రి বিষবৃক্ষ “তুমি পাগল হইয়াছ। নচেৎ তুমি স্বামীর হৃদয়প্রতি অবিশ্বাসিনী হইবে কেন ? স্বামীর প্রতি বিশ্বাস হারাইও না। আর যদি নিতাস্তুই সে বিশ্বাস না রাখিতে পার— তবে দীঘির জলে ডুবিয়া মর। আমি কমলমণি তর্কসিন্ধান্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তুমি দড়ি কলসী লইয়া জলে ডুবিয়া মরিতে পার। স্বামীর প্রতি যাহার বিশ্বাস রহিল না—তাহার মরাই মঙ্গল।” দ্বাদশ পরিচ্ছেদ অঙ্কুর দিন কয় মধ্যে, ক্রমে ক্রমে নগেন্দ্রের সকল চরিত্র পরিবর্তিত হইতে লাগিল। নিৰ্ম্মল আকাশে মেঘ দেখা দিল—নিদাঘকালের প্রদোষাকাশের মত, অকস্মাৎ সে চরিত্র মেঘাবৃত হইতে লাগিল। দেখিয়া সূৰ্য্যমুখী গোপনে আপনার অঞ্চলে চক্ষু মুছিলেন। সূৰ্য্যমুখী ভাবিলেন, “আমি কমলের কথা শুনিব। স্বামীর চিত্তপ্রতি কেন অবিশ্বাসিনী হইব ? তাহার চিত্ত অচলপৰ্ব্বত—আমিই ভ্রান্ত বোধ হয়। র্তাহার কোন ব্যামোহ হইয়া থাকিবে ।” সূৰ্য্যমুখী বালির বাধ বাধিল । * . বাড়ীতে একটি ছোট রকম ডাক্তার ছিল । সূৰ্য্যমুখী গৃহিণী। অন্তরালে থাকিয়া সকলের সঙ্গেই কথা কহিতেন। বারেণ্ডার পাশে এক চিক থাকিত ; চিকের পশ্চাতে সূৰ্য্যমুখী থাকিতেন। বারেণ্ডায় সম্বোধিত ব্যক্তি থাকিত ; মধ্যে এক দাসী থাকিত ; তাহার মুখে সূৰ্য্যমুখী কথা কহিতেন। এইরূপে সূৰ্য্যমুখী ডাক্তারের সঙ্গে কথা হিতেন। ° সূৰ্য্যমুখী তাহাকে ডাকাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবুর অসুখ হইয়াছে,ঔষধ দাও না কেন ?” ডাক্তার। কি অসুখ, তাহা ত আমি জানি না। আমি ত অসুখের কোন কথা শুনি নাই । স্থ। বাবু কিছু বলেন নাই ? ডা। না—কি অসুখ ? স্থ। কি অসুখ, তাহা তুমি ডাক্তার, তুমি জান না—আমি জানি ? ডাক্তার সুতরাং অপ্রতিভ হইল। “আমি গিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি,” এই বলিয়া ডাক্তার প্রস্থানের উদ্যোগ করিতেছিল, সূৰ্য্যমুখী তাহাকে ফিরাইলেন, বলিলেন, “বাৰুকে - কিছু জিজ্ঞাসা করিও না—ঔষধ দাও।” -
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।