চতুশ্চারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : স্তিমিত প্রদীপে శ్రీ) এক জন ইংরেজের শিষ্য; লিখিয়াছিল ভাল। নগেন্দ্র তাহা মহামূল্য ফ্রেম দিয়া শয্যাগৃহে রাখিয়াছিলেন। একখানি চিত্র কুমারসম্ভব হইতে নীত। মহাদেব পৰ্ব্বতশিখরে বেদির উপর বসিয়া তপশ্চরণ করিতেছেন। লতাগৃহদ্ধারে নন্দী, বামপ্রকোষ্ঠাপিতহেমবেত্ৰ— মুখে এক অঙ্গুলি দিয়া কাননশব্দ নিবারণ করিতেছেন। কানন স্থির—ভমরের পাতার ভিতর লুকাইয়াছে—মৃগের শয়ন করিয়া আছে। সেই কালে হরধ্যানভঙ্গের জন্ত মদনের অধিষ্ঠান। সঙ্গে সঙ্গে বসন্তের উদয় । অগ্ৰে বসন্তপুষ্পাভরণময়ী পাৰ্ব্বতী, মহাদেবকে প্ৰণাম করিতে আসিয়াছেন। উমা যখন শস্তুসম্মুখে প্রণামজন্য নত হইতেছেন, এক জামু ভূমিস্পষ্ট করিয়াছেন, আর এক জামু ভূমিস্পর্শ করিতেছে, স্কন্ধসহিত মস্তক নমিত হইয়াছে, সেই অবস্থা চিত্রে চিত্রিত। মস্তক নমিত হওয়াতে অলকবন্ধ হইতে দুই একটি কর্ণবিলম্বী কুরুবক কুসুম খসিয়া পড়িতেছে ; বক্ষ হইতে বসন ঈষৎ স্রস্ত হইতেছে, দূর হইতে মন্মথ সেই সময়ে, বসন্তপ্রফুল্লবনমধ্যে অৰ্দ্ধলুক্কায়িত হইয়া এক জানু ভূমিতে রাখিয়া, চারু ধনু চক্রাকার করিয়া, পুষ্পধনুতে পুষ্পশর সংযোজিত করিতেছেন। আর এক চিত্রে স্ত্রীরাম জানকী লইয়া লঙ্কা হইতে ফিরিয়া আসিতেছেন ; উভয়ে এক রত্নমণ্ডিত বিমানে . বসিয়া, শূন্তমার্গে চলিতেছেন। এঁরাম জানকীর স্বন্ধে এক হস্ত রাখিয়া, আর এক হস্তের অঙ্গুলির দ্বার, নিয়ে পৃথিবীর শোভা দেখাইতেছেন। বিমানচতুস্পার্শে নানাবর্ণের মেঘ,— নীল, লোহিত, শ্বেত,–ধুমতরঙ্গেৎক্ষেপ করিয়া বেড়াইতেছে। নিয়ে আবার বিশাল নীল সমুদ্রে তরঙ্গভঙ্গ হইতেছে—সূৰ্য্যকরে তরঙ্গসকল হীরকরাশির মত জ্বলিতেছে। এক পারে অতিদূরে “সৌধকিরাটিন লঙ্কা—” তাহার প্রাসাদাবলীর স্বর্ণমণ্ডিত চুড়া সকল সূৰ্য্যকরে জ্বলিতেছে। অপর পারে শু্যামশোভাময়ী “তমালতালীবনরাজিনীলা" সমুদ্রবেলা । মধ্যে শূন্তে হংসশ্রেণী সকল উড়িয়া যাইতেছে। আর এক চিত্রে, অর্জন স্বভদ্রাকে হরণ করিয়া রথে তুলিয়াছেন। রথ শূন্তপথে মেঘমধ্যে পথ করিয়া চলিয়াছে, পশ্চাৎ অগণিত যাদবী সেনা ধাবিত হইতেছে, দূরে তাহাদিগের পতাকাশ্রেণী এবং রজোজনিত মেঘ দেখা যাইতেছে । সুভদ্র স্বয়ং সারথি হইয়। রথ চালাইতেছেন। অশ্বের মুখামুখি করিয়া, পদক্ষেপে মেঘ সকল চূৰ্ণ করিতেছে ; স্বভদ্রা আপন সারথানৈপুণ্যে গ্রীত হইয়া মুখ ফিরাইয়। অর্জুনের প্রতি বক্রবৃষ্টি করিতেছেন ; কুন্দদস্তে আপন অধর দংশন করিয়া টিপি টিপি হাসিতেছেন ; রথবেগজনিত পবনে র্তাহার অলক সকল উড়িতেছে—দুই এক গুচ্ছ কেশ স্বেদবিজড়িত হইয়া কপালে চক্রাকারে লিপ্ত হইয়া রহিয়াছে। আর একখানি চিত্রে, সাগরিকাবেশে রত্নাবলী, পরিষ্কার নক্ষত্রীলোকে বালতমালতলে, উদ্বন্ধনে প্রাণত্যাগ করিতে
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।