$3\} বিষবৃক্ষ এই বলিয়া সূৰ্য্যমুখী রোরুদ্যমান স্বামীর হস্তধারণ করিয়া স্থানান্তরে লইয়া গেলেন। পরে নগেন্দ্র ধৈর্য্যাবলম্বনপূর্বক কুন্দকে নদীতীরে লইয়া যথাবিধি সৎকারের সহিত, সেই অতুল স্বর্ণপ্রতিমা বিসর্জন করিয়া আসিলেন। পঞ্চাশত্তম পরিচ্ছেদ সমাপ্তি কুন্দনন্দিনীর বিয়োগের পর সকলেই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল যে, কুন্দনন্দিনী বিষ কোথায় পাইল। তখন সকলেই সন্দেহ করিল যে, হীরার এ কাজ । তখন হীরাকে না দেখিয়া, নগেন্দ্র তাহাকে ডাকিতে পাঠাইলেন। হীরার সাক্ষাৎ পাওয়া গেল না। কুন্দনন্দিনীর মৃত্যুকাল হইতে হীরা অদৃশ্বা হইয়াছিল। সেই অবধি আর কেহ সে দেশে ইরাকে দেখিতে পাইল না। গোবিন্দপুরে হীরার নাম লোপ হইল। এক বার মাত্র বৎসরেক পরে, সে দেবেন্দ্রকে দেখা দিয়াছিল। তখন দেবেন্দ্রের রোপিত বিষবৃক্ষের ফল ফলিয়াছিল। সে অতি কদৰ্য্য রোগগ্ৰস্ত হইয়াছিল। তদুপরি, মদ্যসেবার বিরতি না হওয়ায় রোগ দুনিবাৰ্য্য হইল। দেবেন্দ্র মৃত্যুশয্যায় শয়ন করিল। কুন্দনন্দিনীর মৃত্যুর পরে বৎসরেক মধ্যে দেবেন্দ্রেরও মৃত্যুকাল উপস্থিত হইল। মরিবার দুই চারি निने পুৰ্ব্বে সে গৃহমধ্যে রুগ্নশয্যায় উত্থানশক্তিরহিত হইয়া শয়ন করিয়া আছে—এমত সময় তাহার গৃহদ্বারে বড় গোল উঠিল। দেবেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কি ?” ভূত্যেরা কহিল যে, “এক জন পাগলী আপনাকে দেখিতে চাহিতেছে । বারণ মানে না।” দেবেন্দ্র অনুমতি করিল, “আসুক।” উন্মাদিনী গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। দেবেন্দ্র দেখিল যে, সে এক জন অতি দীনভাবাপন্ন স্ত্রীলোক। তাহার উন্মাদের লক্ষণ বিশেষ কিছু বুঝিতে পারিল না—কিন্তু অতি দীনা ভিখারিণী বলিয়া বোধ করিল। তাহার বয়স অল্প এবং পূৰ্ব্বলাবণ্যের চিহ্নসকল বর্তমান রহিয়াছে। কিন্তু এক্ষণে তাহার অত্যন্ত ছৰ্দশা। তাহার বসন অতি মলিন, শতধা ছিন্ন, শতগ্রস্থিবিশিষ্ট এবং এত অল্পায়ত যে, তাহ জানুর নীচে পড়ে নাই, এবং তদ্বারা পৃষ্ঠ ও মস্তক আবৃত হয় নাই। তাহার কেশ রুক্ষ, অবেণীবদ্ধ, ধূলিধূসরিত—কদাচিৎ বা জটাযুক্ত। তাহার তৈলবিহীন অঙ্গে খড়ি উঠিতেছিল এবং কাদা পড়িয়াছিল । ভিখারিণী দেবেন্দ্রের নিকট আসিয়া এরূপ তীব্রভৃষ্টি করিতে লাগিল যে, তখন দেবেন্দ্র বুঝিল, ভূতাদিগের কথাই সত্য—এ কোন উন্মাদিনী ।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।