পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : অন্ধকার পুী—অন্ধকার জীবন 〉ミ* শিয়াল, ফুলবাগানে জঙ্গল, ভাণ্ডার ঘরে ইন্দুর । জিনিষপত্র ঘেরাটোপে ঢাকা । অনেকেতেই ছাত ধরেছে। অনেক ইন্দুরে কেটেছে। ছুঁচা, বিছা, বাড়, চামচিকে অন্ধকারে অন্ধকারে দিবারাত্র বেড়াইতেছে। সূৰ্য্যমুখীর পোষা পার্থীগুলাকে প্রায় বিড়ালে ভক্ষণ করিয়াছে। কোথাও কোথাও ভোজনাবশিষ্ট পাখাগুলি পড়িয়া আছে। হাসগুলা শৃগালে মারিয়াছে। ময়ুরগুলা বুনো হইয়া গিয়াছে। গোরুগুলার হাড় উঠিয়াছে—আর ফুধ দেয় না । নগেন্দ্রের কুকুরগুলার ফুৰ্ত্তি নাই—খেলা নাই, ডাক নাই— বাধাই থাকে। কোনটা মরিয়া গিয়াছে—কোনটা ক্ষেপিয়া গিয়াছে, কোনটা পলাইয়। গিয়াছে । ঘোড়াগুলার নানা রোগ—অথবা নীরোগেই রোগ । আস্তাবলে যেখানে সেখানে খড় কুট, শুকন পাতা, ঘাস, ধুলা আর পায়রার পালক । ঘোড়া সকল ঘাস দান৷ কখনও পায়, কখনও পায় না। সহিসের প্রায় আস্তাবলমুখ হয় না ; সহিসনীমহলেই থাকে। অট্টালিকার কোথাও আলিশ ভাঙ্গিয়াছে, কোথাও জমাট খসিয়াছে ; কোথাও সাস, কোথাও খড়খড়ি, কোথাও রেলিং টুটিয়াছে। মেটিঙ্গের উপর বৃষ্টির জল, দেয়ালের পেন্টের উপর বস্থধারী, বুককেশের উপর কুমীরকার বাসা, ঝাড়ের ফানুসের উপর চড়ুইয়ের । বাসার খড় কুট । গৃহে লক্ষ্মী নাই। লক্ষ্মী বিনা বৈকুণ্ঠও লক্ষ্মীছাড়া হয়। যে উদ্যানে মালী নাই, ঘাসে পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে, সেখানে যেমন কখনও একটি গোলাপ কি একটি স্থলপদ্ম ফুটে, এই গৃহমধ্যে তেমনি এক কুন্দনন্দিনী বাস করিতেছিল । যেমন আর পাচজনে খাইত পরিত, কুন্দও তাই । যদি কেহ তাকে গৃহিণী ভাবিয়া কোন কথা কহিত, কুন্দ ভাবিত, আমায় তামাসা করিতেছে। দেওয়ানজি যদি কোন কথা জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইতেন, ভয়ে কুন্দের বুক ছড় ছড় করিত । বাস্তবিক কুন্দ দেওয়ানজিকে বড় ভয় করিত । ইহার একটি কারণও ছিল । নগেন্দ্র কুন্দকে পত্র লিখিতেন না ; সুতরাং নগেন্দ্র দেওয়ানজিকে যে পত্রগুলি লিখিতেন, কুন্দ তাহাই চাহিয়া আনিয়া পড়িত। পড়িয়া, আর ফিরাইয়া দিত ন!—সেইগুলি পাঠ তাহার সন্ধ্যাগায়ত্রী হইয়াছিল । সৰ্ব্বদা ভয়, পাছে দেওয়ান পত্রগুলি ফিরাইয়া চায়। এই ভয়ে দেওয়ানের নাম শুনিলেই কুন্দের মুখ শুকাইত। দেওয়ান হীরার কাছে এ কথা জানিয়াছিলেন। পত্রগুলি আর চাহিতেন না । আপনি তাহার নকল রাখিয়া কুন্দকে পড়িতে দিতেন । বাস্তবিক সূৰ্য্যমুখী যন্ত্রণ পাইয়াছিলেন–কুন্দ কি পাইতেছে না ? সূৰ্য্যমুখী স্বামীকে ভালবাসিতেন—কুন্দ কি বাসে না ? সেই ক্ষুদ্র হৃদয়খানির মধ্যে অপরিমিত প্রেম । প্রকাশের শক্তি নাই বলিয়, তাহা বিরুদ্ধ বায়ুর হ্যায় সতত কুন্দের সে হৃদয়ে