পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামচন্দ্র নিকট হইতে বিদায় লইয়। বনে না যাইবে, ততক্ষণ ইনি স্নান ৰ। ভোজন কিছুই করিবেন না।” কৈকেয়ীর এই নিদারুণ বাণী শুনিয়! মহারাজ দশরথ বজ{হতের স্তায় অজ্ঞান হুইয়া ভূতলে পড়িয় গেলেন । সৌম্যমূৰ্ত্তি ও ধনস্পৃহাহীন রামচন্দ্র তাছাকে ধরিয়া তুলিলেন এবং কৈকেয়ীর শঙ্কা-দর্শনে দুঃখিত অথচ দৃঢ় স্বরে বলিলেন,— “দেবি ! আমি স্বার্থপর হইয়া পৃথিবীতে বাস করিতে ইচ্ছুক নহি, আমাকে ঋষিদিগের তুল্য বিমল ধৰ্ম্মাশ্রিত বলিয়া জানিবেন । পিতা নাই বা বলিলেন, আমি আপনারই আজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য করিয়া চতুর্দশ বৎসরের জন্ত বনে যাইব । মাত কৌশল্যাকে ও সীতাকে বলিয়। অনুমতি লইতে যে বিলম্ব, সেইটুকু অপেক্ষ করুন।" এই বলিয়া সংজ্ঞাহীন পিতা ও কৈকেয়ীর পদবন্দনা করিয়। রামচন্দ্র ধীরে ধীরে যাইতে লাগিলেন ; চতুরখযোজিত রথ তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল, তিনি সে পথে গেলেন না ; উৎকণ্ঠিত পৌরজন সাগ্রহে তাহাকে দেখিবার জন্ত প্রতীক্ষা করিতেছিল, তিনি তাহাদের দৃষ্টিবহির্ভূত পন্থায় চলিলেন, অনুবর্ণ হেমছত্রধর ও ব্যজনক (রাদিগকে বিদায় দিয়া তিনি অভিষেক-শালার বিচিত্র সম্ভারের প্রতি একবার মাত্র দৃষ্টপাত করিয়া চক্ষু প্রতিনিবৃত্ত্ব করিলেন। সিদ্ধপুরুষের ন্তায় তাহার মুখমণ্ডলে কোনরূপ অধীরত। প্রকাশ পাইল না । তিনি মনের ভাব মনে রাথিয়া শনৈ: শনৈ: মাতৃমন্দিরের অভিমুখে অগ্রসর হইলেন । জননীর নিকট উপস্থিত হইয় তাহার দুঃখ-নিরুদ্ধ হৃদয়জা ত নিশ্বাস ঘন ঘন বহিতে লাগিল, তিনি কম্পিত কণ্ঠে বলিলেন, ‘দেবি ! আপনি কি জানেন না, মহন্ডুয় উপস্থিত হইয়াছে ; মাতৃদত্ত উপাদেয় আহার ও মহার্ঘ্য আসনের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন,"আমাকে মুনির মত কষায় কনফলমূল খাইয়া জীবনধারণ করিতে হইবে, এই থাস্তে আমার আর প্রয়োজন নাই,-আমি কুশাসনের যোগ্য , এ মহার্ঘ্য আসনে আমার আর স্থান নাই ।” কৈকেয়ীর নিকট রাজার প্রতিশ্রুতির কথা বলিয়া বনবাসঘাত্রার জন্ত মাতৃপাদপদ্মে অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। শোকাকুল মাড়। তখন কাদিতে কাদিভে বলিলেন, “রাম ! স্ত্রীলোকের প্রধানতম মুখ পতিয় স্নেহসম্পদ, আমার ভাগ্যে তাহ ঘটে নাই। আমি কৈকেয়ী কর্তৃক সৰ্ব্বদ। নিগৃহীত হইয়াছি। আমার লেবায় নিযুক্ত পরিচারিকাগণ কৈকেয়ীর পরিজনবর্গ দেখিলে ভীত হয়। বৎস, আমি তোমার মুখের দিকে চাহিয়া সমস্ত সহ করিয়াছি। তুমি ৰনে গেলে আমি কোথায় দাড়াইব । দেখ গাভীগুলি বনে ৰৎসের [ 86° J রামচন্দ্র অমুগমন করে, আমাকে তোমার সঙ্গে লইয়। যাও।” এই সকল মৰ্ম্মচ্ছেদী কাতরোক্তি শুনিয়। রাম নাম। প্রকারে মাতাকে সাস্বনা করিতে চেষ্টা পাইলেন ; অশ্রুমুখী শোকোম্মাদিনী জননীর নিকট স্বীয় উদ্যত অশ্র দমন করিয়া বারংবার বনবাসের অনুমতি ভিক্ষা করিতে লাগিলেন । ক্ৰোধারিতনেত্রে লক্ষ্মণ এই অন্যায় আদেশ-পালনের বিরুদ্ধে বহু যুক্তির অবতারণা করিয়া ধনু লইয়৷ ক্ষিপ্তবৎ বলিয়া উঠিলেন, “কৈকেয়ীতে আসক্ত বৃদ্ধ পিতাকে আমি হত্যা করিব।” তখন রামচন্দ্র লক্ষ্মণের হস্ত ধরিয়া ক্ৰোধপ্রশমনের চেষ্টা করিতে লাগিলেন এবং পরম সৌম্যভাবে স্নেহাৰ্দ্ৰকণ্ঠে বলিলেন,—“সৌমিত্রে, আমার অভিযেকের জন্ত যে সস্তার ও আয়োজন হইয়াছে, তাহ আমার অভিষেকনিবৃত্তির জন্ত হউক । পিতৃভক্ত বিষয়-নিম্পূহ কুমারের স্নিগ্ধ কিন্তু অটল সংকল্পে এই মহাশোক ও ক্রোধের অভিনয়ক্ষেত্রে এক অসামান্ত বৈরাগ্য ও বীরত্বের শ্রী প্রতিভাত হইল ; কৌশল্য বলিলেন, “রাজা তোমার যেমন গুরু, আমিও তেমনই গুরু, আমি তোমাকে বনে.যাইতে দিব না, তুমি মাতৃ আজ্ঞা লঙ্ঘন করিয়া কেমন করিয়া বনে যাইবে ? লক্ষ্মণ বলিলেন, “কামাসক্ত পিতার আদেশ পালন অধৰ্ম্ম ।” রামচন্দ্র অবিচলিতভাবে বিনীত স্নেহপূরিত কণ্ঠে মাতাকে বলিলেন, “কণ্ডু ঋষি পিতার আদেশে গোহত করিয়াছিলেন, আমাদের কুলে সগরের পুত্ৰগণ পিতার আদেশপালন করিতে যাইয়। নিহত হইয়াছিলেন, পরশুরাম পিতৃ-আদেশে স্বীয় জননী রেণুকার শিরশেদ করিয়াছিলেন ; পিতা প্রত্যক্ষ দেবতা,—তিনি ক্রোধ, কাম বা যে কোন প্রবৃত্তির উত্তেজনায় প্রতিশ্রুতি দান করিয়া থাকুন না কেন, আমি তাহার বিচার করিব না, আমি তাহার বিচারক মছি । আমি তাহt নিশ্চয়ই পালন করিব।” এই বলিয়া রোরুদ্যমান জননীর নিকট ধৰ্ম্মোদেশে বনে যাইবার জয় বারংবার অনুমতি প্রার্থন করিডে লাগিলেন । কৌশল্য রামের আশ্চৰ্য্য সাধুসংকল্প দর্শনে সাস্তুনা লাভ করিলেন এবং শত শত আশীষ-বাণী বলিয়া অশ্রুসিক্তকণ্ঠে প্রাণপ্রিয় পুত্রকে বনবাসের অনুমতি প্রদান করিলেন । ইতিপূৰ্ব্বে রাম সীতার কণ্ঠগল্প হইয় তাহার কর্ণে কত আশার কথা জাগাইয়া আসিয়াছেন, কোন মুখে তাহাকে এই নিদারুণ কথা শুনাইবেন । রামের অভ্যন্ত দৃঢ়তা শিথিল হইয়া আসিল, আর সে অধিকৃত সৌম্যভাব নাই, তাহার মুখশ্ৰী ৰিবৰ্ণ হইল,তাহার সুন্দর শুiম-ললাটে দুশ্চিস্তার রেখা জঙ্কিত হইল। গীত। তাছাকে দেখিবামাত্রই বুঝিতে পারিলেন, কি ধেন