সপ্তচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ; সরল এবং সপী Ꮌ8Ꮌ হীরা বলিতে লাগিল, “তবে আমার যুঃখের কথা বলি শুন । আমিও একজনকে আপনার প্রাণ অপেক্ষ ভালবাসিতাম। সে আমার স্বামী নহে—কিন্তু যে পাপ করিয়াছি, তাহা মুনিবের কাছে লুকাইলেই বা কি হইবে—স্পষ্ট স্বীকার করাই ভাল।” এই লজ্জাহীন কথা কুন্দের কর্ণে প্রবেশও করিল না। তাহার কানে সেই “আত্মহত্যা” শব্দ বাজিতেছিল। যেন ভূতে তাহার কানে কানে বলিতেছিল, “তুমি আত্মঘাতিনী হইতে পারিবে ; এ যন্ত্রণ সহ ভাল, না মরা ভাল ?” । হীরা বলিতে লাগিল, “সে আমার স্বামী মহে ; কিন্তু আমি তাহাকে লক্ষ স্বামীর অপেক্ষা ভালবাসিতাম। সে আমাকে ভালবাসিত না ; আমি জানিতাম যে, সে আমাকে ভালবাসিত না। এবং আমার অপেক্ষা শতগুণে নিগুৰ্ণ আর এক পাপিষ্ঠীকে ভালবাসিত।” ইহা বলিয়া হীরা নতনয়ন কুন্দের প্রতি একবার অতি তীব্র কোপকটাক্ষ করিল, পরে বলিতে লাগিল, “আমি ইহ জানিয়া তাহার দিকে ঘেসিলাম না, কিন্তু একদিন আমাদের উভয়েরই চুবুদ্ধি হইল।” এইরূপে আরম্ভ করিয়া, হীরা সংক্ষেপে কুন্দের নিকট আপনার দারুণ ব্যথার পরিচয় দিল। কাহারও নাম ব্যক্ত করিল না ; দেবেন্দ্রের নাম, কুন্দের নাম উভয়ই অব্যক্ত রহিল। এমত কোন কথা বলিল না যে, তদ্দারা, কে হীরার প্রণয়ী, কে বা সেই প্রণয়ীর প্রণয়িনী, তাঙ্গ অনুভূত হইতে পারে। আর সকল কথা সংক্ষেপে প্রকাশ করিয়া বলিল। শেষে পদাঘাতের কথা বলিয়া কহিল, “বল দেখি, তাহাতে আমি কি করিলাম ?” কুন্দ জিজ্ঞাসা করিল, “কি করিলে ?” হীরা হাত মুখ নাড়িয়া বলিতে লাগিল, “আমি তখনই চাড়াল কবিরাজের বাড়ীতে গেলাম। তাহার নিকট এমন সব বিষ আছে যে, খাইবামাত্র মানুষ মরিয়া যায়।” কুন্দ ধীরতার সহিত, মৃত্তার সহিত, কহিল, “তার পর ?” হীরা কহিল, “আমি বিষ খাইয়৷ মরিব বলিয়া বিষ কিনিয়াছিলাম, কিন্তু শেষে ভাবিলাম যে, পরের জন্য আমি মরিব কেন ? ইহা ভাবিয়া বিষ কোঁটায় পুরিয়া বাক্সতে তুলিয়া রাখিয়াছি।” to এই বলিয়া হীরা কক্ষান্তর হইতে তাহার বাক্স আনিল। সে বাক্সটি হীরা মুনিববাড়ীর প্রসাদ, পুরস্কার এবং অপহরণের দ্রব্য লুকাইবার জন্য সেইখানে রাখিত। হীরা সেই বাক্সতে নিজক্রীত বিষের মোড়ক রাখিয়াছিল। বাক্স খুলিয়া হীরা কোঁটার মধ্যে বিষের মোড়ক কুন্দকে দেখাইল। আমিষলোলুপ মার্জারবৎ কুন্দ তাহার
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।