**, * ১২৭৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস হইতে বঙ্কিমচন্দ্র-সম্পাদিত মাসিক-পত্র ‘বঙ্গদর্শন প্রকাশিত হইতে থাকে। এই প্রথম সংখ্যা বঙ্গদর্শন হইতেই বঙ্কিমচন্ত্রের চতুর্থ বাংলা উপন্যাস ‘বিষবৃক্ষ ধারাবাহিকভাবে বাহির হইতে আরম্ভ হইয়া চৈত্র সংখ্যায় সমাপ্ত হয়। সে যুগের বাঙালী ও বাংলা ভাষা সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্ত্রের মনোভাব কিরূপ ছিল, বঙ্গদর্শনের “পত্র সূচনা”তেই তাহার পরিচয় আছে। তিনি লিখিয়াছিলেন— যাহারা বাঙ্গালা ভাষায় গ্রন্থ বা সাময়িক পত্র প্রচারে প্রবৃত্ত হয়েন, তাহাদিগের বিশেষ ছয়টি। র্তাহারা যত যত্ন করুন না কেন, দেশীয় কৃতবিদ্য সম্প্রদায় প্রায়ই তাহাদিগের রচনা পাঠে বিমূখ। ইংরাজীপ্রিয় কৃতবিদ্যগণের প্রায় স্থির জ্ঞান আছে, ৰে তাহাদের পাঠের যোগ্য কিছুই বাঙ্গালা ভাষায় লিখিত হইতে পারে না। উহাদের বিবেচনায় বাঙ্গালা ভাষায় লেখকমাত্রেই হয়ত বিদ্যাবুদ্ধিহীন, লিপি-কৌশল-শূন্ত নয়ত ইংরাজি গ্রন্থের অম্বুবাদক।. * ' * ইংরাজি ভক্তদিগের এই রূপ। সংস্কৃতজ্ঞ পাণ্ডিত্যাভিমানীদিগের "ভাষায়" স্বেরূপ শ্রদ্ধা ভবিষয়ে লিপিবাহুল্যের আবশ্যকতা নাই। র্যাহারা “বিষয়ী লোক” তাহাদিগের পক্ষে সকল ভাষাই সমান। কোন ভাষার বহি পড়িবার তাহাদের অবকাশ নাই। ছেলে স্কুলে দিয়াছেন, বহি পড়া আর নিমন্ত্রণ রাখার ভার ছেলের উপর। স্বতরাং বাঙ্গালা গ্রন্থাদি এক্ষণে কেবল নৰ্ম্মাল স্কুলের ছাত্র, গ্রাম্য বিদ্যালয়ের পণ্ডিত, অগ্রাপ্ত-বয়-পৌর-কন্তু, এবং কোন নিষ্কৰ্ম্মা রসিকত-ব্যবসায়ী পুরুষের কাছেই আদর পায় –‘বঙ্গদর্শন, বৈশাখ ১২৭৯, পৃ. ১-২। g এই লজ্জাকর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বদ্ধপরিকর হইয়া বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শন প্রচার করিতে আরম্ভ করেন। প্রতিবিধানের প্রধান অস্ত্ররূপে তিনি বিষবৃক্ষ’কে ব্যবহার করিলেন। ইতিপূৰ্ব্বে তিনি যে তিনখানি বাংলা উপন্যাস রচনা করিয়াছিলেন, তাহ ঐতিহাসিক-রোমালধৰ্ম্ম প্রথম যৌবনের যুক্তিই চপলতা এবং রঙীন ৰু সেগুলিতে বিদ্যমান। বঙ্কিমচন্ত্রের মনে সম্ভব্যুসেন্দেহ জাগিয়াছিল “ইংরাজীপ্রিয় কৃতবিজ্ঞগণ” ৪ ႏိုင္ရြံ႕ႏိုင္ငံ উপক্ষাসত্রয়ের দ্বারা আকৃষ্ট হন নাই। সুতরাং তিনি ধীর স্থির ভাবে অনেক ভাঙ্গী-চিন্তার পর বাংলাদেশের সে যুগের সমাজ জীবনের ইট গুরুতর সমস্ত লইয়া বঙ্গদর্শনে বাঙালী সমাজের এই বাস্তব চিত্র প্রকাশ করিতে লাগিলেন। সে সমস্যা বহুবিবাহ ও বিধবা-বিবাহ। বিষবৃক্ষের ইহাই
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।