পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামচন্দ্র [ ৪৫৬ ] রামচন্দ্র “হে গ্রিয়ে,তুমি বৃক্ষের অন্তরালে লুকায়িত হইতেছ কেন ? আমি তোমাকে দেথিতে পাইতেছি । তুমি আমার সঙ্গে কথা কহিহেছ না কেন ? তুমি ত পুর্কে আমার সঙ্গে এরূপ পরিহাস করিতে না,—তুমি দাড়াও,—যাইও না, আমার প্রতি তোমার করুণা নাই ?” এই বলিয় রাম সীতাধ্যানে নিমগ্ন হইয়া নিষ্পন্দভাবে দাড়াইয়। রছিলেন । ক্ষণেক পরে তাহার এই বিমুঢ়তা ঘুচিলে তিনি পুনশ্চ সীতাম্বেষণে প্রবৃত্ত হইলেন। গীতাকে কেহ হরণ করিয়া লইয়াছে, এই আশঙ্ক। রামের মনে উদিত হয় নাই ; তাহার ধারণ হইল সীতাকে স্বাক্ষসগণ থাইয়া ফেলিয়াছে । তাঙ্কার শুভ. কু গুলের দীপ্তি-উদ্ভাসিত বক্রান্ত-কেশ সংস্কৃত, মুন্দর পুর্ণচন্দ্রের ন্যায় মুথম গুল, সুচারু নাসিক ও শুভ্ৰ ওষ্ঠাধর রাক্ষসের ভয়ে মলিন ও শুষ্ক হইয়া গিয়াছিল । তাহার পল্লব-কোমল বাহু, সুন্দর অলঙ্কার, সকলই রাক্ষসগণের উদরস্থ হইয়াছে ভালিস্থা রামচন্দ্র পলকহীন উন্মাদ-দৃষ্টিতে আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকাইয়া রহিলেন এবং ক্ষণপরে চলিতে লাগিলেন । একবার দ্রুত এক বার বা মস্থরগতিতে উন্মত্ত্বের দ্যায় নদ নদী ও নিঝ- } fরণী-মুখরিত গিরি প্রদেশে ভ্রমণ করিতে করিতে বলিলেন, ' “লক্ষ্মণ, পদ্ম বনাকীর্ণ, গোদাবরীর বেলাভূমি, কমার ও নিঝ রপুর্ণ গিরি প্রদেশ প্রাণাধিক সীতার জন্ত সকল স্থান তন্ন তন্ন । করিয়া খুজিলাম,তাহাক ত পাইলাম না।” এই বলিয়। মুহূৰ্ত্তকাল শোকাবেগে বিসংজ্ঞ ভাবে ধরণী,পৃষ্ঠসংলগ্ন হইয় পড়িলেন । তখন তাহার গভীর ও ঘন নিশ্বাস ধরণীর গাত্রে নিপতিত ইষ্টতে লাগিল । কতক্ষণ পরে রাম লক্ষ্মণকে অযোধ্যায় ফিরিয়া যাইতে আলুরোধ করিলেন ও বলিলেন, “আমি অযোধ্যায় আর কোন মুখে সাইব,বিদেহরাঞ্জ দুহিত সীতার কথা বলিলে আমি কি কহিব ? , ভরতকে তুমি গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া বলি ও রাজ্য যেন চিরদিন সে-ই পালন করে । আমার মাতা কৈকেয়ী, সুমিত্র ও কোশল্যাকে সমস্ত অবস্থা বলিং তাহাদিগকে যত্নের সহিত পালন করিও।” | লক্ষ্মণ অনেক উপদেশ-বাক্যে রামের মনে সাম্বন দিতে | চেষ্টা করিলেন। কিন্তু তিনি পুনরপি বলিতে লাগিলেন,— | “আমাকে ঋষিতুল্য বিমল ধৰ্ম্মাশ্রিত বলিয়া জানিও” যাহাকে | রাজ্ঞানাশ ও মুন্ধবিরহ অভিভূত করিতে পারে নাই, পিতা যাহার ‘রাম’ নাম কণ্ঠে বলিতে বলিতে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন, এবম্বিধ পিতৃশোকেও ধিনি বিহবল হন নাই,-আজ তিনি | কিন্তু আবার লক্ষ্মণকে বলিলেন,—“লক্ষ্মণ গোদাবরী নদী শীঘ্র খুজিয়া আঙ্গস, হয় ত সীতা পদ্ম আনিতে সেখানে গিয়াছেন।” লক্ষ্মণ গোদাবরীকুলে সীতার অন্বেষণে পুনঃ প্রবৃত্ত হইলেন, উচ্চৈঃস্বরে চতুদিকে ডাকিতে লাগিলেন, নীরব অযুগোদ প্রদেশের বেতসবন হইতে প্রতিধ্বনি তাহার কণ্ঠের অনুকরণ করিল। তিনি দুঃখিত হইয় ফিরিয়া আসিয়া রামচন্দ্রকে বলিলেন—“ক্লেশনাশিনী বৈদেহী কোন দেশে গিয়াছেন ?--অামি ত তাছার সন্ধান পাইলাম না।” লক্ষ্মণের কথা শুনিয়া শোকাকুল রামচন্দ্র নিজে পুনরায় গোদাবরীতীরে উপস্থিত হইলেন। ক্রমশঃ তাহার। দক্ষিণ দিক পর্যটন করিতে করিতে সাতার অঙ্গভূষণ কুমুমদাম ভূপতিত দেখিতে পাইলেন। তখন অশ্রুসিক্ত চক্ষে রামচন্দ্র বলিলেন—পৃথিবী, স্বৰ্য্য ও বায়ু এই পুষ্পগুলি রক্ষা করিয়৷ আমাকে সুখী করিয়াছেন । কতক দূরে যাহতে যাইতে র্তাহারা দেখিলেন,—মৃত্তিকার উপর রাক্ষসের বৃহং পদ-চিহ্ন অঙ্কিত রহিয়াছে, পাশ্বস্থ ভূমি শোণিত-লিপ্ত, তাহাতে সীতার উত্তরীয়শ্বলিত কনকবিন্দু পতিত রহিয়াছে, অদূরে এক পুরুষের বিকৃত শব ও বিশণ কবচ এবং তৎপাশ্বে যুদ্ধরথ চক্রহীন হইয়ু পড়িয়া আছে ও তৎসংলগ্ন পতাকা শোণিত ও কর্দমাদ্র। এই দৃশু দেখিয়া রামচন্দ্রের পূর্বাশঞ্চ বদ্ধমুল হইল-রাক্ষসেরা সীতার সুকুমার দেহ থtহয়। ফেলিয়াছে,—তাহার দেহ অধিকারের জন্য পধুপরের মধ্যে ঘোর দ্বন্দ্বযুদ্ধ হইয়াছিল—এ সকল তাছারই নিদর্শন। রামের চক্ষু ক্রোধে তাম্রবর্ণ হইয়া, উঠিল, তাহার ওষ্ঠসংপুট স্ফুরমাণ হইতে লাগিল, বল্কলাজিন বন্ধন করিয়া পৃষ্ঠলোলিত জটাভার গুছাইয়া লইলেন এবং লক্ষ্মণের হস্ত হইতে ধনুগ্রহণ পুৰ্ব্বক ক্ষিপ্তভাবে বলিলেন—“যেরূপ জরা মুতু্য ও বিধাতার ক্রোধ অনিবাৰ্য্য,—সেই রূপ আজ আমাকে ও কেহ প্রতিরোধ করিতে পরিবে না।” তিনি যাহা কিছু সম্মুখে দেখিবেন, সকলই নষ্ট করিয়া সীতা-বিনাশের প্রতিশোধ তুলিবেন । জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার এই প্রকার উন্মুক্তভাব দর্শন করিয়া লক্ষ্মণ অনেক স্নিগ্ধ উপদেশ প্রদান করিলেন,— যেরূপ কথায় প্রাণ জুড়াইয়া যায়, সেইরূপ শান্তি-পূর্ণ উপদেশে রামের চিত্তব্যথা হরণ করিতে চেষ্ট পাইলেন। তঁtহার আরও দুরে যাইয়া শোণিতা বৃহদেহ মুমুঘু জটায়ুকে দেখিতে পাইলেন । রাম তাছাকে দেখিবামাত্র উন্মত্তভাবে “এই রাক্ষস সীতাকে খাইয় নিশ্চলভাবে পড়িয়া আছে" বলিয় তাহাকে বধ করিবার জন্ত ধনুতে মৃত্যুতুল্য শর আরো l শোকোৱন্ত। গোদাবরীর নীকুল ভয় উন্ন করিয়া খুজিয়াছেন, পিত করিলেন। জটায়ুর প্রাণ কণ্ঠাগত, তিনি কথা বলিতে