లిe বিষবৃক্ষ জনে জনে দিকে দিকে দিগ্বিজয়ে ছুটিল। অচিরাৎ অট্টালিকা আবার প্রসন্ন হইয়া হাসিতে লাগিল । ৮ - পরিশেষে নগেন্দ্র আসিয়া পহুছিলেন। তখন সন্ধ্যাকাল । যেমন নদী, প্রথম জলোচ্ছ্বাসকালে অত্যন্ত বেগবতী, কিন্তু জোয়ার পুরিলে গভীর জল শাস্তভাব ধারণ করে, তেমনি নগেন্দ্রের সম্পূর্ণ-শোক-প্রবাহ এক্ষণে গম্ভীর শান্তিরূপে পরিণত হইয়াছিল। যে দুঃখ, তাহা কিছুই কমে নাই ; কিন্তু অধৈৰ্য্যের হ্রাস হইয়া আসিয়াছিল। তিনি স্থিরভাবে পৌরবর্গের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্ত কহিলেন, সকলকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন । কাহারও সাক্ষাতে তিনি সূৰ্য্যমুখীর প্রসঙ্গ করিলেন না—কিন্তু তাহার ধীরভাব দেখিয়া সকলেই র্তাহার দুঃখে দুঃখিত হইল। প্রাচীন ভূত্যের। র্তাহাকে প্রণাম করিয়া গিয়া আপন আপনি রোদন করিল। নগেন্দ্র কেবল এক জনকে মনঃপীড়া দিলেন। চিরদুঃখিনী কুন্দনন্দিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন না । চতুশ্চত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ . স্তিমিত প্রদীপে নগেন্দ্রনাথের আদেশমত পরিচারিকার স্বৰ্য্যমুখীর শয্যাগৃহে তাহার শয্যা প্রস্তুত করিয়াছিল। শুনিয়া কমলমণি ঘাড় নাড়িলেন। নিশীথকালে পৌরজন সকলে সুষুপ্ত হইলে নগেন্দ্র সূৰ্য্যমুখীর শয্যাগৃহে শয়ন করিতে গেলেন। শয়ন করিতে না—রোদন করিতে। সূৰ্য্যমুখীর শয্যাগৃহ অতি প্রশস্ত এবং মনোহর ; উহা নগেন্দ্রের সকল মুখের মন্দির, এই জন্য তাহ যত্ন করিয়া প্রস্তুত করিয়াছিলেন । ঘরটি প্রশস্ত এবং উচ্চ, হৰ্ম্ম্যতল শ্বেতকৃষ্ণ মৰ্ম্মর-প্রস্তরে রচিত। কক্ষপ্রাচীরে নীল পিঙ্গল লোহিত লতা-পল্লব-ফল-পুষ্পাদি চিত্রিত ; তদুপরি বসিয়া নানাবিধ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিহঙ্গমসকল ফল ভক্ষণ করিতেছে, লেখা আছে। একপাশে বহুমূল্য দারুনিৰ্ম্মিত হস্তিদন্তখচিত কারুকার্য্যবিশিষ্ট পৰ্য্যস্ক, আর একপাশে বিচিত্র বস্ত্রমণ্ডিত নানাবিধ কাষ্ঠাসন এবং বৃহদৰ্পণ প্রভৃতি গৃহসজ্জার বস্তু বিস্তর ছিল। কয়খানি চিত্র কক্ষপ্রাচীর হইতে বিলম্বিত ছিল। চিত্রগুলি বিলাতি নহে। সূৰ্য্যমুখী নগেন্দ্র উভয়ে মিলিত হইয়া চিত্রের বিষয় মনোনীত করিয়া এক দেশী চিত্রকরের দ্বারা চিত্রিত করাইয়াছিলেন । দেশী চিত্রকর
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।