পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রঘুনন্দন ভট্টাচায্য সংগ্ৰহ-গ্ৰন্থ যে হরিভক্তিবিলাসের পরে সঙ্কলিত হইয়াছিল, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই । সনাতন গোস্বামিকৃত বৃহদ্বৈষ্ণবতোষিণী নামক ভাগবতের দশম স্বন্ধের টীকায় গ্ৰন্থসমাপ্তিকালে এইরূপ সংখ্যা প্রদত্ত হইয়াছে—“শাকে ষটুসপ্ততিমনে পূর্শেয়ং টপ্পনী শুভ।” আবার ঐ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের ৪র্থ শ্লোকের টীকায় তিনি লিথিয়াছেন,—“অন্তস্তুগবস্তুক্তিবিলাসটকায়াং কথামাহায্যে বিস্তারিতমেবাস্তি ।” সুতরাং হরিভক্তিবিলাসট ক। যে বৃহদ্বৈষ্ণবতোষিণীর পূৰ্ব্বে অর্থাৎ ১৪৭৬ শকের পুৰ্ব্বে রচিত হইয়াছিল, তাহ স্পষ্টতঃই অমুমান করা যায়। এতদ্বারা তাছার তত্তদগ্ৰস্থাংশ যে উক্ত সময়ের অগ্রপশ্চাতে সঙ্কলিত হইয়াছিল, তাহ অনায়াসেই নির্দেশ করিতে পারা যায়। তঞ্জিয় তাহার গ্রন্থে রায়মুকুটের ( ১৪৩১ খৃ: ) উল্লেখ ও নির্ণয়সিন্ধুতে ( ১৬১২ খৃ: ) তাহার স্মৃতিতত্ত্বের উল্লেখ দেখিয়৷ তাহাকে এতদুভয়ের মধ্যবৰ্ত্তী কালের লোক বলিয়া ধর যাইতে পারে। রঘুনন্দন অতি শাস্ত স্বভাব ও ধীরপ্রকৃতির লোক ছিলেন। কথিত আছে, হরিহরকে তাহার পুত্রের (রঘুনন্দনের) অসদচরণের ভীৰু কখন কাহারও অভিযোগ শুনিতে হয় নাই । রঘুনন্দন যেমন শাস্ত ছিলেন, বাল্যকাল হইতেই লেখাপড়াতে তাহার তেমনই মন:সংযোগ ছিল । তিনি পাঠশালার পাঠ শেষ করিয়া অত্যন্ত্ৰ কালমধ্যে ব্যাকরণ, অভিধান ও কাব্যাদি অধ্যয়ন করিয়া লইলেন । এষ্ট সময়ের মধ্যে র্তাeার সংস্কৃত ভাষায় বিলক্ষণ অধিকার জন্মিয়াছিল । তিনি সেই নধীন বয়সেই নব নব ভাবপুর্ণ কবিতাসমূহ লিখিয়া সহাধ্যায়ী ও অধ্যাপকের নিকট বিশেষ সমাদৃত হতেন। তা তার এ পু বিকাশ হইতেই অনেকে তাহার ভাবী মহত্বের অা ভ{স পাঠয়ছিল । | হরিহর ভঙ্গকুলীন-সস্তান ছিলেন । ভঙ্গকুলীনদিগের মধ্যে | তৎকালে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল। এই সকল । কু প্রথার বিরোধী হরিহর কাব্যাদি পাঠ শেষ না হওয়া পর্য স্তু স্বীয় পুলের বিবাহ দেন নাই । বিবাহের পর কইতেই বসুমণ্যন পি তার নিকট স্মৃতি অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । পিতার নিকট হইতে স্মৃতিশাস্ত্রে কথঞ্চিৎ বুৎপত্তি লাভ করিয়! তিনি নবদ্বীপের তাৎকালিক সুবিখ্যাত স্মৃতিবিং ও মীমাংসক শ্ৰীনাথ আচাৰ্যাচুড়ামণির নিকট অধ্যয়ন করিতে যান । প্রবাদ অাছে যে, তিনি বাসুদেবের নিকট ও শাস্ত্রগ্রন্থ অধ্যয়ন করিষ্কাছিলেন । রঘুনন্দনের সমকালই প্রকৃতপক্ষে বঙ্গের অভিনব সমুদ্ধির { ১৩৬ ] রঘুনন্দন ভট্টাচায্য সময় । এই সময়ে মহাত্মা ঐচৈতন্যদেব সনাতন বৈষ্ণবধৰ্ম্মের মৰ্ম্মোঙ্কেদ করিয়া সৰ্ব্ববর্ণের লোকদিগকে ধৰ্ম্মপথের পখিক করিতেছিলেন এবং তর্ক-কেশরী কাণভট্ট শিরোমণি স্বীয় আলোক সামায়ু প্রতিভা বলে ও অসাধারণ তর্কশক্তিপ্রভাবে মিথিলার গৰ্ব্ব থৰ্ব্ব ও নবদ্বীপে দ্যায়ের প্রাধান্ত স্থাপনের সঙ্গে বাঙ্গালাকে বিদ্যাগৌরবে শ্রেষ্ঠ আসন পাছতে অধিকারী করিয়াছিলেন । এই সময়ে রঘুনন্দন ধৰ্ম্মশাস্ত্রের লুপ্তপ্রায় তত্ত্বসমূহ মীমাংসা দ্বারা উদ্ধার করিয়া বঙ্গীয় হিন্দুসমাজে তৎসমুদায় অবশুপালনীয় বলিয়। প্রচলিত করিতে বন্ধপরিকল্প হইয়াছিলেন । ইহা দ্বার। বঙ্গে একাদিক্রমে বিদ্যা ধর্ণের গৌরব পরিবদ্ধিত হইয়াছিল । ঐ সময়ে বাঙ্গালার সিংহাসনে সুলতান সৈয়দ হোসেন শাহ উপবিষ্ট ছিলেন । হোসেন শাহের দেীর্গও প্রতাপ এবং প্রায় ৪ শত বৎসর মুসলমানসংসর্গে পড়িয়। তৎকালে বঙ্গ বাসিগণের আচার-ব্যবহার, রাতি নীতি অনেক পরিমাণে পরিবঞ্চিত হইয়াছিল এবং হিন্দুধর্মের বিমল জ্যোতিঃ ক্ষীণ ও মলিন হইয়া আসিতেছিল । দিন দিন যুবন সংসর্গে সমাজবন্ধন শিথিল হইয় পড়িয়াছিল—ব্রাহ্মণ ও শুদ্রমধ্যে কোনরূপ প্রভেদ ছিল না, আহার সম্বন্ধে ও অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছিল। অনেক হিন্দুই প্রকাগুভাবে ইসলাম ধৰ্ম্মে দীক্ষা গ্রহণ করিতেছিল ; এই সকল সামাজিক বিপ্লব লক্ষ্য করিয়া স্ব শ্বদর্শ রঘুনন্দন সমাজ-সংস্কারের আবশুকত। উপলব্ধি করিয়াছিলেন । পঠদ্দশায় ধৰ্ম্মশাস্ত্রসমুহ আলোচনা-কালে রঘুনন্দন বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে প্রাচীন শাস্ত্রকারগণের “নানা মুনির নানা মত” ; এবং নব্য স্মৃতিসংগ্রাহকগণ ও সেই মতসমুহের প্রকৃত সামঞ্জস্ত করিতে সমর্থ হন মাই। সেই প্রাচীন ও নব্য স্তুতকারদিগের সময়োচিত মত-সামঞ্জস্ত করিতে ন পারিলে ধম্মামৃষ্ঠান করা কঠিন ব্যাপার এবং তজ্জন্তই ধৰ্ম্মাচরণ সম্বন্ধে সমাজে ঘোর বিশৃঙ্খল উপস্থিত হইয়াছে। হিন্দুসমাজকে ধৰ্ম্মশাসনে শাসিত করিতে ন পারিলে আর ধৰ্ম্মরক্ষার উপায় নাই বুঝিয়া, স্মাৰ্ত্তবীর রঘুনন্দন সমাজ বন্ধন দৃঢ়করণার্থ ধৰ্ম্মশাস্ত্রের নুতন টকা প্রস্তুত করিতে কুত ংকল্প হইলেন । * স্মৃতিসংগ্ৰহ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াই তিনি প্রথমে মলমাসতত্ত্বসংগ্রহে ব্ৰতী হন। ঐ গ্রন্থের প্রারস্তে তিনি স্বরচিত তত্বগ্রন্থসমুছের এইরূপ একটা তালিকা নির্দেশ করিয়াছেন,— “মলিয়,চে দায়ভাগে সংস্কারে শুদ্ধিনির্ণয়ে । প্রায়শ্চিত্ত্বে বিবাহে চ তিথেী জন্মাষ্টমীব্ৰতে ॥ 维