বিষবৃক্ষ কমল শুনিলেন, সূৰ্য্যমুখী নাই। তখন আর তিনি কোন ভারই লইলেন না। সতীশকে এক ফেলিয়, কমলমণি সে রাত্রের মত অদৃগু হইলেন। কমলমণি ধূল্যবলুষ্ঠিত হইয়া, আলুলায়িত কুম্ভলে কাদিতেছেন দেখিয়া, দাসী সেইখানে সতীশচন্দ্রকে ছাড়িয়া দিয়া, সরিয়া আসিল । সতীশচন্দ্র মাতাকে ধূলিধূসর, নীরবে রোদনপরায়ণ দেখিয়া, প্রথমে নীরবে, নিকটে বসিয়া রহিল। পরে মাতার চিবুকে ক্ষুদ্র কুসুমনিন্দিত অঙ্গুলি দিয়া, মুখ তুলিয়া দেখিতে যত্ন করিল। কমলমণি মুখ তুলিলেন, কিন্তু কথা কহিলেন না। সতীশ তখন মাতার প্রসন্নতার আকাঙ্ক্ষায়, তাহার মুখচুম্বন করিল। কমলমণি, সতীশের অঙ্গে হস্তপ্রদান করিয়া আদর করিলেন, কিন্তু মুখচুম্বন করিলেন না, কথাও কহিলেন না। তখন সতীশ মাতার কণ্ঠে হস্ত দিয়া, মাতার ক্রোড়ে শয়ন করিয়া রোদন করিল। সে বালক-হৃদয়ে প্রবেশ করিয়া, বিধাতা ভিন্ন কে সে বালকরোদনের কারণ নির্ণয় করিবে ? - শ্ৰীশচন্দ্র অগত্য আপন বুদ্ধির উপর নির্ভর করিয়া, কিঞ্চিৎ খাদ্য লইয়া আপনি নগেন্দ্রের সম্মুখে রাখিলেন। নগেন্দ্র বলিলেন, “উহার আবশ্বক নাই—কিন্তু তুমি বসে। তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে—তাহ বলিতেই,এথানে আসিয়াছি।” তখন নগেন্দ্র, রামকৃষ্ণ রায়ের কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছিলেন, সকল ঐশচন্দ্রের নিকট বিবৃত করিলেন। তাহার পর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যাহ। যাহা কল্পনা করিয়াছিলেন, তাহা সকল বলিলেন । শ্ৰীশচন্দ্র বলিলেন, “ব্রহ্মচারীর সঙ্গে পথে তোমার সাক্ষাৎ হয় নাই, ইহা অংশ ধ্য। কেন না, গতকলা কলিকাতা হইতে তোমার সন্ধানে তিনি মধুপুর যাত্রা করিয়াছেন।” নগেন্দ্র । সে কি ? তুমি ব্রহ্মচারীর সন্ধান কি প্রকারে পাইলে ? শ্ৰীশ । তিনি অতি মহৎ ব্যক্তি। তোমার পত্রের উত্তর না পাইয়া, তিনি তোমার সন্ধান করিতে স্বয়ং গোবিন্দপুর আসিয়াছিলেন। গোবিন্দপুরেও তোমায় পাইলেন না, কিন্তু শুনিলেন যে, তাহার পত্র কাশীতে প্রেরিত হইবে। সেখানে তুমি পত্র পাইবে। অতএব আর ব্যস্ত না হইয়া এবং কাহাকেও.কিছু না বলিয়া তিনি পুরুষোত্তম যাত্রা করেন। সেখান হইতে প্রত্যাবর্তন করিয়া তোমার সন্ধানার্থ পুনশ্চ গোবিন্দপুর গিয়াছিলেন । সেখানে তোমার কোন সংবাদ পাইলেন না—শুনিলেন, আমার কাছে তোমার সংবাদ পাইবেন। আমার কাছে আসলেন । পরশ্ব দিন আমার কাছে আসিয়াছিলেন। আমি তাহাকে তোমার পত্র দেখাইলাম। তিনি তখন মধুপুরে তোমার সাক্ষাৎ
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।