পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२ বিষবৃক্ষ তৎপরিবর্তে সতীশের মুখচুম্বন করিলেন,—দেখাদেখি ঐশও তাঁহাই করিলেন। সতীশ আপনার বাহারি দেখাইয়া আর এক লহর তুলিয়া হাসিল। এই সকল বৃহৎ ব্যাপার সমাধা হইলে কমল আবার কহিলেন, “এখন কি হুকুম হয় ?” স্ত্রী। তুমি যাও, মানা করি না, কিন্তু তিসির মরমুমটায় আমি কি প্রকারে যাই ? শুনিয়া কমলমণি মুখ ফিরাইয়৷ মানে বসিলেন। আর কথা কহেন না। শ্ৰীশচন্দ্রের কলমে একটু কালি ছিল। শ্ৰীশ সেই কলম লইয়া পশ্চাৎ হইতে গিয়৷ কমলের কপালে একটি টিপ কাটিয়া দিলেন। তখন কমল হাসিয়া বলিলেন, “প্রাণাধিক, আমি তোমায় কত ভাল বাসি।” এই বলিয়, কমল শ্ৰীশচন্দ্রের স্কন্ধ বাহু দ্বারা বেষ্টন করিয়া, তাহার মুখচুম্বন করিলেন, সুতরাং টিপের কালি, সমুদায়টাই ঐশের গালে লাগিয়া রহিল। এইরূপে এবারকার যুদ্ধে জয় হইলে পর, কমল বলিলেন, “যদি তুমি একান্তই যাইবে না, তবে আমার যাইবার বন্দোবস্ত করিয়া দাও।” ” শ্ৰী। ফিরিবে কবে ? ক। জিজ্ঞাসা করিতেছ কেন? তুমি যদি গেলেন, তবে আমি কয় দিন থাকিতে পারিব ? * ঐশচন্দ্র কমলমণিকে গোবিন্দপুরে পঠাইয়া দিলেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত সংবাদ রাখি যে, সেবার শ্ৰীশচন্দ্রের সাহেবের তিসির কাজে বড় লাভ করিতে পারেন নাই। হোঁসের কৰ্ম্মচারীরা আমাদিগের নিকট গোপনে বলিয়াছে যে, সে ঐশ বাবুরই দাষ। তিনি ঐ সময়টা কাজকৰ্ম্মে বড় মন দেন নাই। কেবল ঘরে বসিয়া কড়ি গুণিঞ্জে ! এ কথা শ্ৰীশচন্দ্র একদিন শুনিয়া বলিলেন, “হবেই ত! আমি তখন লক্ষ্মীছাড়া হইয়াছিলাম।” শ্রোতারা শুনিয়া মুখ ফিরাইয়া বলিল, “ছি! বড় স্ত্রৈণ।" কথাটা ঐশের কাণে গেল। তিনি শুনিয়া হৃষ্টমনে ভৃত্যদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, "ওরে, ভাল করিয়া আহারের উদ্যোগ কর। বাবুরা আজ এখানে আহার করিবেন।” © *