পাতা:বিশ্বকোষ সপ্তম খণ্ড.djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীর সেরূপ পরিচয় পাইয়া কতকগুলি লোক আসিয়া তাহার সহিত যোগ দিল। এই সমস্ত লোক লইয়া সে পাটনায় প্রবেশ করিয়া দুর্গ অধিকার করিল। সে সময় পাটনার শাসনকর্তা আফজলখা দেখ বানারসী ও গয়াস জেলখামির উপর নগর রক্ষার ভার দিয়া গোরক্ষপুরে তাহার নূতন জায়গীরে গিয়াছিলেন। বিদ্রোহিগণ দুর্গে প্রবেশ করিলে দুৰ্গরক্ষকগণ পলায়নপূর্বক আফজলখার নিকট গমন করিতে চেষ্টা করিল। এ দিকে আফজলখা বিদ্রোহ সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া অতি শীঘ্র পাটনা অভিমুথে অগ্রসর হইলেন। এই খসরু প্রকৃত খসরু নয়, তাছা বারবার সকলকে জানান হইল। প্রতারক আফজলখার আগমন সম্বাদ পাইয়া বিদ্রোহিণ দুর্গ ছাড়িয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে অগ্রসর হইল, কিন্তু শেষে পরাজিত হইয়া পলায়ন করিল। কিন্তু আবার তাহারা আফজলের গৃহ অধিকার করে । শেষে প্রতারক কুতব তাহার সঙ্গীগণ ক্রমে ক্রমে নিহত হইল দেখিয়া নিরুপায় হইয়া আফজলখার সম্মুখে উপস্থিত হইল। আফজল তৎক্ষণাৎ তাহাকে বিনাশ করিলেন। সম্রাটের নিকট এই সম্বাদ পৌছিলে তিনি সেথ বানারসী গয়াসরিহান এবং অন্যান্ত কৰ্ম্মচারিদিগকে আহবান করিয়া পাঠাইলেন। সেই বিদ্রোহিদিগের দাড়ি ও মস্তক মুণ্ডন এবং হীনবেশ পরিধান করাইয়া নগরের চারিদিকে ঘূরাইয়৷ আনিতে আজ্ঞা করিলেন । ১৬১০ খৃঃ অব্দে আহ্মদনগরে বিদ্রোহ উপস্থিত হয়। খানখানাকে কুমার পারবিজের সহকারী নিযুক্ত করিয়া দাক্ষিণাত্যে প্রেরণ করা হইয়াছিল । তিনি বুর্হানপুরে পৌছিয়া সৈন্তদিগকে বালাঘাটে প্রেরণ করিলেন। এখানে আসিলে কৰ্ম্মচারিদিগের মধ্যে গোলযোগ উপস্থিত হইল । সৈন্তগণ অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া পড়িল । চাউল এবং খাদ্য দ্রব্যেরও অভাব হইল। এইজষ্ঠ পুনরায় বুর্হানপুরে সৈন্তদিগকে ফিরিয়া যাইতে আদেশ করা হইল। এই সমস্ত অসুবিধার জন্য শত্রুদিগের সহিত কিছু দিনের জন্য সন্ধি করা হইল। থানখানানের বিরুদ্ধে নানারূপ অভিযোগ হইতে লাগিল । সম্রাটু তখন থানখানাকে স্থানান্তরিত করিয়া খাজহানকে প্রেরণ করিলেন। ১৬১১ খৃঃ অধো জাহাঙ্গীরের সহিত মীর্জা গয়াসবেগের কন্ত নূরমহলের (নূরজহানের) বিবাহ হইল। ইয়াজাবাদের উজীর খোজামহম্মদ সরিফের মৃত্যুর পর র্তাহার পুত্র মীর্জা গয়াস্বেগ অতিশয় দারিদ্র্য পীড়িত হইয়া ২টা পুত্র ও একটী কন্যা সমভিব্যাহারে হিন্দুস্থান অভিমুখে আসিতেছিলেন ; এই সময়ে তাহার স্ত্রী অন্তঃস্বত্ব ছিলেন, ( ' ) এই গর্ভে ভারতের ভাবী সাম্রাঙ্গীর জন্ম হয়। র্তাহারা যে পথিকদিগের সহিত আসিতেছিলেন সেই দলে মালিক মজুদ নামে একজন উদার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বালিকার অসামান্ত পৌন্দর্য্যে অতিশয় বিস্থিত হইয়া ও তাহাদিগের তুর্দশায় অতি দুঃখিত হইয় তাহাদিগকে সঙ্গে লইয়া গেলেন। সম্রাট আকবর এই ব্যক্তিকে অতিশয় সম্মান করিতেন। ময়দ মীর্জা গয়াসকে সম্রাটের সহিত পরিচিত করিয়া দিলেন। সম্রাট গয়াসের পিতা হুমায়ুনের দুরাবস্থার সময় তাহার অনেক উপকার করিয়াছিলেন, তাহ অবগত হইয়া এবং গয়াসের আচরণে অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া আকবর র্তাহাকে দেওয়ান পদে নিযুক্ত করিলেন। তাহার পত্নীর সহিত আকবরমহিষী সলিমের মাতা মরিয়াম জমানীর বিশেষ মিত্রতা জন্মিল। গয়াসপত্নী তাহার কল্প মেহেরউল্লিশাকে সঙ্গে লইয়া অনেক সময় সলিমের মাতার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতেন। মেহেরউল্লিশ । নৃত্যগীত ও নানাবিধ বিদ্যায় সুচতর, রূপে অলোকসামাষ্ঠী, ইহার স্তায় রূপবতী কামিনী ভূমণ্ডলে অতি অল্পই জন্মগ্রহণ করিয়াছে, ইহার শরীর উন্নত ও সুন্দর, যেন ছবিখানি। ইহার রূপে গুণে সকলেই মুগ্ধ হইতেন। এক দিন মেহেরউল্লিশ৷ র্তাহার মাতার সঙ্গে মরিয়াম জমানীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়া সাম্রাজ্ঞীর চিত্তবিনোদনার্থে মৃত্য করিতেছিল, এমন সময় কুমার সলিম তথায় উপস্থিত হইলেন। চারি চক্ষু মিলিত হইল, সলিম তাহার রূপে বিভোর হইয়া পড়িলেন । উভয়ে উভয়ের প্রণয়ে মুগ্ধ হইলেন। সলিম তাহাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন, কিন্তু আলিকুলিখা নামক জনৈক ইরাকৃপ্রদেশীয় ভদ্রলোকের সহিত র্তাহার বিবাহ সম্বন্ধ পুৰ্ব্বেই স্থিরীকৃত হইয়াছিল ৷ আবদুল রহিম ( পরে খানখানান ) মূলতানের যুদ্ধকালে আলিকুলির বীরত্বে সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া সম্রাট আকবরের সহিত র্তাহাকে পরিচিত করিয়া দেনু । যাহা হউক, সলিম মেহেরউল্লিশাকে পাইবার জন্য একান্ত আকুল হইয়া পড়িলেন ; তিনি সময় সময় তাহার সহিত প্রেমসম্ভাষণ করিতে লাগিলেন । মেহেরের মাতা তাহাতে বিরক্ত হইয়া মহারাণীর নিকট সমস্ত প্রকাশ করিয়া দিলেন এবং তিনিও সম্রাট আকবরকে সমস্ত খুলিয়া বলিলেন। সম্রাটু এরূপ অন্যায়ের প্রশ্রয় না দিয়া অালিকুলির সহিত মেহেরের বিবাহকার্য শীঘ্র সম্পন্ন করিবার জন্য গয়াসকে বলিয়া পাঠাইলেন। মেহেরউল্লিশার সলিমকে বিবাহ করিতে একান্ত ইচ্ছাসত্ত্বেও আলিকুলির সহিত র্তাহার বিবাহ দেওয়া হইল এবং সম্রাটু আলিকুলিকে শাসনকৰ্ত্ত করিয়া বঙ্গদেশে পাঠাইয়া দিলেন । g g