অন্তঃসত্ত্ব এই রূপ যমজ সন্তান জন্মে। আবার ছুইটী পানমুচির ভিতরে দুইটা সন্তান থাকিলে ফুলও পৃথক পৃথক হয়। কিন্তু কি কারণে পুত্র আর কি কারণে কন্যা জন্মে তাহার কিছুই ঠিক নাই । কখন কখন গর্ভ হইতে হস্তপদহীম সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। পানমুচির ভিতরে লালাবৎ রস অল্প পরিমানে থাকিলে ক্ষুদ্র ভ্রণ অবস্থায় সন্তানের হস্তপদ প্রভৃতি ষে অঙ্গে মিয়ত চাপ লাগে, সেই অঙ্গ বাড়িতে পায় না। সে কারণ অনেকের হস্তপদ থাকে না । কাহার ও র্কাধের কাছে কেবল দুই একটা অঙ্গুলি বাহির হয়, চাপের জন্ত সমস্ত ছাত গজাইতে পারে না । আর এক প্রকার আশ্চর্য্য ব্যাপার ঘটিতে দেখা যায় । অঙ্গহীন সন্তান ভূমিষ্ঠ হইলে পর তাহার ছিন্ন হস্তপদ পৃথক বাহির হইয়া আসে। ইহাতে স্পষ্ট জানা যাইতেছে যে, কোন কোন স্থলে গর্ভের ভিতরে অঙ্গহীন সস্তানদের হস্তপদ জন্মে, শেযে কোন ব্যাঘাত ঘটিলে তাহ কাটিয়া যায়। কি রূপে কাটিয়া যায়, সে বিষয়ে সকল চিকিৎসকের মত সমান নহে। কেহ কেহ অল্পমান করেন যে, নাভিরজু হস্তপদে জড়াইয়া যায়, তাহাতে ঐ সকল অঙ্গ গলিত হইয়া শেষে খসিয়া পড়ে। কিন্তু ডাক্তার প্লেফেয়ার এই আপত্তি করেন যে, কোন অঙ্গে নাভি-রজন্তু দৃঢ় রূপে জড়িত হইলে তাহার ভিতর দিয়া রসের গতিবিধি বন্ধ হইবার সম্ভাবনা, কাজেই তেমন স্থলে সন্তান বাচিয়া থাকিতে পারে না। ১ মাস —যথার্থ গর্ভসঞ্চার হইরাছে কি না প্রথম মাসে তাহ স্থির করা অতিশয় কঠিন । কিন্তু গর্ভ হইলে অনেক স্থলেই ঋতুবন্ধ হইয়া যায়। ‘গ বমি বমি’ করে এবং সৰ্ব্বদাই মুখ দিয়া জল উঠে । কোন দ্রব্য খাইতে ইচ্ছা হয় না। জরায়ুর অধোভাগ ( cervix ) ও মুথ ( os ) কোমল হয়। এবং উহার ছিদ্র আড়ে বিস্তৃত থাকে না, কিঞ্চিৎ গোল হইয়া আসে। এ দিকে যোনির উষ্ণতা ও রসনিঃসরণ বুদ্ধি পায় । ২ মাস —ছুই মাসে পড়িলে উপরের লক্ষণগুলি আরও স্পষ্ট হইয় পড়ে। চারি সপ্তাহ গত হইলেই স্তন কিছু শক্ত, স্থল এবং গুটিকাযুক্ত হয়। স্তনের অগ্রভাগ কৃষ্ণবর্ণ হইয়া আসে এবং ভিতরে দুগ্ধ জন্মে। এই সময়ে জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ গোলাকার হইয়া থাকে। ৩ মাস —তৃতীয় মাসে অস্ত্র নিজস্থান হইতে সরিয়া যায় বলিয়া উদর একটু বড় দেখায়। স্তনের মুখ আরও { ৩০৩ ] অন্তঃসত্ত্ব৷ অধিক কৃষ্ণবর্ণ হইয়া আসে এবং নীলবর্ণ শীরা উচ হইয়। উঠে। স্তন টিপিলে অল্প অল্প ঘন দুগ্ধ বাহির হয়। এই অবস্থায় গর্ডের ভিতরের ফুল হইতে এক প্রকার মৃত্যু মৃদু শব্দ উঠে, জরায়ুর উপরে কাণ রাখিলে তাহ। শুনিতে পাওয়া যায় । ৪ মাস --চতুর্থ মাসে উদর স্পষ্টরূপে বড় দেখায় । এই অবস্থায় তলপেট টিপিয়া দেখিলে একটা পিণ্ডের মত পদার্থ হাতে লাগে। জরায়ুর উপরে কাণ দিলে গর্ভস্থ সন্তানের হৃৎস্পন্দন শুনিতে পাওয়া যায়। ৫ মাস –পাচ মাসে ষোনির ভিতরে অঙ্গুলি দিয়৷ সন্তানকে উদ্ধে ঠেলিয়া দিলে আবার অঙ্গুলির উপরে আসিয়া পড়ে । গর্ভের মধ্যে সস্তান নড়িতে থাকে, গর্ভিণী তাই নিজে জানিতে পারে । এই সময় হইতে গর্ভ সম্বন্ধে প্রায় আর কোন সন্দেহ থাকে না । কখন কখন স্ত্রীলোকের মিথ্যা গর্ভ হয় । মিথ্যা গর্ড হইলে উদর বড়, অরুচি এবং প্রসব বেদন পর্যান্ত উপস্থিত হইয়া থাকে। বায়ুরোগগ্ৰস্ত ( hystorica ) স্ত্রীলোকদেরই এই রূপ গর্ভ ঘটিয়া থাকে । কিন্তু এমন স্থলে স্ত্রীলোককে ক্লোরাফরম ওযধের আদ্রাণ দিয়। অজ্ঞান করিলে, উদরের পিণ্ড কমিয়া যায়। রোগিণী সজ্ঞান হষ্টলে আবার উদর বড় হইয় উঠে। মিথT গর্ভ কি না তাহা চিনিবার ইহাই প্রশস্ত উপায় । গর্ভবতী স্ত্রীলোককে বিশেষ যত্নে রাথ। চাই । যাহাতে শোক দুঃখ প্রভৃতি মনের উদ্বেগ জন্মে, এমন কাজ কিছুই করিবে না । উচ্চনীচ স্থানে গমনাগমন, যানারোহণ, ব্যায়াম, অতিরিক্ত পরিশ্রম, মৈথুন, রাত্রি জাগরণ, রক্তমোক্ষণ, অতিবিরেচক ঔষধ সেবন প্রভৃতি নিষিদ্ধ । গর্ভাবস্তায় অনেক প্রকার পীড়া জন্মে। তাহার মধ্যে অরুচি এবং বমন প্রার সকল স্ত্রীলোকেরই হয় । অল্প বমন কিম্ব সামান্ত অরুচি ভয়ের কারণ নহে । কিন্তু কচিৎ কাহারও অতিশয় অরুচি এবং বমন হইয়া থাকে। কোন দ্রব্য থাইতে ইচ্ছা হয় না, ভোজন করিলেও কিছুই উদরে সহ ছয় না। রোগিণী দিন দিন দুৰ্ব্বল হইয়া শেষে প্রাণত্যাগ করে। কিন্তু এরূপ ঘটনা অতি বিরল । গর্ভসঞ্চায় হইলে ক্রমে জরায়ু বড় হইতে থাকে, তাহাতে উহার স্নায়ুমণ্ডলে উত্তেজনা জন্মে, তজ্জন্তই গর্তবর্তী স্ত্রীলোকের বমন বা বমনোদ্বেগ্ন হয় ।
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।