পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজগৃহ ৭ম শতাব্দীর মধ্যভাগে চীনপরিব্রাজক হিউএনসিয়াং যখন রাজগৃহ,দর্শনে আগমন করেন, তখনই ইহার বহিঃপ্রাচীরসমূহ বিধ্বস্ত প্রায়, কিন্তু ভিতরের প্রাচীরগুলি তখনও ভগ্ন হয় নাই । তথনই ইহার পরিধি প্রায় ৩২ মাইল । এখন যাহ অবশিষ্ট চিহ্ন আছে, তাহা ও প্রায় ৩ মাইল হইবে । দক্ষিণাংশে পাহাড়ের দিকে গড় ছিল, এখন তাহার মুন্ময় প্রাকারের প্রস্তরময় প্রাচীরসমূহ অনেক স্থানে বেশ ভালই রছিয়াছে। শ্রেণিক-অধিষ্ঠিত নৰরাজগৃহ এখন "রাজগির’ নামেই খ্যাত । রাজগৃহের উত্তরাংশে ‘রাজগির’ নামে একটা নুতন গ্রাম আছে। ঞ্জৈন-প্রভাষ । [ ৩৫৬ ] শ্রেণিক বিন্ধিসারের সময় হইতেই রাজগৃহে জৈনপ্রভাব বিস্তৃত হয়। শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর স্বামী এথানকার | বিপুলাচলে বহুকাল অবস্থান করিয়া মগধপতি শ্রেণিককে জিনতত্ত্ব উপদেশ করিয়াছিলেন। প্রাচীন জৈনপুরাণ ও | অঙ্গ হইতে জানা যায় যে শ্রেণিকরাজ মহাবীর স্বামীর একজন । প্রকৃত ভক্ত ছিলেন। তাহারই সময়ে শত শত ব্যক্তি এথানে নিগ্ৰস্থ বা জিনধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন। মহাবীরের অধিষ্ঠান হেতু রাজগুহু জৈনদিগের নিকট একটী মহাপুণ্যক্ষেত্র বলিয়া গণ্য হইল । তাহার সময়ে বুদ্ধদেবের অভু্যদয় ও তৎপরবর্তী কালে রাজগৃহ ও পঞ্চশৈলের সব্বত্র বৌদ্ধ প্রভাব বিস্তৃত হইলেও এখানকার শৈলশিখর হইতে জৈনসাধুসংস্রব বিদূরিত হয় | নাই । মহাবীরের অধিষ্ঠানভূমি বিপুলগিরি ব্যতীত স্বর্ণাচল, ( সোণাগিরি ), রত্নাচল, বৈভার ও উদয়গিরিতে ও সুপ্রাচীন ঞ্জৈনকাস্তিসমূহের প্রভূত নিদর্শন পড়িয়া রহিয়াছে । বিপুলগিরিশিখরে পাশ্বনাথের মুক্তির পাদদেশে যে খোদিত শিল। লিপি আছে, তাছা হইতে আমরা জানিতে পারি যে, খৃষ্টীয় ৮ম ব৷ ৯ম শতাব্দী পর্য্যস্ত এথানে জৈনসমাগম ছিল, তৎপরে এখানে ব্রাহ্মণগণের পুনরভু্যদয় ও অবশেষে মুসলমানগণের অত্যাচারে এখান হইতে জৈনসংস্রব এক কালে লুপ্ত হইয়াছিল । বলতে কি, খৃষ্টীয় ১০ম শতাব্দীর পর হইতে ১৭শ শতাব্দীর শেষ পৰ্য্যন্ত এখানে আমরা কোনরূপ জৈনসংস্রবের প্রমাণ পষ্ট না। খৃষ্টীর ১৮শ শতকে মুসলমান প্রভাব বিলুপ্ত হইলে রাজগৃহের পঞ্চশৈলোপরি আবার জৈন তীর্থধাত্ৰিগণের সমাগম ই ইভে লাগিল । আবার সেই সঙ্গে জৈন ধনকুবেরগণের যত্নে পঞ্চশৈলের তুঙ্গশিখরে নানা জিনালয় প্রতিষ্ঠা ও গ্রাচীন জৈনকান্ত্রিসমূহের জীৰ্ণোদ্ধার চলিতে লাগিল। এইরূপে চতুৰ্ব্বিংশতি তীর্থঙ্করমূৰ্ত্তি ও তীর্থঙ্করদিগের পাদুকাসমূহ প্রতিষ্ঠিত হইল । খৃষ্টীয় ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীর জৈনকীৰ্ত্তিই এখন দর্শকদিগের নয়নপথে পতিত হুইয়। থাকে । রাজগৃহ বৌদ্ধপ্রভাব । জৈনপ্রভাবের মুহিত বৌদ্ধপ্রভাবও দেখা দিয়াছিল। মহাবারের অনতিকাল পরেই বুদ্ধ শাক্যসিংহ বৈভারশৈলে আগমন করেন এবং তাহার ধৰ্ম্মোপদেশ শুনিবার জন্ত মগধপতি বিম্বিসার হইতে রাজগৃহবাসী জনসাধারণ সকলেই বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হইয়াছিলেন। বুদ্ধ শৈলের শিরোদেশে থাকিতেন, তাহাকে দেখিতে হইলে দুরারোহ পথ অতিক্রম করিয়। যাইতে সাধারণের বড়ই কষ্ট হুইত, এ কারণ রাজ। বিম্বিসার পাহাড় কাটিয়া পাথর দিয়া সিড়ী করিয়া দিয়াছিলেন। চীনপরিব্রাজক হিউএন্‌সিয়াং খৃষ্টীয় ৭ম শতাকে রাজগুহুদর্শনে আসিয়া বর্ণনা করেন যে, যেখানে ৰিন্থিসার বুদ্ধদৰ্শনার্থ পৰ্ব্বতপ্রাস্তে অবতরণ করিতেন, সেই স্থান “রথাবতরণ” নামে খ্যাত হইয়াছিল । মগধপতি বুদ্ধদেবের স্মরণার্থ কএকটা স্ত,পও নির্মাণ করাইয়াছিলেন। রাজগৃহের পঞ্চশৈলোপরি কিরূপ বৌদ্ধপ্রভাব বিস্তৃত হইয়াছিল, চীনপরিব্রাজক ফা-হিয়ান ও হিউএন সিয়াংএর ভ্রমণবৃত্তান্ত হইতে আমরা তাহার কতক পরিচয় পাই । ফা-হিয়ান খৃষ্টীয় ৫ম শতাব্দে আসিয়া নবরাজগৃহে দুইট সঙ্ঘারাম, হার পশ্চিমতোরণের কিছু দূরে রাজা অজাতশত্রনিৰ্ম্মিত একটা সমুচ্চ বুরুজ ( এথানে বুদ্ধের দেহাবশেষ রক্ষিত ), নগরের দক্ষিণতোরণ হইতে প্রায় অৰ্দ্ধক্রোশ দূরে পঞ্চশৈলবেষ্টিত উপত্যক৷ মধ্যে জনমানবশূন্ত বিধ্বস্ত প্রাচীন রাজগৃহ, বুদ্ধদেবকে বিনাশ করিবার জন্ত নিগ্ৰস্থ যে অগ্নিকুও প্রস্তুত করিয়াছিলেন সেই অগ্নিকুণ্ড, নগরের উত্তর-পূৰ্ব্বে আম্রপালীর উদ্যান মধ্যে জীবক বৈষ্ঠনিৰ্ম্মিত বিহারের ভগ্নাবশেষ (এখানে বুদ্ধদেব ১২৫০ জন শিষ্যসহ নিমন্ত্রিত হইয়াছিলেন ), উপত্যক দিয়া গিরিমালা অতিক্রম করিয়া প্রায় ২॥• ক্রোশ দুরে গৃধ্ৰুকুটশৈল, তাছার অধিক্রোশ দূরে দক্ষিণমুখী গুহা ( এখানে বুদ্ধদেব ধ্যানস্থ থাকিতেন ), তাহারই অদূরে একটা শৈলকুট (এখানে আনন্দ ধ্যান করিতেন ) • তাঙ্গারই অদূরে ৪ জন অহঁতের ধ্যানগুফ, এইরূপ আরও শত শত শুফ, শৈলের উত্তরদিকে একটা ভগ্নাবশিষ্ট দরদালান ( এখানে বুদ্ধদেব ধৰ্ম্মোপদেশ দান করিতেন ), প্রাচীন নগরের উত্তরে বৌদ্ধাচায্য সেবিত করওবেণুবনবিহার, তাহার পোয়াখানেক পথ উত্তরে মহাশ্মশান, দক্ষিণশৈল ভেদ করিয়া পশ্চিমে কিছু দূরে আসিলে বুদ্ধের মধ্যাহ্নাহারের পর ৯ মার গৃধ্ৰুরূপ ধারণপূর্বক এখানে আনন্দকে ভয় দেখান, বুদ্ধের প্রভাবে তাহার মায় বার্থ হয়। তদবধি এই গিরির নাম “গৃধ্ৰুকুট হইল, এখানে ফা-হিয়ানুগৃধ্ৰুপক্ষীর চিহ্ন দেখিয় গিরছিলেন।