একচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : হীরার আয়ি ১২৫ কেহ বলিঙ্গ – “লালচাদ সিং, o নাচে তিড়িং মিড়িং, ডালরুটির যম, কিন্তু কাজে ঘোড়ার ডিম।” বালকের দ্বারবানদিগের দ্বারা নানাবিধ অভিধান ছাড়া শব্দে অভিহিত হইয়া পলায়ন করিল। হীরার আয়ি লাঠি ঠক্ ঠক্ করিয়া নগেন্দ্রের বাড়ীর ডাক্তারখানায় উপস্থিত হইল । ডাক্তারকে দেখিয়া চিনিয়া বুড়ী কহিল, “হঁ। বাবা—ডাক্তার বাবা কোথা গ৷ ” ডাক্তার কহিলেন, “আমিই ত ডাক্তার ” বুড়ী কহিল, “আর বাবা, চোকে দেখতে পাই নে— বয়স হ’ল পাচ সাত গগু, কি এক পোনই হয়—আমার তুঃখের কথা বলিব কি—একটি বেটা ছিল, তা যমকে দিলাম—এখন একটি নাতিনী ছিল, তারও—” বলিয়া বুড়ী হাউ— মাউ—খাউ করিয়া উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে লাগিল । ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে তোর ?” * বুড়ী সে কথার উত্তর না দিয়া আপনার জীবনচরিত আখ্যাত করিতে আরম্ভ করিল এবং অনেক র্কাদাকাটার পর তাহ সমাপ্ত করিলে, ডাক্তারকে আবার জিজ্ঞাসা করিতে হইল, “এখন তুই চাহিস্ কি ? তোর কি হইয়াছে ?” বুড়ী তখন পুনৰ্ব্বার আপন জীবনচরিতের অপুৰ্ব্ব কাহিনী আরম্ভ করিতেছিল, কিন্তু ডাক্তার বড় বিরক্ত হওয়ায় তাহা পরিত্যাগ করিয়া হীরার ও হীরার মাতার, ও হীরার পিতার ও হীরার স্বামীর জীবনচরিত আখ্যান আরম্ভ করিল। ডাক্তার বহু কষ্টে তাহার মৰ্ম্মার্থ বুঝিলেন—কেন না, তাহাতে আত্মপরিচয় ও রোদনের বিশেষ বাহুল্য। মৰ্ম্মার্থ এই যে, বুড়ী হীরার জন্য একটু ঔষধ চাহে । রোগ, বাতিক । হীরা গৰ্ত্তে থাকা কালে, তাহার মাত উন্মাদগ্ৰস্ত হইয়াছিল । সে সেই অবস্থায় কিছু কাল থাকিয়া সেই অবস্থাতেই মরে। হীরা বাল্যকাল হইতে অত্যন্ত বুদ্ধিমতী—তাহাতে কখনও মাতৃব্যাধির কোন লক্ষণ দৃষ্ট হয় নাই, কিন্তু আজিকালি বুড়ীর কিছু সন্দেহ হইয়াছে। হীরা এখন কখনও কখনও এক হাসে—এক র্কাদে, কখনও বা ঘরে দ্বার দিয়া নাচে । কখনও চীৎকার করে। কখনও মূৰ্ছা যায়। বুড়ী ডাক্তারের কাছে ইহার ঔষধ চাহিল। ডাক্তার চিন্তু করিয়া বলিলেন, “তোর নাতিনীর হিষ্টরিয়া হইয়াছে।” বুড় জিজ্ঞাসা করিল, “ত বাবা । ইষ্টিরসের ঔষধ নাই ?”
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।