ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ; অন্বেষণ వెర్రీ সূৰ্য্যমুখী কোন উত্তর করিলেন না। সে আবার বলিল, “আজ্ঞে, আসুন । বাড়ীতে সকলে বড় ব্যস্ত হইয়াছেন।” সূৰ্য্যমুখী তখন ক্রোধভরে কহিলেন, “আমাকে ফিরাইবার তুই কে ? খানসামা ভীত হইল। তথাপি সে দাড়াইয়া রহিল। সূর্যমুখী তাহাকে কহিলেন, “তুই যদি এখানে দাড়াইবি, তবে এই পুষ্করিণীর জলে আমি ডুবিয়া মরিব।” খানসামা কিছু করিতে না পারিয়া দ্রুত গিয়া নগেন্দ্রকে সংবাদ দিল। নগেন্দ্র শিবিকা লইয়া স্বয়ং সেইখানে আসিলেন। কিন্তু তখন আর সূৰ্য্যমুখীকে সেখানে পাইলেন না। নিকটে অনুসন্ধান করিলেন, কিন্তু কিছুই হইল না। সূৰ্য্যমুখী সেখান হইতে উঠিয়া গিয়া এক বনে বসিয়াছিলেন। সেখানে এক বুড়ীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। বুড়ী কাঠ কুড়াইতে আসিয়াছিল—কিন্তু মূৰ্য্যমুখীর সন্ধান দিতে পারিলে ইনাম পাওয়া যাইতে পারে, অতএব সেও সন্ধানে ছিল। সূৰ্য্যমুখীকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হ্যা গা, তুমি কি আমাদের মা ঠাকুরাণী গা ?” সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “না বাছা।” বুড়ী বলিল, “হা, তুমি আমাদের মা ঠাকুরাণী।” সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “তোমাদের মা ঠাকুরাণী কে গা ?” বুড়ী বলিল, “বাবুদের বাড়ীর বউ গা।" o সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “আমার গায়ে কি সোনা দানা আছে যে, আমি বাবুদের বাড়ীর বউ ?” বুড়ী ভাবিল, “তাও ত বটে ?” সে তখন কাঠ কুড়াইতে কুড়াইতে অন্য বনে গেল। দিনমান এইরূপে বৃথায় গেল। রাত্রেও কোন ফললাভ হইল না। তৎপরদিন ও তৎপরদিনও কাৰ্য্যসিদ্ধি হইল না—অথচ অনুসন্ধানের ক্রটি হইল না। পুরুষ অনুসন্ধানকারীর প্রায় কেহই সূৰ্য্যমুখীকে চিনিত ন—তাহারা অনেক কাঙ্গাল গরীব ধরিয়া আনিয়া নগেন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত করিল। শেষে ভদ্রলোকের মেয়েছেলেদের এক পথে ঘাটে স্নান করিতে হাওয়া দায় ঘটিল। একা দেখিলেই নগেন্দ্রের নেমকহালাল হিন্দুস্থানীরা “মা ঠাকুরাণী” বলিয়া পাছু লাগিত,এবং স্নান বন্ধ করিয়া অকস্মাৎ পান্ধী, বেহারাআনিয়া উপস্থিত করিত। অনেকে কখন পান্ধী চড়ে নাই, সুবিধা পাইয়া বিনা ব্যয়ে পান্ধী চড়িয়া লইল । ীিশচন্দ্র আর থাকিতে পারিলেন না। কলিকাতায় গিয়া অনুসন্ধান আরম্ভ করিলেন। কমলমণি, গোবিন্দপুরে থাকিয়া অমুসন্ধান করিতে লাগিলেন।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।