অম্ভোষ্টি মৃত্যুর পর শরীর নিম্পদ অসাড় হয় ; তখন সে মলিন মুখ পানে চাহিলে পাষাণ হৃদয়ও কঁাপিয়া উঠে। আবার দুই এক দিনেই মৃতদেহ পচিতে থাকে, দুর্গন্ধে লোকের পীড় জন্মে। তাই মাচুষ মরিলে শীঘ্র শীঘ্র শব স্থানান্তরিত করা আবশুক । মাঠে ফেলিয়া দেওয়া, জলে নিক্ষেপ করা, কিম্বা গোর দেওয়৷ এই গুলিই সহজ উপায়। প্রথম প্রথম অসভ্য অবস্থায় সকল জাতি তাহাই করিত। কাহারও মৃত্যু হইলে বন্ধুবান্ধবের হর তাছাকে জলে ডুবাইয়া দিত, কিম্বা মাটীতে পুতিয়া ফেলিত, অথবা লোকালয় হইতে কিঞ্চিৎ দূরে ফেলিয়। দিয়া আসিত । কিন্তু মানুষ মরিলে ভূত হয়, এ আতঙ্ক অজ্ঞ লোকেরই অধিক । কোল, সাওতাল গ্রভৃতি সমস্ত অসভ্য জাতি ভূত মানে, তাহারা ভূতের পূজা করে। সকল দেশের লোকই অসভ্য অবস্থায় ভূতকে ভয় করিয়া চলিত, এখনও চলে। তাই, মৃত্যুর পর যেন ভূতের দৌরাত্ম্য না ঘটে, সে কায়ণ অস্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে ক্রমে দুই একটা করিয়। শান্তি স্বস্ত্যয়ন আরম্ভ হইয়া পড়িল । ভূত গেল। তাহার পর স্নেহ ও ভক্তি। যাহাকে ভালবাসি ; অষ্টপ্রহর চক্ষের উপর দেখি । মনে মনে দেখি, হৃদয়ে হৃদয়ে দেখি ; ঘুমাইলে স্বপ্নেও দেখিতে পাই। বিদেশে গেলে, দু-দিনে না হয় তবু দুবৎসরেও আবার একবার দেখিতে পাইব, এই ভরসায় আশাপথ চাহিয়া থাকি। কালি সে ছিল, আজি নাই ! মরিল ত জন্মের মত সকল সম্বন্ধ ঘুচিল ; আবার যে দেখিতে পাইব সে আশা ফুরাষ্টয়া গেল। তাই, অস্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার সঙ্গে স্নেহ ও ভক্তির জন্তও অনেকে অনেক কাজ করিয়া থাকেন । তদ্ভিশ্ন লোকের মত ও বিশ্বাসায়ুসারেও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার নানা প্রকার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাড়িয়ছে। এখন সকল জাতির অস্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার প্রথা এক প্রকার নয় । পুঝে যে রূপ ছিল, দিন দিন তাহার অনেক পরিবর্ত হইয়া আসিয়াছে। তবু বুঝিয়া দেখিলে আদিম অবস্থার কোন না কোন আভাস অদ্যাপি সকল জাতির মধ্যেই বর্তমান দেখা যায় । r সে কালের ক্যালয়ক জাতির কোথাও নির্দিষ্ট বাসস্থান ছিল না। তাহার। পশু পালন করিত, স্থানে স্থানে টোল ফেলিয়৷ বেড়াষ্টত। এক স্থানের তৃণশস্তাদি ফুরাইলে আবার অস্তুত্র উঠিয়া যাইত। ইহাদের অস্ত্যেষ্টি [ ৩২২ ] ज्रह सुशैिं ক্রিয়ার কোন আড়ম্বর ছিল না। কাহার মৃত্যু হইলে তাহারা সেইখানে মৃতদেহ ফেলিয়া কিঞ্চিৎ দূরে গিয়া আবার টোল ফেলিত। পূৰ্ব্বকালের ইথিওপিয়ার লোকে মৃতদেহ জলে ডুবাইয়া দিত। এখনও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ঐ প্রথা চলিত আছে। ইতর জাতির মৃতদেহের গলায় কলসী ও দড়ী বাধিয়া নদীর জলে ডুবাইয়া দেয়। বোম্বাইয়ের পারসী জাতি সভা ও সুশিক্ষিত। ভারতে তাহাদের মত ধনাঢ্য জাতি আর দ্বিতীয় নাই । কিন্তু তাহাদের অস্তোষ্টি ক্রিয় মানব জাতির প্রথমাবস্থার মত অতি সহজ উপায়েই নিম্পাদিত হইয়া থাকে । দথম অর্থাৎ নীরব মন্দির’ নামে তাহাদের সংকারের স্থানে গর্তের উপর লোহার কাজ পাতা আছে। পারসীর তাতাতে মৃতদেহ শোয়াইয়া আসেন। ক্রমে রৌদ্রে ও শিশিরে শরীর গলিয়। আসে এবং কাকে ও শকুনীতে মাংস খাইয়া ফেলে। শেষে দেহের অস্থিগুলি খসিয়া খসিয়া নীচের গর্তের ভিতরে পড়ে। তখন সেই হাড়গুলি কুড়াইয়া গোর দেওয়া হর । সাইবিরিয়ার দক্ষিণ পূৰ্ব্ব দিকে কামস্কাটুকা উপদ্বীপ। ঐ উপদ্বীপে কামস্কাডেল নামে এক প্রকার অসভ্য জাতি আছে । ইহারা মৃতদেহ পোড়ায় না, পুতিয়াও ফেলে না—কুকুরকে থাইতে দেয়। মৃতদেহ খাইতে দিবে বলিয়া তাহার ঘরে ঘরে কুকুর পুষিয়া রাখে। কামস্কাডেলদের ধারণ এই, মৃতশরীর কুকুরে খাইলে প্রেতাত্মা পরলোকে গিয়া সুখে স্বচ্ছলো কালযাপন করে। ঐ জাতির কুকুরের একটী আশ্চৰ্য্য গুণ আছে। তাহারা ডাকিতে পারে না, একেবারে ডাকিতে জানে না ; কিন্তু মানুষের অনেক কাজে লাগে । কুকুর পরকালের সহায়, এ বিশ্বাস অনেক জাতিই করিয়া থাকে। গারো জাতি মৃতদেহ সৎকারের সময়ে কুকুর বলি দেয়। চিৎমাং পৰ্ব্বত গারোদের প্ৰেতপুরি। কুকুর বলি দিলে তাহার আত্মা মৃতব্যক্তিকে পথ দেখাইয়া প্রেতলোকে লইয়া যার। . তজ্জন্য তাহারা সৎকারের সময়ে কুকুর কাটিয়া থাকে। গ্রিন্লাগু-বাসীদের মধ্যেও কতকটা এই রূপ নিয়ম চলিত আছে । ছোট ছেলের মৃত্যু হইলে প্রেতলোকের পথ দেখাইয়া দিবে বলিয়া তাহারা মৃতদেহের সঙ্গে কুকুর পুতিয়া রাখে। কুকুর প্রেতলোকের পথ দেখাইতে পারে, কেবল অসভ্য লোকেরাই এ বিশ্বাস করে না ; প্রাচীন আর্য্যদেরও ঠিক এই রূপ ধারণা ছিল । আর্ঘ্যের
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।