শৈব to শৈব বহু শিবোৎসব অতীব সমারোহের সহিত সম্পন্ন হইয়া থাকে। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, ত্রিপুও, তিলক ও রুদ্রাক্ষ ধারণ শৈবদিগের প্রধান চিহ্ন। শৈবগণের বিবিধ সম্প্রদায়ে অস্তান্ত বিষয়ে কিছু কিছু মতভেদ থাকিলেও এই দুই প্রধান চিহ্নধারণে কোনও মতভেদ হয় না। কাশ্মীর ও রাজপুতনায় শৈব প্রভাব যথেষ্ট পরিলক্ষিত হয়। রাজপুতনার একলিঙ্গ শিবের বিষয় অতঃপর বিস্তৃত রূপে আলোচিত হইবে। বtীর, পঞ্জাব, উত্তরপশ্চিম প্রদেশ ও রাজপুতনার শৈব ব্রাহ্মণগণ মৎস্ত মাংস আহার ও সম্বিদ পান করিয়া থাকেন । কাশ্মীরের প্রামাণ্য গ্রন্থ নীলমতপুরাণে সম্বিদ পানের ব্যবস্থা দৃষ্ট হয় । শৈব আগমেও এরূপ ব্যবহারের অভাব নাই। প্রাচীন সময় হইতেই কাশ্মীরে শৈব ধৰ্ম্মের প্রভাব পরিদৃষ্ট হয়। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট অঞ্চলের স্মাৰ্ত্ত ব্রাহ্মণগণ বঙ্গীয় স্মার্ত ব্ৰাহ্মণগণের দ্যায় শিবপূজা করেন মাত্র, কিন্তু অনেকেই শিবমন্ত্রে মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ করেন না ; কাশ্মীরের ব্রাহ্মণগণ সবিশেয বিধানে শিবমন্ত্র গ্রহণ ও উপযুক্ত প্রণালীতে দীক্ষিত হইয়া থাকেন। কলাদীক্ষাগ্রন্থে এই দীক্ষা প্রণালীর বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ হইয়াছে। কথিত আছে, পুরাকালে শিব উপাসকগণের মধ্যে কেবল পাশুপত সম্প্রদায়ই ছিল। মহাভারতে পাশুপতশৈব ভিন্ন অপর কোন শৈব সম্প্রদায়ের নাম পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা ঐভায্যে (২।২৩৬ ) চারি সম্প্রদায় শিবোপাসকের পরিচয় প্রাপ্ত হই । যথা—কাপাল, কালামুখ, পাশুপত ও শৈব। শঙ্করভায্যের টীকাকার গোবিন্দাননা এবং বাচস্পতি মিশ্র ( ব্রহ্মস্বর ২২৩৭ ) এই উভয়েই চতুৰ্ব্বিধ শৈব সম্প্রদায়ের নামোল্লেখ করিয়াছেন। বাচস্পতি মিশ্র বলেন – “মাহেশ্বরশচত্বারঃ-শৈবা: পাশুপতাঃ কারণিকসিদ্ধাঙ্কিনঃ কাপালিকাশ্চেতি চত্বারোইপ্যমী মহেশ্বর প্রণীতসিদ্ধান্তাহমুযায়ি তয় মাহেশ্বরঃ * গোবিন্দানন্দ লিখিয়াছেন— “চত্বারো মাহেশ্বর –শৈবা পাগুপতা করণিকসিদ্ধান্তিন; কাপালিকাশ্চেতি । সর্বেইপ্যমী মহেশ্বরপ্রোক্তাগমাণ্ডুগামিত্ব মুহেশ্বর উচ্যন্তে ।” আননগিরিও এই চারি সম্প্রদায়ের নামোল্লেখ করিয়াছেন । আমরা সায়ণাচার্য্যের সর্বদর্শনসংগ্ৰহগ্রন্থে শিবোপাসকগণের দর্শনের নাম দেখিতে পাই, তদযথা( ১ ) লকুলীশপাশুপতদর্শন ( ২ ) শৈবদর্শন (৩) প্রত্যভিজ্ঞ দর্শন ( s ) রূলেশ্বরদর্শন
লকুলীশ পাশুপত সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এবং এই সম্প্রদায়ের দর্শনশাস্ত্র সম্বন্ধে সৰ্ব্ব প্রথমে আলোচনা কৰি। “লকুলীশ পাশুপত” নামটি সম্বন্ধেই সৰ্ব্বাগে আলোচ্য । “লকুলীশ" শব্দটা কি প্রকারে প্রবর্তিত হইল, তাহার ইতিহাস পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রাচীন অমুশাসন ও শিলালিপিতে “লকুলীশ পাশুপত” নাম দেখিতে পাওয়া যায়। পুরাণাদিতে এই নামোৎপত্তির ইতিহাসও বর্ণিত রহিয়াছে। যদিও সৰ্ব্বদর্শনসংগ্রহে এই সম্প্রদায়ের দার্শনিকতত্ব সম্বন্ধে কতিপয় কথা উল্লিখিত হইয়াছে বটে, কিন্তু এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তি সম্বন্ধে ইতঃপূৰ্ব্বে কেহ বিস্তৃত রূপে সন্দর্ডাদি প্রকাশ করেন নাই। অধুন। এসম্বন্ধে এক অভিনব ঐতিহাসিক আলোকরেখা প্রত্নতত্ত্ববিদগণের নয়ন সমক্ষে উপস্থাপিত হইয়াছে। মেবারের অন্তর্গত উদয়পুর হইতে ১৪ মাইল দূরে একলিঙ্গজীউর মন্দির। একলিঙ্গজী অতীব সুপ্রসিদ্ধ লিঙ্গ । ইহারই নিকটে নাথজীউর এক মন্দির আছে। এই মন্দিরের পূর্বদিকের প্রাচীরে বহু প্রাচীন একখানি শিলালিপি আছে । উছার প্রথম ছত্রে অতি স্পষ্টরূপে লিখিত আছে— “ওঁ ওঁ নমো লকুলীশায়।” এই স্থলে প্রথমতঃই “লকুলীশ” পদটা দেখিয়া মনে এক সন্দেহের উদ্রেক হয় যে, “নকুলীশ” নামটাই সৰ্ব্বজন বিদিত। “লকুলীশ” পদটা কি লিপিকর প্রমাদ ? কিন্তু এই শিলালিপি সম্পূর্ণরূপে পাঠ করা মাত্রই সেই ভ্রম তিরোহিত হইয়া যায়। উহাতে লিখিত আছে, মেকলনন্দিনী নৰ্ম্মদাতটবর্তী ভৃগুকচ্ছ ( ভরোচ, ) দেশে কোনও সময়ে মুরভি বিষ্ণু দ্বারা ভূগুমুনি অভিশপ্ত হন। ভৃগু গত্যন্তর না দেখিয়। মহাদেবের আরাধনায় প্রবৃত্ত হইলেন। মহাদেব তাহার আরাধনায় পরিতুষ্ট হইয়া লকুল বা লগুড় ধারণপূর্বক তৎক্ষণাৎ অবতীর্ণ হন । এই সময়েই মহাদেৰ লকুলীশ নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন। যে স্থলে তাহার এই লকুলশ রূপবর্ভাব হয় সেই স্থানের নাম—“কায়াবরোহণ।” পাশুপভযোগাবলম্বী কৌশিক প্রভৃতি কতিপয় শিবভক্ত যোগী অশ্বগ্রামে এই লকুলাশ শিবের মন্দির নির্মাণ করেন। বিক্রমাদিত্যেৰু ১-২৮ অন্ধে অর্থাৎ ৯৭১ খৃষ্টাম্বে এই শিলালিপি উৎকীর্ণ হয়। লকুলীশ মহাদেবের আবির্ভাব সম্বন্ধে আরও একটা প্রমাণ শি প্রশস্তিতে দৃষ্ট হয়, যথা—উলুকের পুত্র পিতৃশাপে পুত্রধনে বঞ্চিত হইয়া মহাম্বেবের তপস্ত করেন। পরম কারুণিক মহাদেব তাহার আরাধনায় পরিতুষ্ট হইয়া ভট্টারক শ্ৰীলকুলীণ বেশে গদা ধারণ করিয়া লাট প্রদেশে কায়ারোহণ নামক স্থানে অবতীর্ণ হয়েন। এই সময় কোশিক, গার্গ্য, কৌরুষ এবং মৈত্রেয় নামে