চতুর্থ পরিচ্ছেদ এই সেই নগেন্দ্র গ্রামমধ্যে গমন করিলেন। শুনিলেন, গ্রামের নাম ঝুমঝুমপুর। র্তাহার অনুরোধে এবং আনুকূল্যে গ্রামস্থ কেহ কেহ আসিয়া মৃতের সৎকারের আয়োজন করিতে , লাগিল। একজন প্রতিবেশিনী কুন্দনন্দিনীর নিকটে রহিল। কুন্দ যখন দেখিল যে, তাহার পিতাকে সৎকারের জন্য লইয়া গেল, তখন র্তাহার মৃত্যুসম্বন্ধে কৃতনিশ্চয় হইয়া, অবিরত রোদন করিতে লাগিল । প্রভাতে প্রতিবেশিনী আপন গৃহকাৰ্য্যে গেল। কুন্দনন্দিনীর সাম্বনাৰ্থ আপন কন্য চাপাকে পাঠাইয়া দিল। চাপ কুন্দের সমবয়স্ক এবং সঙ্গিনী। চাপা আসিয়া কুন্দের সঙ্গে নানাবিধ কথা কহিয় তাহাকে সান্থনা করিতে লাগিল। কিন্তু দেখিল যে, কুন্দ কোন কথাই শুনিতেছে না, রোদন করিতেছে এবং মধ্যে মধ্যে প্রত্যাশাপন্নবৎ আকাশপানে চাহিয়া দেখিতেছে। চাপ কৌতুহলপ্রযুক্ত জিজ্ঞাসা করিল, “এক শ বার আকাশপানে চাহিয়া কি দেখিতেছ?” 娜 কুন্দ তখন কহিল, “আকাশ থেকে কাল মা আসিয়াছিলেন। তিনি আমাকে ডাকিলেন, ‘আমার সঙ্গে আয়। আমার কেমন দুৰ্ব্বদ্ধি হইল, আমি ভয় পাইলাম, মার সঙ্গে গেলাম না। এখন ভাবিতেছি, কেন গেলাম না। এখন আর যদি তিনি আসেন, আমি যাই। তাই ঘন ঘন আকাশপানে চাহিয়া দেখিতেছি।” :* - টোপ কহিল, “হঁ! মরা মানুষ নাকি আবার আসিয়া থাকে ?” তখন কুন্দ স্বল্পবৃত্তান্ত সকল বলিল। শুনিয়া চাপা বিস্মিত হইয়া কহিল, “সেই আকাশের গায়ে যে পুরুষ আর মেয়ে মানুষ দেখিয়াছিলে তাহাদের চেন ?” কুন্দ। না; তাহদের আর কখন দেখি নাই। সেই পুরুষের মত মুন্দর পুরুষ যেন কোথাও নাই। এমন রূপ কখনও দেখি নাই । এদিকে নগেন্দ্র প্রভাতে গাত্রোশ্বান করিয়া গ্রামস্থ সকলকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই মৃতব্যক্তির কন্যার কি হইবে ? সে কোয় থাকিবে ? তাহার কে আছে ?” ইহাতে সকলেই উত্তর করিল যে, “উহার থাকিবার স্থান নাই, উহার কেহ নাই।” তখন নগেন্দ্র কহিলেন, “তবে তোমরা কেহ উহাকে গ্রহণ কর। উহার বিবাহ দিও।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।