মদনকে বুঝিতে হইবে । মকরধ্বজ ঔষধ কিম্বা অদ্য কোন অর্থ হইবে না । অদ্য শব্দের সন্নিধি । যেমন, "ঘটী বাটী, কলসী’ । এখানে, ঘট ও কলসী শব্দের কাছে বাট শব্দের প্রয়োগ আছে বলিয়া ইহ স্বারা ভোজনের পাত্র বিশেষকে বুঝাইতেছে । আবার, বাট বাগান পুষ্করিণী" এরূপ বলিলে এখানে ৰাট শম্বে গৃহ বুঝিতে হইবে।
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৩২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।