রোমসাম্রাজ্য রাজ্যসীমা বিস্তার করেন । তৎপরে তিনি তাহার দক্ষিণস্থিত মিসিয়া (৬ খৃঃ অঃ), পানোনিয়া (৯ খৃঃ অঃ ), নোরিকাম্ (১৫ খৃঃ পূঃ), রিটিয়া (১৫ খৃঃ পূঃ) ও গালিয়া-বলজিক প্রভৃতি প্রদেশ অধিকারপূর্বক স্বশাসন প্রতিষ্ঠা দ্বারা শাস্তিস্থাপন করিতে চেষ্ট পান। ৯ খৃষ্টাকে ভেঙ্কসের পরাজয়ের পর, তিনি রাইন অতিক্রম ফরিয়া সম্মুখে অগ্রসর হন নাই, তাহার বংশধর টাইবেরিয়াস শিলত টিউটোবার্গেসিসের বিপত্তির প্রতিশোধ লইয়া জৰ্ম্মানিকাসকে প্রত্যাবৃত্ত ছুইতে আদেশ প্রদান করেন এবং ১৭ খৃষ্ঠানে উধুর দানিউবের মার্কোমরি প্রদেশের রাজা মাবোধোভূয়াস সহিত সন্ধি করিয়া তিনি দ্বীয় পিতার নির্দিষ্ট আত্মপক্ষ সুরক্ষার বন্দোবস্তে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন । তদমুসারে রাইন নদীতীরে, উত্তর ও নিম্ন জৰ্ম্মণিতে, দানিয়ুব সীমান্তে এবং পানোনিয়া ও মিসিয়ার চারিদিকে রোমীয় লিজন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল । রাজসরকারের নিয়োজিত লিগেটগণ ঐ সকল সেনাদলের অধিনায়ক হইতেন। আবখ্যক-মতে স্থানে স্থানে ছাউনী ও সৈনিকোপনিবেশ স্থাপিত হইয়াছিল। নদীবক্ষে ছিপে চড়িয়া সেনাদল অহরহ গমনাগমন করিয়া আততায়ী শত্র অথবা বিদ্রোহী প্রজার মনে ভীতি উৎপাদন করিত। অগাষ্টাস রোমসাম্রাজ্যের শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করিয়া যান। পরবর্তী সম্রাটুগণ সকলেই সুদক্ষ ছিলেন, তাহার অপ্রতিহতপ্রভাবে রাজ্যশাসন করিয়া গিয়াছেন। গেয়াস, ক্লডিয়াস ও নীরে দুৰ্ব্বন্ধিবশতঃ ও অত্যাচারনিবন্ধন রোম ও ইতালীবাসীকেই উত্ত্যক্ত করিয়াছিলেন । রাজ্যের অপর কোন স্থানে তাহাঙ্গের স্বেচ্ছাচারিতার বীজ অঙ্কুরিত হয় নাই। নীরোর মৃত্যুর পর, প্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট্রগণের বিরোধজনিত যুদ্ধে রোমসাম্রাজ্যের যে সকল ক্ষতি হইয়াছিল, ভেস্পেসিয়ান তাহার ক্ষতিপূরণ করিয়া যান। ওথে, ভিটেলিয়াস্ ও ভেস্পেসিয়ানের পরস্পর যুদ্ধের অবসরে ৬৯-৭০ খৃষ্টাব্দে সিভিলিসের বিদ্রোহ উপস্থিত হয়। ট্যাজাস হাদ্রিয়ান ও আন্টোনিয়াসদ্বয় স্ব স্ব অসাধারণ শক্তিবলে রোমসাম্রাজ্যের বিশ্ববিজয়িনী শক্তির পুনরাবির্ভাব করতে সমর্থ ন হইলেও, সুশাসন ও শাস্তিস্থাপনে পারদর্শী হইয়াছিলেন। ক্লডিয়াস বৃটেন জয় করিতে অগ্রসর হন। আক্সিকোলা ( ৭৮-৮৪ খৃঃ অঃ ) তথাকার উত্তর দেশ জয় করিয়া “হাদ্রিয়ান-প্রাচীর" দ্বারা রোমকাধিকার নির্দেশ করিয়া যান। ১•৭ খৃষ্টাৰে বৰ্ব্বরজাতির আক্রমণে উীত হইয়া টাঙ্গাস নিয় ঘানিয়ুব প্রদেশে অভিযান করেন এবং ডাকিয়ারাজ ডুসেবালাস্কে পরাজিত করিয়া তাহার রাজ্য হস্তগত করিয়া লন। তদবধি ২৫৬ খৃষ্টান্ধ পৰ্য্যন্ত উক্ত প্রদেশ রোমাধিকারে ছিল। [ ७२ ] রোমসাম্রাজ্য সম্রাটু টাজান আরাবিয়া-পিটিয়া প্রদেশ রোমসাম্রাজ্যভূক্ত করিয়াছিলেন । মার্কাস ঔরেলিয়াসের রাজত্বকালে (১৬২-১৭৫ খৃঃ) মার্কোমন্নি প্রভৃতি অসভ্যজাতি সীমান্ত হইতে দলে দলে আসিয়া রোমসাম্রাজ্য আক্রমণ করে। তাহারা ধীরে ধীরে উত্তর দানিয়ুব প্রদেশ অতিবাহন করিয়া ক্রমশঃ রিটিয়া, নোরিকাম ও পানোনিয়া প্রদেশ লুণ্ঠন ও বিধ্বস্ত করিয়া আল্পস অতিক্রমপূর্বক ইতালী প্রাস্তে আসিয়া সমুপস্থিত হইল। এই বৈদেশিক বৰ্ব্বরদিগের সহিত রোমরাজকে চতুর্দশ বর্ষ যুদ্ধ করিতে হয়। রোমের সুদূর পূর্বপ্রান্তেও ঐরূপ যুদ্ধবিগ্রহ চলিয়াছিল। পার্থিয়া, আর্মেণিয়া ও ইউফ্রেটিস তীরবর্তী প্রদেশে রোমের রাজনৈতিক সম্বন্ধ সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। ট্রাজান যে সকল স্থান অধিকার করিয়া যান, হাদ্রিয়ান তাহ রক্ষা করিতে অসমর্থ হইয়া পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন ; কিন্তু সেপ্টিমিয়াস্ সেভারাস পুনরায় সীমান্ত প্রদেশে রোমীয় প্রভাব বিস্তার করিয়া পূৰ্ব্বাবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটান। ১৮০ খৃষ্টাব্দে মার্কাস ঔরেলাসের মৃত্যু ঘটে। তদবধি ২৮৪ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যন্ত উপযুপিরি যুদ্ধবিগ্রহ ও শাসনবিশৃঙ্খলায় রোমসাম্রাজ্যে একটা ঘোর বিপৰ্য্যয় উপস্থিত হয়, কিন্তু সেপ্টিমিয়াস সেভেরাস, ডেসিয়াস্ ক্লডিয়াস, ঔরেলিয়ান ও প্রোবাস প্রভৃতি রণভূৰ্ম্মদ সম্রাট্রগণের কঠোর শাসনে তাহ ধবংসমুখ হইতে অব্যাহতি পায় । কিন্তু সুবিশাল রোমসাম্রাজ্যে রাজকীয় শক্তির সুব্যবস্থা-সংস্থাপনার্থ বিশেষ কোন নৈতিক পন্থ অবলম্বিত হয় নাই। খৃষ্টীয় ২র শতাৰে কাৰ্য্যতঃ ও অংশতঃ যাহা কিছু সাধিত হইয়াছিল ; খৃষ্টীয় ৩য় শতাদে রোমসাম্রাজ্যভুক্ত বিভিন্ন প্রদেশে শাসনকর্তা বা লিজনের অধিনায়কগণের পরম্পরের প্রতিদ্বম্বিতায় যে ভয়াবহ ধারাবাহিক যুদ্ধবিগ্রহ সমুজ্জত হইয়াছিল,তাহাতেই রোমসাম্রাজ্যের বিধিবদ্ধ গ্রন্থি সমূহ শিথিল হইয়া যায়। ঐ সকল প্রতিদ্বন্দ্বী সেনাপতিগণ রাজমুকুট শিরে ধারণ করিবার জন্ত ঘোরতর যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। ২১১ খৃষ্টাব্দে সেভেরাসের মৃত্যুর পর হইতে ২৮৪ খৃষ্টাৰে ডাওক্লিসিয়ানের রাজ্যারোহণ পর্যন্ত কিছু কম ২৩ জন সম্রাট অগাস্টাসের সিংহাসনে উপবেশন করিয়াছিলেন। উহাদের মধ্যে কেবল মাত্র তিনজনের অতীব শোচনীয় মৃত্যু হইয়াছিল । ডিসিয়াস গখজাতির সহিত যুদ্ধ করিয়া নিহত হন, ভালেরিয়ান স্বদূর পূর্বপ্রাস্তে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইয়া অন্ধকার মধ্যে কলুষপূর্ণ জীবনের অবসান করেন এবং ক্লডিয়াস সেই দুদিনের মহামারীতে জীবন হারাইলেন। রাজমুকুট-আহরণোদেশে জনসংক্ষয়কারী এই সকল অভিমানী সম্রাটগণ টাইরাস্ট” নামে পরিচিত হইয়াছিলেন।
পাতা:বিশ্বকোষ সপ্তদশ খণ্ড.djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।