পঞ্চম পরিচ্ছেদ্ধ অনেক প্রকারের কথা অগত্য নগেন্দ্রনাথ কুনাকে কলিকাতায় আত্মসমভিব্যাহারে লইয়া আসিলেন প্রথমে তাহার মেসো বিনোদ ঘোষের অনেক সন্ধান করিলেন। শ্যামবাজারে বিনো ঘোষ নামে কাহাকেও পাওয়া গেল না। এক বিনোদ দাস পাওয়া গেল—লে সম্বন্ধ অস্বীকার করিল। সুতরাং কুন্দ নগেন্দ্রের গলায় পড়িল। 를 নগেন্দ্রের এক সহোদর ভগিনী ছিলেন। তিনি নগেন্দ্রের অমুজা । তাহার নাম কমলমণি । তাহার শ্বশুরালয় কলিকাতায় । খ্ৰীশচন্দ্র মিত্র তাহার স্বামী। শ্রীশ বাবু প্লণ্ডর ফেয়ারলির বাড়ীর মুৎসুদি। হেস বড় ভারি—শ্ৰীশচন্দ্র বড় ধনবান। নগেন্দ্রের সঙ্গে তাহার বিশেষ সম্প্রীতি। কুন্দনন্দিনীকে নগেন্দ্র সেই খানে লইয়া গেলেন। কমলকে ডাকিয়া কুন্দের সবিশেষ পরিচয় দিলেন। কমলের বয়স অষ্টাদশ বৎসর। মুখাবয়ব নগেন্দ্রের ন্যায়। ভ্রাতা ভগিনী উভয়েই পরম সুন্দর। কিন্তু কমলের সৌন্দৰ্য্যগৌরবের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যার খ্যাতিও ছিল। নগেন্দ্রের পিতা মিস্ টেম্পল নামী একজন শিক্ষাদাত্রী নিযুক্ত করিয়া কমলমণিকে এবং সূৰ্য্যমুখীকে বিশেষ যত্নে লেখাপড়া শিখাইয়াছিলেন। কমলের শ্বশ্রী বর্তমান । কিন্তু তিনি শ্ৰীশচন্দ্রের পৈতৃক বাসস্থানেই থাকিতেন। কলিকাতায় কমলই গৃহিণী । নগেন্দ্র কুন্দের পরিচয় দিয়া কহিলেন, “এখন তুমি ইহাকে না রাখিলে আর রাখিবার স্থান নাই। পরে আমি যখন বাড়ী যাইব—উহাকে গোবিন্দপুরে লইয়া যাইব ।” 蛇 কমল বড় দুষ্ট। নগেন্দ্র এই কথা বলিয়া পশ্চাৎ ফিরিলেই কমল কুণকে কোলে তুলিয়া লইয়া দৌড়িলেন। একটা টবে কতকটা অনতিতপ্ত জল ছিল, অকস্মাৎ কুন্দকে তাহার ভিতরে ফেলিলেন। কুন্দ মহাভীত হইল। কমল তখন হাসিতে হাসিতে স্নিগ্ধ সৌরভযুক্ত সোপ হস্তে লইয়া স্বয়ং তাহার গাত্র ধৌত করিতে আরম্ভ করিলেন। একজন পরিচারিক, স্বয়ং কমলকে এরূপ কাজে ব্যাপৃত দেখিয়া, তাড়াতাড়ি “আমি দিতেছি, আমি দিতেছি” বলিয়া দৌড়িয়া আসিতেছিল—কমল সেই তপ্ত জল ছিটাইয়া পরিচারিকার গায়ে দিলেন, পরিচারিক পলাইল । , কমল স্বহস্তে কুনাকে মার্জিত এবং স্নাত করাইলে—কুন্দ শিশিরধৌত পদ্মৰং শোভা পাইতে লাগিল। তখন কমল তাহাকে শ্বেত চারু বস্ত্র পরাইয়া, গন্ধতৈল সহিত তাহার ।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।