পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰাত্রিংশতম পরিচ্ছেদ বিষবৃক্ষের ফল (হরদেব ঘোষালের প্রতি নগেন্দ্র দত্তের পত্র ) তুমি লিখিয়াছ যে, আমি এ পৃথিবীতে যত কাজ করিয়াছি, তাহার মধ্যে কুন্দনন্দিনীকে বিবাহ করা সৰ্ব্বাপেক্ষ ভ্রান্তিমূলক কাজ। ইহা আমি স্বীকার করি। আমি এই কাজ করিয়া সূৰ্য্যমুখীকে হারাইলাম। সূৰ্য্যমুখীকে পত্নীভাবে পাওয়া বড় জোর কপালের কাজ। সকলেই মাটি খোড়ে, কোহিমুর এক জনের কপালেই উঠে। সূৰ্য্যমুখী সেই কোহিমুর। কুন্দনন্দিনী কোন গুণে র্তাহার স্থান পূর্ণ করিবে ? তবে কুন্দনন্দিনীকে র্তাহার স্থলাভিষিক্ত করিয়াছিলাম কেন ? ভ্রান্তি, ভ্রান্তি ! এখন চেতনা হইয়াছে। কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছিল মরিবার জন্ত। আমারও মরিবার জন্য এ মোহনিদ্রা ভাঙ্গিয়াছে। এখন সূৰ্য্যমুখীকে কোথায় পাইব ? আমি কেন কুন্দনন্দিনীকে বিবাহ করিয়াছিলাম ! আমি কি তাহাকে ভালবাসিতাম ? ভালবাসিতাম বই কি—তাহার জন্য উন্মাদগ্রস্ত’ হইতে বসিয়াছিলাম—প্রাণ বাহির হইতেছিল। কিন্তু এখন বুঝিতেছি, সে কেবল চোখের ভালবাসা। নহিলে আজি পনের দিবসমাত্র বিবাহ করিয়াছি—এখনই বলিব কেন, “আমি তাহাকে ভালবাসিতাম ”ি ভালবাসিতাম কেন? এখনও ভালবাসি—কিন্তু আমার সূৰ্য্যমুখী কোথায় গেল ? অনেক কথা লিখিব মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু আজ আর পারিলাম না। বড় কষ্ট হইতেছে। তি ( হরদেব ঘোষালের উত্তর ) আমি তোমার মন বুঝিয়াছি। কুন্দনদিনীকে ভালবাসিতে না, এমত নহে— এখনও ভালবাস ; কিন্তু সে যে কেবল চোখের ভালবাসা, ইহা যথার্থ বলিয়াছ। সূৰ্য্যমুখীর প্রতি তোমার গাঢ় স্নেহ—কেবল দুই দিনের জন্য কুন্দনন্দিনীর ছায়ায় তাহ আবৃত হইয়াছিল। এখন স্বৰ্য্যমুখীকে হারাইয় তাহা বুঝিয়াছ। যতক্ষণ সূর্যদেব অনাচ্ছন্ন থাকেন, ততক্ষণ তাহার কিরণে সন্তাপিত হই, মেঘ ভাল লাগে। কিন্তু সূৰ্য্য অস্ত গেলে বুঝিতে পারি, সূৰ্য্যদেবই সংসারের চক্ষু। সূৰ্য্য বিনা সংসার আঁধার। তুমি আপনার হৃদয় না বুঝিতে পারিয়া এমন গুরুতর ভ্রান্তিমূলক কাজ করিয়াছ— ইহার জন্য আর তিরস্কার করিব না—কেন না, তুমি যে ভ্রমে পড়িয়াছিলে, আপনা হইতে