একাদশ পরিচ্ছেদ : সূৰ্য্যমুখীর পত্র । Wost এখন এক জন নূতন দাসী রাখিয়াছি। তাহার নাম কুমুদ। বাবু তাহাকে কুমুদ বলিয়৷ ডাকেন। কখন কখন কুমুদ বলিয়া ডাকিতে কুন্দ বলিয়া ফেলেন। আর কত অপ্রতিভ হন । অপ্রতিভ কেন ? এ কথা বলিতে পারিব না যে, তিনি আমাকে অযত্ন বা অনাদর করেন। বরং পূৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক যত্ব, অধিক আদর করেন। ইহার কারণ বুঝিতে পারি। তিনি আপনার মনে আমার নিকট অপরাধী। কিন্তু ইহাও বুঝিতে পারি যে আমি তাহার মনে স্থান পাই না । যত্ন এক, ভালবাসা আর, ইহার মধ্যে প্রভেদ কি—আমরা স্ত্রীলোক সহজেই বুঝিতে পারি। আর একটা হাসির কথা । ঈশ্বর বিদ্যাসাগর নামে কলিকাতায় কে না কি বড় পণ্ডিত আছেন, তিনি আবার একখানি বিধবাবিবাহের বহি বাহির করিয়াছেন। যে বিধবার বিবাহের ব্যবস্থা দেয়, সে যদি পণ্ডিত, তবে মূর্থ কে ? এখন বৈঠকখানায় ভট্টাচাৰ্য্য ব্রাহ্মণ আসিলে সেই গ্রন্থ লইয়া বড় তর্ক বিতর্ক হয়। সে দিন স্যায়-কচকচি ঠাকুর, মা সরস্বতীর সাক্ষাৎ বরপুত্র, বিধবাবিবাহের পক্ষে তর্ক করিয়া বাবুর নিকট হইতে টােল মেরামৃতের জন্য দশটি টাকা লইয়া যায়। তাহার পরদিন সাৰ্ব্বভৌম ঠাকুর বিধবাবিবাহের প্রতিবাদ করেন। র্তাহার কন্যার বিবাহের জন্য আমি পাচ ভরির সোনার বালা গড়াইয়া দিয়াছি। আর কেহ বড় বিধবাবিবাহের দিকে নয় । আপনার দুঃখের কথা লইয়া তোমাকে অনেকক্ষণ জ্বালাতন করিয়াছি। তুমি ন৷ জানি কত বিরক্ত হইবে ? কিন্তু কি করি ভাই—তোমাকে মনের দুঃখ না বলিয়া কাহাকে বলিব ? আমার কথা এখনও ফুরায় নাই—কিন্তু তোমায় মুখ চেয়ে আজ ক্ষান্ত হইলাম। এ সকল কথা কাহাকেও বলিও না। আমার মাথার দিব্য, জামাই বাবুকেও এ পত্র দেখাইও না। তুমি কি আমাদিগকে দেখিতে আসিবে না ? এই সময় একবার আসিও, তোমাকে পাইলে অনেক ক্লেশ নিবায়ণ হইবে । তোমার ছেলের সংবাদ ও জামাই বাবুর সংবাদ শীঘ্ৰ লিখিবে। ইতি। 畿 সূৰ্য্যমুখী। পুনশ্চ। আর এক কথা—পাপ বিদায় করিতে পারিলেই বাচি। কোথায় বিদায় করি ? তুমি নিতে পার ? না ভয় করে ?” কমল প্রত্যুত্তরে লিখিলেন,—
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।