পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্ত্যেষ্টি হয়, পূৰ্ব্বে এ দেশের কোন কোন জাতি গাছে শব বাধিয়। রাখিত, তাই লোকে সে কথা সহজে বিশ্বাস করিয়াছিল। শব বাধিয়া রাখার প্রথা না থাকিলে পাণ্ডবদের কথা কেহ মানিত না, সকলেই উপহাস করিত। শুনিতে পাওয়া যায়, প্রাচীন কলচিসের লোকের। পুরুষের মৃত শরীর গাছে ঝুলাইয়া রাখিত এবং স্ত্রীলোকদিগকে গোর দিত। অতএব, ভারতবর্ষেও তদ্রুপ কোন নিয়ম চলিত ছিল, এমন অনুমান করা অসঙ্গত নহে। এরূপ সন্দেহ করিবার আরও একটা কারণ আছে। সমাজে যে কোন নিয়ম অধিক কাল চলিয়া আসে, পরে তাহা একেবারে উঠিয়া গেলেও তবু তাহার কিছু একটু আভাস থাকিয়া যায়। বোধ হয় পূৰ্ব্বে এদেশে গাছে শব বাধিয়া রাথিবীর প্রথা ছিল, তাই বৈদিক সময়ে সাগ্নিক ব্রাহ্মণের অস্থিচয়ন করিয়া তাহ পলাশ কিম্ব শমী গাছে দুই এক দিন ঝুলাইয় রাখা হইত। ভারতবর্যের পর্বতে অনেক অসভ্য জাতি বাস করে। তাহাদের দেবতা প্রায় এক রূপ ; সকলেই বনস্পতি, নদী, পৰ্ব্বত, ভূত, বাঘ প্রভৃতির পূজা করে। কিন্তু তাহাদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া এক প্রকার নয় । খনা ও ভিল জাতির পুরুষকে দাহ করে এবং স্ত্রীলোককে পুতিয়া ফেলে। নীলগিরির তদা জাতির ব্যবহার ঠিক আমাদের মত। তাহারা শিশুদিগকে গোর দের, কিন্তু বয়ঃপ্রাপ্ত স্ত্রীপুরুষকে দাহ করে। হিমালয়ের প্রায় সকল অসভ্য লোকের মৃতশরীর পুতিয়া ফেলে। মৃত ব্যক্তির প্রতি স্নেহ মমতা এবং ভক্তি হইতে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার অনেক ধুমধাম এবং আড়ম্বর বাড়িয়াছে। তাহার উপর আবার প্রেতলোকের প্রতি বিশ্বাস আছে । মানুষ মরিলে কি হয়, এ সমস্তার মৰ্ম্ম যে জাতি যেমন বুঝিয়াছিল, প্রেতাত্মার মুখস্বচ্ছন্দতা এবং সাগতির নিমিত্ত তাহারা সেই রূপ এক একটা কাজের নিরম করিয়া গিয়াছে। উত্তর আমেরিকার ইণ্ডিয়ানরা মৃত ব্যক্তির সঙ্গে পাক করিবার পাত্র, নানা প্রকার খাদ্য দ্রব্য, বসন ভূষণ এবং ধনুর্বাণ দেয়। প্রেতলোকে দীর্ঘকাল থাকিতে হইবে, কাজেই পরিধানের মৃগচৰ্ম্ম ছিড়িয়া গেলে তালী দেওরা চাই, তজ্জন্ত তাহার। অতিরিক্ত কিছু চৰ্ম্ম গোরের ভিতরে রাখে। আফ্রিকার অন্তর্গত দেহোমীর লোকে মৃত ব্যক্তির কাছে সংবাদ পাঠাইবার জন্ত মধ্যে মধ্যে এক এক জন ক্রীতদাসের [ ৩২৪ ] অন্ত্যেষ্টি প্রাণ নষ্ট করে। সেই চাকরের আত্মা লোকাস্তরে বাটীর সমাচার লইয়া যায়। কোন কোন হাফসী সম্প্রদায় আত্মীয় ব্যক্তির অস্থি রাথিয়া দেয়। ইচ্ছা হইলে তাহার সেই অস্থির সঙ্গে কথোপকথন করে । অনামান দীপবাসীরা ভক্তি ও স্নেহ দেখাইবার জন্তু মৃতব্যক্তিদের মুণ্ডে মালা গাথিয় গলায় পরে। ভারতবর্ষের বনবাসী অসভ্য লোকের মৃতশরীরের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য এবং বসন ভূষণ পুতিয়া রাখে। আমরা অস্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার সময়ে মৃত ব্যক্তির মুখে পিণ্ডদান করি । শ্রাদ্ধের সময়ে জলপাত্র, ভোজনপাত্র এবং শষ্যাদি উৎসর্গ করিয়া থাকি ; তদ্ভিন্ন পিতৃলোকের উদ্দেশে তর্পণ এবং পার্বণ শ্রাদ্ধও করি। অতএব, দেশভেদে এবং জাতিভেদে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার অনুষ্ঠানগুলি ভিন্ন ভিন্ন হইয়াছে বটে, কিন্তু সকলের উদ্দেশু এক প্রকার । সেকালে ওয়েলসে (Wales) একটা আশ্চর্য নিয়ম চলিত ছিল । আমাদের দেশে অগ্ৰদানী ব্রাহ্মণ যেমন প্রেতপিণ্ড ভোজন করে, ওয়েল্স দেশে তদ্রুপ এক সম্প্রদার পাপভোজী লোক ছিল । কাচাকে গোর দিবার সময়ে তাহারা শবের হাত হইতে একখানি রুট লইয়া খাইত, তাহাতে প্রেতাত্মার সমস্ত পাপ নষ্ট হইয়। যাইত । এই রীতির কতকটা আভাস উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কোন কোন স্থানে এবং পঞ্জাব ও কশ্মীরাদি অঞ্চলে দেখিতে পাওয়া যায়। অশৌচান্তের দিন হিন্দুরা, জনৈক ব্রাহ্মণকে কাদা ধূলা মাথাইয়া প্রেত সাজান । পরে পিণ্ডদান হইলে তাহাকে সেই পিও থাইতে দেন। এই সকল প্রেত ব্রাহ্মণ ক্রিয়ার শেষে বিলক্ষণ বিদায় পাইয়া থাকে। পূর্ণিয়া জেলায় শ্রাদ্ধের দিন একটা কুটার নিৰ্ম্মাণ করা হয়। তাহার ভিতরে নানাবিধ খাদ্য সামগ্ৰী দিয়া প্রেতনৈবেদ্য সাজান থাকে। অগ্রদানী ব্রাহ্মণ এবং তাহার স্ত্রী সেই নৈবেদ্য ভোজন করিতে বসিলে গৃহস্থেরা কুটীরের দ্বার বদ্ধ করিয়া আগুন লাগাইয়া দেয়। তখন অগ্ৰদানী ব্রাহ্মণ ও তাহার স্ত্রী কোন প্রকারে দ্বার কাটিয়৷ বাহির হয় । প্রেতাত্মা বৈতরণী পার হইবে বলিয়া আমরা গোরু উৎসর্গ করি। পূৰ্ব্বকালের রুষ এবং গ্রিস দেশেও কতকটা এই রূপ নিয়ম চলিত ছিল । রুষবাসীরা মৃতশরীয় পুতিবার সময়ে তাহার হাতে একখানি ‘চালান পত্র’ লিখিয়া দিতেন। প্রেতাত্মা সেই চালান পত্র পিতয়কে (Peter) দেখাইলে অনায়াসে স্বর্গে