পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ [ ৩৯৪ ] রাজসিংহ করিয়া ফেলিলেন। এই যুদ্ধে মোগলসেনাদলের আবশ্বকীয় নানাবিধ দ্রব্যসন্তীয় রাজপুতগণের হস্তগত হয় । সম্রাট অরঙ্গজেব পুত্ৰ আজিমের সহিত দোবারী নামক স্থানে আকবর ও দেলবার ধার রণজয়ের সংবাদের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, ইত্যবসরে বিজয়ী রাজপুতসৈন্ত প্রবল বিক্রমে তদfভমুখে অগ্রসর হইয়া সম্রাটুকে জtফ্রমণ করিলেন । বিখ্যাত ধীর দুর্গাদাস স্বীয় রাঠোরবাহিনী লইয়া এরূপ ভীমবেগে সম্রাটের সম্মুখীন হইলেন যে, সম্রাট স্বয়ং সেই সময়বেগ সহ করিতে না পারিয়া পরাজয় স্বীকারপুৰ্ব্বক পলায়ন করিতে বাধ্য হন। ১৬৮০ খৃষ্ঠাদের মার্চমাসে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় । পরাজিত যবন-সম্রাটু হতাবশিষ্ট সেনাদল লইয়া চিতোরের প্রাকারমূলে উপনীত হইলেন এবং স্বীয় পুত্র মুমাজিমৃকে দাক্ষিণাত্য হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইতে আদেশ পাঠাইলেন। এই সময়ে মুসাজিম মহারাষ্ট্রকুলপতি শিবাজীর সহিত যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় সম্রাটের তৎকালে শিবাজীর স্বাধীনতালোপাপেক্ষ রাজপুতযুদ্ধের প্রনষ্টগৌরব উদ্ধার করাই শ্রেয়ঙ্কর বোধ হইয়াছিল, সুতরাং পিতার আদেশ প্রাপ্তিমাত্রেই মুআজিম রাজস্থানে প্রত্যাবৃত্ত হইতে বাধ্য হইলেন । ইত্যবসরে জয়মপ্লের বংশধর সুবলদাস সেনাদল লইয়া আজমীরস্থ মোগললৈঙ্কের সহিত চিতোরস্থ সম্রাটুসৈন্তের সংযোগ বন্ধ করিবার জন্ত চলাচলের পথ রুদ্ধ করিয়া ফেলিলেন । নিরূপায় সম্রাটু নিজপুত্র আজিম ও আকবরের উপর সমরভার সমপণ করিয়া প্রাণ লইয়৷ গোপনে শরীর রক্ষী সেনাদল সমভিব্যtহারে আজমীরে গমন করিলেন এবং রোহিল্লা খাকে স্বাদশসহস্ৰ সৈন্তের নেতৃত্বে বরণ করিয়া সুবলদাসের বিরুদ্ধে অবিলম্বে গমন করিম্ভে আদেশ দিলেন । মিলিত মারবাড় ও রাঠোরসৈন্ত পুরমণ্ডল নামক স্থানে মোগলসেনাদলকে পরাভূত করিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপৰ্য্যস্ত মোগলগণ ভগ্নহৃদয়ে আজমীরে প্রত্যাবৃত্ত হইল । যে সময়ে রাণ রাজসিংহ স্বীয় সহযোগী রাজপুতনায়কবুন্দের সহীয়ে মোগলসৈন্তকে পরাজিত করিয়া জয়ার্জন করিতেছিলেন, সেই সময়ে তাহার দ্বিতীয় পুত্র ভীমসিংহ বৃথাকালক্ষেপ না করিয়া গুজরাভ, ইদোর, বীরনগর, সিদ্ধপুর, ময়ূরখে প্রভৃতি নগর জয় ও লুণ্ঠন করিয়া পিতার আদেশামুসারে সৌরাষ্ট্রবিজয় হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইলেন । , এদিকে দয়tলশাহ নামক সম্রাটের রাজস্বৰিভাগীয় জনৈক রাজপুতকৰ্ম্মচারী মোগলরাজের বিরুদ্ধে অভূখিত হইয়। মালব হইতে নৰ্ম্মদ ও চেক্টৰ পৰ্য্যন্ত সমুদায় ভূভাগ আক্রমণে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি শাঙ্গপুর, দিৰাস, মাণ্ডু, উজ্জয়িনী ও চন্দেরি প্রভৃতি প্রদেশসমূহ জয় ও লুণ্ঠন করিয়৷ দুর্গশিবিরে জয়পতাকা উড়ন করিলেন। জয়োল্লাসে উদ্ধৃপ্ত দয়ালশাহ মেবারের যুবরাজের সহিত সম্মিলিত হইয়। চিতে - রের সন্নিকটে সম্রাটুপুত্র আজিম্কে পরাভূত করিবার মানসে যুদ্ধার্থ অগ্রসর হইলেন। খিচীরাজ্যের ও রাঠোর সেনানীগণ মেবারের সামন্তরূপে নিযুক্ত হইয়। রাজপুত-বীরত্বের পরাকাষ্ঠী প্রদর্শন করিল। যুদ্ধে আজিম পরাস্ত ও বিতাড়িত হষ্টলেন । সম্রাটের পরাজিত সেনাদল বিতাড়িত হইবামাত্র মিবারের জtভীয় সমরের অবসান হইলে । অতঃপর রাণ রাজসিংহ মারবাড়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক রাজ{ অঞ্জিতসিংহের স্বার্থরক্ষণার্থ মারবাড়রাজ-সেনার সহিত স্বীয় সেনাদল সম্মিলিত করিয়া গদবার প্রদেশের অন্তর্গত গণোর আ ক্রমণ করিলেন । মেবার-কুলললন। অজিতের মাতা ও এই যুদ্ধে সসৈন্তে যোগদান করিয়া সমরাঙ্গণে অবতীর্ণ হইলেন । রাজকুমার ভীমসিংহ রাজপুঙসেনার অধিনায়ক হইয়। মোগলসেনানী আকবর ও তাইবার থাকে সদলে পরাজিত করিলেন। রাণ রাজসিংহ যুদ্ধে জয়লাভ করিবার পর, মোগলসম্রাটু অরঙ্গজেবকে সিংহাসনচ্যুত করিবার অভিপ্রায়ে কুমার অকবরের সহিত গুপ্তষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইলেন। জয়োদৃপ্ত রাজপুতবাহিনী শুভক্ষণে আসিয়া আকবরের সহিত যোগদান করিল। সম্রাট, অচিরে এই সংবাদ পাইলেন। তিনি তাহাদের ষড়যন্থজাল ছিন্ন করিবার অভিপ্রায়ে আজমীর হইতে পুত্র আকবরের নিকট পত্র পাঠাইলেন । গুপ্তচর সম্রাটের আদেশমত ঐ পত্ৰখানি লইয়। রাজপুত-সৈন্যদলের অধিনায়ক দুর্গাদাসের শিবির মধ্যে সংগোপনে নিক্ষেপ করিলেন। দুর্গাদাস পত্ৰমৰ্ম্ম অবগত হইলেন। তাহাতে ঘোর যুদ্ধের সময় আকবরকে রাজপুত সেনাদলের পশ্চাদ্ভাগ আক্রমণের কথা লিখিত হইয়াছে। এই সংবাদ পাইয়। রাজপুতগণ আকবরের পক্ষত্যাগ করিল। এদিকে তাহার সহযোগী তাইবার খ। গুপ্তভাবে সম্রাটের নিধনসাধন করিতে গিয়৷ আপনিই প্রাণ হারাইলেন । এই অবসরে মুঙ্গাজম ও আজিম সৈন্তসহ আসিয়া অরঙ্গজেবকে আসন্নবিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন। রাজপুত্তগণ অরঙ্গজেবের কুটিলতা বুঝিতে গারিলেন । এখন তাহারা আকবরের নির্দোষিত উপলব্ধি করিয়া উহাকে সাহায্য করিতে প্রস্তুত হইলেন, কিন্তু আকবর ক্রুদ্ধ পিতার সন্নিকটবর্তী রাজ্যে বাস কয়৷ বিপদসঙ্কুল জ্ঞান করিয়া পারস্তরাজ্যে পলায়ন করিলেন। বীর দুর্গাদাস তাহাকে পালায়গড় পর্য্যস্ত নিরাপদে পৌঁছিয়া দিলেন।