নবম পরিচ্ছেদ : হরিদাসী বৈষ্ণবী २७ পাঠক মহাশয় বড় বিরক্ত হইলেন সত্য, কিন্তু এত দূরে আখ্যায়িকা আরম্ভ হইল। এত দূরে বিষবৃক্ষের বীজ বপন হইল। নবম পরিচ্ছেদ হরিদাসী বৈষ্ণবী বিধবা কুন্দনন্দিনী নগেন্দ্রের গৃহে কিছু দিন কালাতিপাত করিল। একদিন মধ্যাহ্নের পর পৌরস্ত্রীরা সকলে মিলিত হইয়া পুরাতন অন্তঃপুরে বসিয়াছিল। ঈশ্বরকৃপায় তাহার অনেকগুলি, সকলে স্ব স্ব মনোমত গ্রাম্যস্ত্রীস্থলভকার্য্যে ব্যাপৃত ছিল। তাহাদের মধ্যে অনতীতবাল্যা কুমারী হইতে পলিতকেশী বর্ষীয়সী পৰ্য্যন্ত সকলেই ছিল। কেহ চুল বাধাইতেছিল, কেহ চুল র্বাধিয়া দিতেছিল, কেহ মাথা দেখাইতেছিল, কেহ মাথা দেখিতে ছিল, এবং “উ উ” করিয়া উকুন মারিতেছিল, কেহ পাকা চুল তুলাইতেছিল, কেহ ধান্তহস্তে তাহা তুলিতেছিল। কোন সুন্দরী স্বীয় বালকের জন্য বিচিত্র কাথা শিয়াইতেছিলেন ; " কেহ বালককে স্তন্যপান করাইতেছিলেন। কোন সুন্দরী চুলের দড়ি বিনাইতেছিলেন, কেহ ছেলে ঠেঙ্গাইতেছিলেন, ছেলে মুখব্যাদান করিয়া তিনগ্রামে সপ্তমুরে রোদন করিতেছিল। কোন রূপসী কার্পেট বুনিতেছিলেন ; কেহ থাবা পাতিয়া তাহ দেখিতেছিলেন। কোন চিত্রকুশল কাহারও বিবাহের কথা মনে করিয়া পিড়িতে আলেপন দিতেছিলেন, কোন সদ্গ্ৰন্থরসগ্রাহিণী বিদ্যাবতী দাশুরায়ের পাচালী পড়িতেছিলেন। কোন বর্ষীয়সী পুত্রের নিন্দ করিয়া শ্রোত্রীবর্গের কর্ণ পরিতৃপ্ত করিতেছিলেন, কোন রসিকা যুবতী অৰ্দ্ধস্ফুটস্বরে স্বামীর রসিকতার বিবরণ সর্থীদের কাণে কাণে বলিয়া বিরহিণীর মনোবেদনা বাড়াইতেছিলেন। কেহ গৃহিণীর নিন্দ, কেহ কৰ্ত্তার নিন্দ, কেহ প্রতিবাসীদিগের নিন্দ করিতেছিলেন ; অনেকেই আত্মপ্রশংসা করিতেছিলেন। যিনি সূৰ্য্যমুখী কর্তৃক প্রাতে নিজবুদ্ধিহীনতার জন্য মৃদুভৎসিত হইয়াছিলেন, তিনি আপনার বুদ্ধির অসাধারণ প্রাখৰ্য্যের অনেক উদাহরণ প্রয়োগ করিতেছিলেন ; র্যাহার, রন্ধনে প্রায় লবণ সমান হয় না, তিনি আপনার পাকনৈপুণ্যসম্বন্ধে সুদীর্ঘ বক্তৃতা করিতেছিলেন। র্যাহার স্বামী গ্রামের মধ্যে গণ্ডমূর্থ তিনি সেই স্বামীর অলৌকিক পাণ্ডিত্য কীৰ্ত্তন করিয়া সঙ্গিনীকে বিস্মিত করিতেছিলেন। যাহার পুত্রকন্যাগুলি এক একটি কৃষ্ণবর্ণ মাংসপিণ্ড, তিনি রত্নগর্ভা বলিয়া
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।