$8 বিষবৃক্ষ আস্ফালন করিতেছিলেন। সূৰ্য্যমুখী এ সভায় ছিলেন না । তিনি কিছু গৰ্বিবত, এ সকল সম্প্রদায়ে বড় বসিতেন না এবং তিনি থাকিলে অন্ত সকলের আমোদের বিস্তু হইত। সকলেই তাহাকে ভয় করিত ; র্তাহার নিকট মন খুলিয়া সকল কথা চলিত না । কিন্তু কুন্দনন্দিনী এক্ষণে এই সম্প্রদায়েই থাকিত ; এখনও ছিল। সে একটি বালককে তাহার মাতার অনুরোধে ক, খ, শিখাইতেছিল। কুন্দ বলিয়া দিতেছিল, তাহার ছাত্র তন্ত বালকের করস্থ সন্দেশের প্রতি ই করিয়া চাহিয়াছিল ; সুতরাং তাহার বিশেষ বিদ্যালাভ । হইতেছিল। এমত সময়ে সেই নারীসভামণ্ডলে “জয় রাধে !” বলিয়া এক বৈষ্ণবী আসিয়া দাড়াইল । নগেন্দ্রের ঠাকুরবাড়ীতে নিত্য অতিথিসেবা হইত, এবং তদ্ব্যতীত সেইখানেই প্রতি রবিবারে তণ্ডুলাদি বিতরণ হইত, ইহা ভিন্ন ভিক্ষার্থ বৈষ্ণবী কি কেহ অন্তঃপুরে আসিতে পাইত না । এই জন্য অন্তঃপুরমধ্যে “জয় রাখে” শুনিয়া এক জন পুরবাসিনী বলিতেছিল, “কে রে মাগী বাড়ীর ভিতর ? ঠাকুরবাড়ী যা ।” কিন্তু এই কথা বলিতে বলিতে সে মুখ ফিরাইয়া বৈষ্ণবীকে দেখিয়া কথা আর সমাপ্ত করিল না। তৎপরিবর্তে বলিল, “ও মা ! এ আবার কোন বৈষ্ণবী গে৷ ” . সকলেই বিস্মিত হইয়া দেখিল যে, বৈষ্ণবী যুবতী, তাহার শরীরে অার রূপ ধরে না। সেই বহুসুন্দরীশোভিত রমণীর্মগুলেও, কুন্দনন্দিনী ব্যতীত তাহা হইতে সমধিক রূপবতী কেহই নহে। তাহার ফুরিত বিস্বাধর, সুগঠিত নাসা, বিস্ফারিত ফুল্লেন্দীবরতুলা চক্ষু, চিত্ররেখাবৎ ক্রযুগ, নিটোল ললাট, বাহুযুগের মৃণালবৎ গঠন এবং চম্পকদায় রং বর্ণ, রমণীকুলতুল্লভ। কিন্তু সেখানে যদি কেহ সৌন্দর্য্যের সদ্বিচারক থাকিত, তবে সে বলিত যে, বৈষ্ণবীর গঠনে কিছু লালিত্যের অভাব । চলন ফেরন এ সকলও পৌরুষ। -> বৈষ্ণবীর নাকে রসকলি, মাথায় টেড়ি কাটা, পরণে কালাপেড়ে সিমলার ধুতি, হাতে একটি খঞ্জনী । হাতে পিত্তলের বালা, এবং তাহার উপরে জলতরঙ্গ চুড়ি । স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে এক জন বয়োজ্যেষ্ঠ কহিল, “হ্যা গা, তুমি কে গা ?” বৈষ্ণবী কহিল, “আমার নাম হরিদাসী বৈষ্ণবী। মা ঠাকুরাণীরা গান শুনবে ?” তখন “শুনবো গো শুনবে৷ ” এই ধ্বনি চারিদিকে আবালবৃদ্ধার কণ্ঠ হইতে বাহির হইতে লাগিল। তখন খঞ্জনী হাতে বৈষ্ণবী উঠিয়া গিয়া ঠাকুরাণীদিগের কাছে বসিল । সে যেখানে বসিল, সেইখানে কুন্দ ছেলে পড়াইতেছিল। কুন্দ অত্যন্ত গীতপ্রিয়,
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।