আকবর - rre- -o-o: ঘোড়ার খুররেণুতে আকাশ ঢাকিয় ফেলিল, আকবরের হৃদয় পুস্তুলী বীরমদে নাচিতে লাগিল। তিনি অশ্বারোহণে পিতার সঙ্গে পৈতৃক সিংহাসন উদ্ধার করিতে চলিলেন । প্রথমে লাহোরে তুমুল সংগ্রাম হইল। সে দিনের জয় কেবল মহাবীর আকবরের পরাক্রমে। তাহার পর হুমায়ুন দিল্লিতে গিয়া শত্রুদিগকে দূরীভূত করিলেন। কিন্তু রাজ্যলাভ করিয়া তিনি অল্পকালমাত্র জীবিত ছিলেন । একদা সন্ধ্যার সময় ঈশ্বরাধনা করিতে করিতে তিনি প্রস্তরময় সিড়ি হইতে পা-পিছলিয়া পড়িয়া গেলেন, তাহাতে মস্তকে দারুণ আঘাত লাগে। কিছু দিন পরে সেই আঘাতেই সম্রাটের মৃত্যু হইল। ১৫৫৬ খৃঃ অব্দে আকবর পাদশা হইলেন। তখন তিনি নিতান্ত বালক, সে জন্য হুমায়ুনের প্রিয়মন্ত্রী বৈরাম থা সমস্ত রাজকাৰ্য্য নিজে দেখিতেন । আকবর একান্ন বৎসর রাজত্ব করেন, এই দীর্ঘকালের মধ্যে তিনি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন নাই । ওমরাও ও সর্দারগণ সৰ্ব্বদাই নানাপ্রকার উৎপাত করিত, তজ্জন্য এতবড় ধাৰ্ম্মিক সম্রাটের জীবন প্রায় যুদ্ধবিগ্রহেই গিয়াছে। রাজ্যাভিষেকের পরেই তিনি পাঠানরাজ সিকনারকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। ঐ সময়ে বদকশানের শাসনকর্তা স্বলৈমান কাবুল আক্রমণ করেন এবং হিমু দিল্লি অধিকার করিয়া লন । শেষে সম্রাটের সঙ্গে যুদ্ধে মুলৈমান পরাভূত হইয়া ব্যতা স্বীকার করিলেন । হিমু ধৃত ও নিহত হন। অকবরের মন্ত্রী বৈরামর্থাও একবার বিদ্রোহী হইয়াছিলেন; কিন্তু সম্রাট পুনৰ্ব্বার তাহার প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করেন । ১৫৭৪ খৃঃ অন্ধে বাঙ্গালার শাসনকর্তা দাউদ বিদ্রোহী হন, সম্রাট তাহাকে পরাস্ত করিয়া সলিমের হস্তে বঙ্গদেশ সমর্পণ করেন । সেনানায়ক মানসিংহ এই সময়ের লোক । তিনি পাঠানদিগকে পরাজিত করিয়া উড়িষ্যা অধিকার করিয়া লন । এইরূপে এক একটা যুদ্ধে সম্রাট আকবর নানাদিকে এক একটা বিশাল প্রদেশ হস্তগত করিয়াছিলেন। পরিশেষে অনেক দূর পৰ্য্যন্ত র্তাহার সাম্রাজ্য বিস্তীর্ণ হইয়া পড়িল। পূৰ্ব্বে বঙ্গ ও আসাম, দক্ষিণে আহ্মদনগর, মধ্যস্থলে রাজপুতান পশ্চিমে কাবুল ও কানাহার। প্রসিদ্ধ আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে আকবরের সময়ট যেন জীবন্ত ভূলিকা দিয়া চিত্র করা হইয়াছে। পণ্ডিত আবুল ফজল ইহার লেখক। ঐ পুস্তকে নাই এমন বিষয় দেখা [So I আকবর যায় না। জটিল রাজনীতি হইতে তাস খেলা ও পার্থী পোষা পৰ্য্যন্ত এই গ্রন্থে আছে। অকবরের প্রকৃতি কেমন, তিনি কিরূপ রাজকাৰ্য্য বুঝিতেন, একান্ন বৎসরের মধ্যে রাজ্যের কতদূর উন্নতি করিয়াছিলেন, তাহার পরিচয় আইন-ই-আকবরীতে রহিয়াছে। s আকবরের দয়া, ক্ষমা ও সমদৰ্শিতাগুণের জন্যই লোকের কাছে তাহার এত অাদর। হিন্দু মুসলমান ও খৃষ্টানকে তিনি সমান ভালবাসিতেন। তিনি ব্রাহ্মণের মুখে বেদ শুনিতেন ; খৃষ্ঠানের কাছে বাইবলের কথা জানিতেন ; কোরাণ—মুসলমানের কাছে। এখানি বেদ, ওখানি কোরাণ, এ ভিন্নভেদ তিনি বুঝিতেন না। ধৰ্ম্ম মাত্রই তাহার আদরের সামগ্রী ছিল । আবার নিজে ভক্তিপূর্বক স্বৰ্য্যার্ঘ দিতেন ও স্বর্য্যের পূজা করিতেন । তাহার দয়াদাক্ষিণ্য দেখিয়া প্রজারা তাহাকে দেবতাতুল্য মানিত, তাহারা মাটীতে লুটাইয় তাহার সন্মান করিত। পূৰ্ব্ব পাদশার কৃষকদের নিকট নজর লইতেন, যুদ্ধ উপস্থিত হইলে মজুরদিগকে ধরিয়া যুদ্ধে পাঠাইতেন, পণ্যদ্রব্যের উপর শুল্ক আদায় করিতেন। অকবর সিংহসনে বসিয়াই সে সমস্ত কুপ্রথা উঠাইয়া দিলেন। আকবরের সর্বসমেত আটট পত্নী। (১)স্বলতানা রকিয়া বেগম প্রথম ও পাটরাণী। ইনি মির্জা হিন্দালের কন্যা। র্তাহার সন্তানসন্ততি হয় নাই ; তিনি শাজহানকে প্রতিপালন করিতেন। (২) সুলতান সলিমা বেগম। পূর্বে ইনি বৈরাম খার পত্নী ছিলেন। বৈরামের মৃত্যুর পর, আকবর র্তাহাকে বিবাহ করেন । ইহঁার না কি বেশ কবিত্ব শক্তি ছিল । (৩) রাজা বিহারীলাল মলের কন্ত। র্তাহার ভ্রাতার নাম রাজা ভগবান দাস । ( ৪ ) আব্দুলবাসীর পত্নী। (৫) যোধ বাই। ইনি যোধপুরের রাজচুহিতা । জহাঙ্গীর এই রাণীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন। (৬) বিবি দৌলত শাদ। (৭) আব্দুল্লা খ মোগলের কন্যা । (৮) মিরান মুবারিক শার কন্যা। বিবাহ সম্বন্ধে সম্রাট একবার এইপ্রকার মত প্রকাশ করিয়াছিলেন—“আমার এমন মন পূৰ্ব্বে হইলে, হয় ত আমি বিবাহ করিতাম না। কাহাকে বিবাহ করিব ? যাহারা আমার বয়োজ্যেষ্ঠা, সে সকল নারীকে ত মাতৃসমান দেখি । বয়সে র্যাহার ছোট, সে সকল বালিকা আমার কন্যার মত। আর সমান বয়সের স্ত্রীলোকদিগকে . আমি বন্ধু বলিয়া জানি’ । বহুবিবাহ কি ? মানুষের ইহা কৰ্ত্তব্য কি না, এ কথা লইয়াও বিচার উঠে ।
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।